চর্বিত নির্য্যাস : মীর লিয়াকত
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ৫:৪৪ অপরাহ্ণএকবার এক মুসাফির রাত কাটাবার মতো কোন জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অত্যন্ত ভদ্র মার্জিত এবং চরিত্রবান মুসাফির হলেও অপিরিচিত দেখে কেউ থাকার মত জায়গা দিতে রাজি হচ্ছে না। এদিক রাতও গভীর হচ্ছে। দুর্ভাবনায় পীড়িত মুসাফির ভদ্রলোক এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ফিরছেন আর বলছেন,
‘ভাই আমি একজন মুসাফির। আজকের রাতের মতো একটু থাকার জায়গা দিন।’
তো যে বাড়িতে যান সেই বাড়ি থেকেই উত্তর আসে,
‘স্যরি আমার বাড়িতে মেয়েছেলে আছে, থাকার কোন জায়গা নেই।’
সব বাড়িতেই মেয়েছেলে আছে উত্তর শুনতে শুনতে মুসাফির ভদ্রলোক সরল মনে ভাবলেন কথা সংক্ষিপ্ত করাই উচিত। নয়তো এভাবে বাড়ি থেকে বাড়ি চলতে চলতেই পুরো রাত কেটে যাবে। এখন কি করা!
মন স্থির করে মুসাফির আরেক বাড়িতে উঠে তার কথা সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে চটজলদি বললেন,
‘ভাই আপনার বাড়িতে কি মেয়েছেলে আছে?’
বাড়ির মালিক সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে বললেন,
‘কেন? মেয়েছেলে দিয়ে কি করবে?
মুসাফির বললেন,
‘আমি একটু থাকতে চাই। আসলে আমি…’
‘কি বললি? শালার পুত, দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।’
এই বলে লোকটিকে বেঁধে ইচ্ছেমতো পেটালো, তারপর ঘাড় ধরে রাস্তায় বের করে দিলো। এরই মধ্যে রাত ভোর হয়ে এলো। মুসাফিরের আর থাকা তো হলোই না। পিটুনী খেয়ে রাস্তায় বের হয়ে ভারাক্রান্ত মনে পথ চলতে শুরু করলেন।
আসলে আমাদের সমাজে ভালো মানুষদের অবস্থা এমনিই হয়। এটা কখনো কাম্য নয়। সহজ সরল ভালো মানুষেরাই আক্রান্ত হন কখনো সরলতা কখনো নিজেদের বোকামীর জন্যে। কারন এইসব ভালোমানুষেরা মনে করেন সব মানুষেরাই বুঝি তার মতোই সরল। সমাজে তো ভালো মানুষ খারাপ মানুষ সবাই-ই বাস করে।
বিশ^জুড়ে এখন চলছে স্মরণাতীতকালের একটি মহা ক্রান্তি লগ্ন। মানুষ হাতে প্রান নিয়ে চলছে। সকল দেশ এখন নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের ঘরে থাকার আহŸাণ জানিয়েছে। সব দেশেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সবাই ঘরে থাকছেন। বাংলাদেশেও রাস্তায় আর্মী পুলিশ নামানো হয়েছে। উদ্দেশ্য মানুষ যাতে ঘরের বাইরে না আসে। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও এই মহারোগ থেকে রক্ষার জন্য মানুষকে ঘরমুখি করা জরুরী। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অসচেতন এটা সবাই জানে। এই অসচেতনতা অনেক আগের। নানা অশিক্ষা কুশিক্ষার ফলে ঔপনিবেশিক অবস্থান থেকেই এই অসচেতনতা চলে আসছে। এই রোগটা কি, এর গতি প্রকৃতি কি তা বুঝতে ও জানতে যে সময়ের দরকার সে সময়টা আমাদের দেশের মানুষ এখনো বুঝতে পারেনি। এছাড়া অশিক্ষা কুশিক্ষাও তো আছে। এছাড়া যে বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো দারিদ্রের কষাঘাত। অসুখ বিসুখ থেকে যেটা বেশি প্রয়োজন। ক্ষুধার অন্ন যোগানোর চেয়ে অন্য কাজ অনেকের কাছেই মূখ্য নয়। হঠাৎ আইন জারী করেই মানুষকে রাস্তায় বেধড়ক পেটানো তো আজকের দিনে অচল। ঘরে থাকার আহŸান জানানোর কাজ দুচারদিন ধমক ধামক দিয়ে করানো যেতো। তারপরও যদি কাজ না হয় তাহলে মৃদু লাঠি চার্জ করা যায়।
