মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়ার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রয়োজন : মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ৬:০২ অপরাহ্ণমুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তেলিয়াপাড়া একটি জ্যোতির্ময় অধ্যায়। যদিও ঐতিহাসিকগণ এর যথার্থ মাহাত্ম তোলে ধরতে ব্যর্থ তবু তেলিয়াপাড়ার ঔজ্জ্বল্য কখনও ¤øান হবার নয়। ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী বাংলাদেশে পৈশাচিক গণহত্যা চালালে দেশের আপামর জনতা কেবল আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রভাবেই রুখে দাঁড়ায়। এ সময়ে অবিশ্বাস্য ভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সেনারা যার যার অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্রোহ প্রকাশ করে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। এই বিদ্রোহী বাহিনীর একটি অংশ ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ২৯ মার্চ সর্বপ্রথম তেলিয়াপাড়া চা বাগানে এসে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করে। এর মাধ্যমে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শরীক হয়। এরপর ১ এপ্রিল বিদ্রোহী ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট একই স্থানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করলে তেলিয়াপাড়া হয় ২য় ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যৌথ সদর দপ্তর।
ঐ দিনই মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারতীয় প্রতিনিধি বিএসএফ’র পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ভি সি পান্ডে তেলিয়াপাড়াস্থ হেডকোয়ার্টারে এসে লেঃ কর্নেল এস এম রেজা, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কে এম সফিউলাহ ও মেজর শাফায়াত জামিলের সাথে দেখা করে কর্নেল ওসমানীর সীমান্ত অতিক্রম ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দানকারী মেজর জিয়াউর রহমানের রামগড়ে অবস্থান নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাবার সংবাদ দেন। এ সময়ে বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় এবং ভারতীয় বিএসএফ’র পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সাহায্য সংক্রান্ত বিষয়ে ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলোয় একটি জরুরী সভার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়। ব্রিগেডিয়ার পান্ডে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উলেখ্য, মেজর খালেদ মোশাররফ বনাঞ্চলের ঝুপঝাড়ের মথ্য দিয়ে তেলিয়াপাড় বিওপির কাছে গিয়ে ভারতীয় বিএসএফ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডের সাথে প্রথম দেখা করার সময়ে সেখানকার যাতায়ত ব্যবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে রাস্তা নির্মাণের আবশ্যকতা বোধ করেন। তাঁর এই ইচ্ছা পূরণের জন্য ঐদিন সন্ধ্যা থেকে রাত দু’টার মধ্যে সাতছড়ি হতে আগরতলার সিমনা পর্যন্ত পাহাড়ের মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরী করা হয়। এতে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে তেলিয়াপাড়া ও বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ করেন।
৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ঐতিহাসিক সেনা সভায় যোগদানের জন্য ৩ এপ্রিল মেজর জিয়াউর রহমান, ৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় ভারতীয় বিএসএফ’র পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডে ও আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজার বাংলোয় উপস্থিত হন। এর আগে লেঃ কর্নেল আব্দুর রব, লেঃ কর্নেল এস এম রেজা, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিব উদ্দিন সেখানে আসেন। ঐ সভায় বাংলাদেশ ভূখÐের এ স্থানটিকেই সেনা সদর গণ্য করে এখান থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করা হয়। যেহেতু তখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সরকার গঠিত হয়নি সেহেতু সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত যুদ্ধের ঈড়সসধহফবৎ-রহ-ঈযরবভ বা সর্বাধিনায়ক মনোনীত করা হয় সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে। জাতীয় পরিষদের অপর সদস্য লে. কর্নেল এম এ রবকে করা হয় উবঢ়ঁঃু ঈড়সসধহফবৎ-রহ-ঈযরবভ বা উপ সর্বাধিনায়ক। পরবর্তীতে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর উক্ত সরকারের অধীনে কর্নেল ওসমানীকে মন্ত্রীর মর্যাদায় মুক্তিবাহিনীর ঈড়সসধহফবৎ-রহ-ঈযরবভ বা সর্বাধিনায়ক এবং লে. কর্নেল এম এ রবকে ঈযরবভ ড়ভ ঝঃধভভ নিয়োগ করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ২৯ এপ্রিল’৭১ তারিখে সে নিয়োগ অনুমোদন করেন।
কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সর্বাধিনায়কত্ব বিষয়ে মেজর জেনারেল কে এম সফিউলাহ বলেন, ‘ঐদিন আমরা কর্নেল ওসমানীকে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে অনুরোধ করি। তিনি সে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।’
মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত ঐতিহাসিক এ সভায় উপস্থিত ছিলেন: কর্নেল এম এ জি ওসমানী এমএনএ, লেঃ কর্নেল এম এ রব এমএনএ, লেঃ কর্নেল সালাউদ্দীন মোহাম্মদ রেজা, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কে এম সফিউলাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিব উদ্দিন। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিএসএফ’র পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডে ও আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল উপস্থিত ছিলেন।