কিন্তু সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একজন ভ‚মি কমিশনার যে কাজটি করলেন তা মানুষ কোনদিন ভুলে যাবে বলে মনে হয় না। কম বয়েসী সেই ভ’মি কমিশনার ঘর থেকে বাইরে আসা তার বাবার চেয়েও বেশি বয়েসী মানুষদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কান ধরানো যে কতো বড় অপরাধ সেটা বোঝার বয়সই হয়তো তার হয়নি, লঘু পাপে গুরু দন্ড। বয়স্ক ঐ লোকেরা ঘরের বাইরে আসার মূল উদ্দেশ্য খাবারের যোগাড় করা। তাদের বুঝিয়ে বললেও হতো অথবা ধমক ধামকও দেয়া যেতো। এই অতি উৎসাহী ভ‚মি কমিশনারের আসল উদ্দেশ্য এখন উঠে আসবে বলে মনে হয় যদি বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হয়। আসলে এইসব আমলারাই সরকারকে অজনপ্রিয় করতে প্রধান ভ’মিকা পালন করে থাকে। এদের এই কাজ আসলে এদের নিজের নয়। সাধারন মানুষ কিন্তু এই মহিলাকে মনে রাখবে না। মানুষ অভিসম্পাত দেবে সরকারকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, আওয়ামীলীগকে। কিন্তু এখানে মুল ঘটনাটির জন্য এককভাবে এই ভূমি কমিশনারই দায়ী।
বিষয়টি সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় অনেকে মন্তব্য করেছেন আসলে এইসব বিসিএস অফিসারারা নিজেদের গাঁটের টাকা দিয়ে অবৈধ পন্থায় পরীক্ষায় পাশ করে দায়িত্বে এসেছে আর এই খরচ ওঠানোর জন্য এরা উঠে পড়ে লাগে। এ সময় লাইম লাইটে উঠে না এলে তাদের সেই টার্গেট পূরন হবে না চিন্তা করে তার প্রমোশনের পথ খুঁজে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠে। এরা তাদের সেই খায়েশ পুরণ করতে ওস্তাদ, কারন যতো অপরাধই এরা করুক তাদের চাকরীর কোন সমস্যা হয় না। তারা থাকে বহাল তবিয়তে। হয়তো আই ওয়াশ করার জন্য তারা কোথাও বদলী হয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্যত্র চলে গেলেও তাদের গতিপ্রকৃতি আর পরিবর্তন হয় না।
বিসিএস ক্যাডারের ওই মহিলা তার বাবার বয়সী যাদের প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরালো তারা তো নির্দোষ ভালো মানুষ। বাড়িতে খাবার নেই তাই তাদের ঘরের বাইরে আসতে হয়েছে। ভালোমানুষ বলেই তারা এইভাবে অপমানিত হলো। তাদের ধারনা এটা কোন দোষের কিছু না। কাজ করতে হবে, খাবার যোগাড় করতে হবে এটা আর তেমন কি দোষের? যারা আসলে দোষী বা খারাপ মানুষ তারা এভাবে কখনো ধরা পড়ে না। খাবার দরকার নেই, কাজও কিছু নয় তবু নির্দেশ জেনেও ঘর থেকে বাইরে এসে অহেতুক ঘুরাঘুরি করে ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে তারা সবাইকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে তবু এই খারাপ মানুষ রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এই লেখার শুরুতে যে গল্পটি বলার চেষ্টা করেছি সেই মুসাফিরও তো ছিলেন ভালোমানুষ। ভালোমানুষদেরই যদি অপমানিত হতে হয় তাহলে ? মুসাফির ভদ্রলোক সহজ সরল বলেই পিটুনী খেয়েছে। তিনি যদি ভালোমানুষ না হতেন, সহজ সরল না হতেন অর্থ্যাৎ চতুর হতেন তাহলে তিনি নিশ্চই বোকামী করতেন না।। আর বোকামী করে বেধড়ক পিটুনিও খেতেন না। ঠিক তেমনি দরিদ্রক্লিষ্ট এই মানুষেরাও আসলে ভালোমানুষ, এ কারনেই তাদের সবার সামনে অপদস্ত হতে হলো। এরা চতুর হলে যে কোনভাবে হলেও তারা চোখে ধুলো দিয়ে মিথ্যে গল্প সাজিয়ে চম্পট দিতো।
করোনার কারনে সরকার মানুষকে ঘরে থাকার আহŸান জানিয়েছে। বিশ^ পরিস্থিতিতে এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে ঘরে থাকার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু গরীব মানুষদের খাবার সংকুলানও তো করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে লক্ষ রেখেছেন। খাবার পৌছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। বলেছেন যারা জন প্রতিনিধি তারা যেভাবে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন একই ভাবে এই চরম দুর্যোগের কঠিন সময়ে তাদের বাড়ি বাড়ি খাবারের ব্যবস্থা তারাই করে দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ খুবই জনমুখি। কিন্তু সে জন্য তো সময়ের দরকার। এর আগেই এভাবে মানুষদের উপর চড়াও হওয়া অমানবিক, এরাই তো সরকারের ভালো কাজগুলো আড়াল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে। খারাপ মানুষদের উপর কিন্তু এরা চড়াও হয় না হতে পারেও না। স্কুল কলেজ ছুটির পর যারা ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিনোদনে যায় তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন কিন্তু খুবই সীমিত। স্কুল কলেজ ছুটি দেয়া হয়েছে কেন! ছুটি হয়েছে যাতে ছেলে মেয়েরা বাড়িতে থাকতে পারে, পরস্পর পরস্পর থেকে দূরে থাকতে পারে। এতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ছুটির পর ছেলেমেয়েদের নিয়ে যদি অবিভাবকরা ছুটির আমেজে বিনোদনে যায় তাহলে এই ছুটির দরকারটা কি! এই অসচেতনতার কি কোন জবাব আছে? এসকল অবিভাবকরা সবাই তো অশিক্ষিত নয়। তাহলে তারা অর্বাচীনের মতো কেন এই কাজ করবে? তারা কি বিশ^ পরিস্থিতির খবর জানেন না? এই যে সারা বিশ^ জুড়ে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে এটা কি তারা জানেন না?
আসলে এই মহামারী অন্যান্য মহামারীর মতো নয়। রয়েছে ভিন্নতা। সংক্রমিত মানুষের পাশে কেউ যাচ্ছে না। সংক্রমনের ভয়ে মৃত লাশ দেখতে কিংবা লাশের সৎকার করতেও কেউ যাচ্ছে না। গেলে যদি নিজেকে সংক্রমিত হতে হয়? মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের শেষ যাত্রায় মানুষের পাশে মানুষ যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু করোনা মহামারী এমনি যে শেষ যাত্রার সময়ও গিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এই চরম পরিস্থিতিতে সরকারী বিধি কিংবা বিশ^ স¦াস্থ্য সংস্থার নির্দেশাদি মেনে না চললে ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের অসচেতনতার দেশের কপালে কিন্তু ভয়াবহ খারাবী আছে, কথাটা ভালো ভাবে মনে রাখতে হবে।
চীনের কথা না হয় বাদই দিলাম কারন তারা নিজেদের সামলে নিয়েছে। ইতালী, স্পেন, আমেরিকা, বৃটেন, জার্মানী ইত্যাদি অগ্রসর দেশগুলি এখন ত্রাহি ত্রাহি করছে। কোনভাবেই মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না। এতো উন্নত বিজ্ঞান প্রযুক্তি সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। মানবজাতির শেষ আশ্রয় বুঝি ঈশ^র! উপায়ান্তর না দেখে মানুষ আসল ঠিকানা ঈশ^রের নাম তর্পন করছেন। পরস্পরের ভয়ংকর শত্রæ মুসলিম ইহুদী খৃষ্টান জেরুজালেমে একসাথে মোনাজাত করেছে। ঠেলার নাম বাবাজী! কল্পনা করা যায়? প্রান ওষ্ঠাগত হবার উপায় হলে এ ছাড়া যে কোন উপায় নেই। শোনা যায় অনেকে নাকি স্বপ্নে অনেক কিছু পা”্ছনে। সেটা আবার ইউ টিউবে দিয়ে ভাইরাল করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। কে একজন মুরগির বিষ্ঠা পানিতে ভিজিয়ে খাবার পরামর্শ দিয়েছেন্, আরেকজন স্বপ্নে কি দিয়ে যেন নিজেই অষুধ আবিস্কার করে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেবার জন্য লোক খুঁজছেন। শোনা গেছে ভারতে গোমূত্র নাকি দুস্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। গোমূত্র নাকি এই রোগে খুব ফলদায়ক! এরকম আরো অনেক কিছু উঠে আসছে প্রতিদিন ফেসবুক ইউটিউবে।
কিন্তু আসল প্রতিষেধক আবিস্কারের এখনো কিছুই হয়নি। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে আসলে এসবই চীনের জীবানু যুদ্ধের একটি পরিকল্পনা। বিশে^র পচাশিটা দেশ নাকি আন্তর্জাতিক আদালতে চীনের বিরুদ্ধে মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার কারন হিসেব বলা হচ্ছে প্রথম চীনে এই ভাইরাস দেখা দেবার পর তা বিশে^ ছড়িয়ে পড়লেও চীন অতি দ্রæত তা সামলে নিয়েছে। রাতারাতি তারা অনেক হাসপাতালও নির্মান করেছে। এখন তাদের দেশে আর কোন মৃত্যু নেই। তার মানে এটা কি ঠিক যে সকল পরাশক্তিকে জীবানু যুদ্ধের মাধ্যমে ধরাশায়ী করার কুট পরিকল্পনায় মেতেছে চীন! তবে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তার কিছুই এখনও সেভাবে উঠে আসেনি। হয়তো সময়ই বলে দেবে কোনটা সঠিক কোনটা অঠিক।
এখন সবচেয়ে বড় বিষয় এই মহাসংকট থেকে বেরিয়ে আসা। প্রাথমিক ভাবে সকলকে ঘরে থাকতে হবে, সংক্রমন রোধ কারার জন্য। এছাড়া হাত ধোয়া, গরম পানি খাওয়া, দুরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি। তারপর প্রতিষেধক আবিস্কার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া এখন আর কোন পথ খোলা নেই। এটাতো সবাই ভলো বোঝেন যে অন্যান্য দেশের তুলনায় সব দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে আমাদের জটিলতা অন্যন্যদের চেয়ে বহু বহু গুন বেশি। তাই সব কথার শেষ কথা আমাদের এখন ঘরে থাকতে হবে যে কোন কিছুর বিনিময়ে, এড়িয়ে চলতে হবে সবার সাহচর্য। পরের কথা পরে।
আমরা জানি বাঙালির ঐতিহ্য বৃটিশ ভারতেও ছিলো সমুন্নত। বিভিন্নভাবে ছিলো বাঙালিদের প্রাধান্য। কলকাতা ব্রিটিশ ভারতেরও রাজধানী ছিলো। ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশ থেকে তৎকালীন বঙ্গপ্রদেশ বিশেষ করে বাংলা ছিলো আচার আচরন, শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সর্বদা অন্যান্য সকল অঞ্চল থেকে অগ্রগামী। এই উপমহাদেশে আধুনিকতা বলতে আমরা যা বুঝি তার বহুমুখি স্ফুরণ ঘটেছিলো এই বাংলাদেশেই। শিক্ষায়, ভাষায়, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাসে, ব্যাবসা বানিজ্যে, আধুনিক শিল্প কারখানায়, সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তনে, চিন্তা চেতনায়, ভূমি সংস্কারে, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, সর্বোপরি শাসনপ্রনালী ও প্রশাসনিক কাঠামোতে ঘটেছিলো বাঙালির বহুমুখি স্ফুরণ। সেই বৃটিশ ভারতে দক্ষিন ভারতের অধিবাসী জাতীয় কংগ্রেসের জাতীয় নেতা গোপাল কৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেনÑ
দডযধঃ ইবহমধষ ঃযরহশং ঃড়ফধু, ওহফরধ ঃযরহশং ঃড়সড়ৎৎড়.ি’
যাক সে কথা, চরিত্রে সহজ সরল হলেও বাঙালি আসলে এক ঐতিহ্যবাহি এবং এক যোদ্ধা জাতি। বর্তমান মহাক্রান্তিলগ্নেও তারা সংকট উত্তরণে এগিয়ে যেতে পারবে এই আত্মবিশ^াস তাদের আছে। করোনা ভাইরাসের এই দুঃসময়ে দেরী হলেও তারা প্রাণপন চেষ্টার ত্রæটি করবে না। এখন মানুষকে ঘরবন্দী রাখতে পুলিশ আর্মী তাদের কাজ করুক, তাদের সহায়তা দেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যে যতোই বলুক বাঙালি যতোই আবেগপ্রবন আর সরল সহজ হোক একবার হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারলে এবং কি করতে হবে বুঝে নিতে পারলে বাঙালি যে কোন অসাধ্য সাধন করতে পারে। একাত্তরের সাত মার্চ বঙ্গবন্ধুর এক ভাষনে বুঝে নিতে পেরেছিলো বলে দেশটাই শেষে শত প্রতিকুলতার মধ্যেও স্বাধীন হয়েছিলো। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর এলো আজকের মহাসংকট। একটু সময় লাগলেও এবং পুরোপুরি বুঝে নিতে পারলে বাঙালিও ¯্রষ্টার নাম নিয়ে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পারবে এই মারণব্যাধিকে। নির্য্যাসে এই কামনা অত্যন্ত আন্তরিক।
লেখক: মীর লিয়াকত, সব্যসাচী লেখক ও প্রকাশক