সভার কার্যক্রম শুরু হলে এর লক্ষ্য ও বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার মেজর খালেদ মোশাররফ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, সেনাবাহিনীর সকল বিদ্রোহী ইউনিটগুলো একক কমান্ডের অধীনে যুদ্ধ পরিচালনা করবে। এ সভায় উপস্থিত ভারতীয় প্রতিনিধিগণ সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সীমিত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, রেশন সরবরাহসহ ভারতীয় ভূখÐে সামরিক প্রশিক্ষণ ও শরনার্থী শিবির স্থাপনের ব্যাপারে আশ্বাস দেন। কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে একক কমান্ডের অধীন দেশকে ৪টি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত ১নং সেক্টরে মেজর জিয়াউর রহমানকে; বৃহত্তর কুমিলা, ঢাকা ও নোয়াখালী জেলার পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত ২নং সেক্টরে মেজর খালেদ মোশাররফকে; বৃহত্তর সিলেট এবং ময়মনসিংহ জেলার পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত ৩নং সেক্টরে মেজর কে এম সফিউলাহকে এবং বৃহত্তর কুষ্টিয়া যশোর ও ফরিদপুর জেলা নিয়ে গঠিত ৪নং সেক্টরে মেজর আবু ওসমান চৌধুরীকে অধিনায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হয়; দ্রæততম সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বাধিনায়ক কর্নেল ওসমানীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সভা শেষে কর্নেল ওসমানী বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর রিভলবার থেকে শূণ্যে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন।
এ সভা বিদ্রোহী বাহিনীকে সাংগঠনিক ধারণা দেয় এবং তা ‘মুক্তি বাহিনী’ পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এ সভায় সাধারণ ছাত্র-জনতাকে স্বল্প দিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীতে সংযুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত হয় তার ভিত্তিতে ১ এপ্রিল হতে ২য় ও ৪র্থ বেঙ্গলের অধীনে গৃহীত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গতি সঞ্চার হয়। ঐ দিন থেকেই তেলিয়াপাড়া বাংলোর নিকটস্থ বাঁশবাড়ি ক্যাম্পে সর্বপ্রথম ২০০০ সদস্য নিয়ে দু’সপ্তাহের গেরিলা প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়।
৪ এপ্রিলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১০ এপ্রিল একই স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে আর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও উক্ত সভা সরকার গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল কিন্তু পরিস্থিতিগত কারণে তা হয়নি। তবে কর্নেল ওসমানী শীঘ্রই সরকার গঠিত হবে বলে সভাকে অবহিত করেন। সংশ্লিষ্ট সভায় পূর্বোক্ত সভায় গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সভায় বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন এবং বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, ও বগুড়া জেলা নিয়ে গঠিত অঞ্চলে মেজর নাজমুল হককে অধিনায়ক করে আরো দু’টি সেক্টর গঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সভার বিষয়ে কর্নেল শাফায়াত জামিল বলেন, ‘দ্বিতীয় ও চতুর্থ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র অফিসাররা ছাড়াও এতে কর্নেল (অব.) ওসমানী, রামগড় থেকে আসা মেজর জিয়া, ভারতীয় বিএসএফ-এর প্রধান মি. রুস্তমজি, ব্রিগেডিয়ার পান্ডেসহ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসডিও কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। কনফারেন্সে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করার ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কনফারেন্সেই আমরা সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলি মুক্তিযুদ্ধকে বৈধতাদানের জন্য এখনই একটি অস্থায়ী সরকার গঠন অত্যাবশ্যক। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য এটি অপরিহার্য ছিল।’
এটি ছিল মুক্তিবাহিনীর সর্বোচ্চ ফোরামের ২য় সভা। ৩য় ও সর্বশেষ সভাটি ১০ জুলাই কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডস্থ মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। মূলত এ তিনটি সভার মাধ্যমেই সমগ্র মুক্তিযুদ্ধ কালের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ঘটে। বলাবাহল্য এই তিনটি সভার প্রথম দু’টিই অনুষ্ঠিত হয় তেলিয়াপাড়া চা বাগানস্থ ম্যানেজার বাংলোয়।
মুক্তিযুদ্ধের অঞ্চল বিভাগের পর সংশ্লিষ্ট এলাকাটি ৩ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউলাহ এখান থেকে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এই তেলিয়াপাড়া দখলে নেবার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী বহু আক্রমণ রচনা করে। মেজর জেনারেল কে এম সফিউলাহর মতে, ‘পাক বাহিনী তেলিয়াপাড়া তাদের আয়ত্বে আনার জন্য ক্রমাগত ২১ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যায়। — যেসব অফিসারের উপর তেলিয়াপাড়া রক্ষা করার ভার দেই তারা ছিল : ক্যাপ্টেন মতিন, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভুঁইয়া, লেঃ মোরশেদ। এ ছাড়াও আরো কিছু সংখ্যক কলেজের ছাত্রও ছিলেন। তাঁরা হলেন শহীদ সেলিম আহসান, আনিসুল হাসান, ফজলে হোসেন, আনিসুর রহমান (পরবর্তীকালে এঁরা সবাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন পান এবং অফিসার হন)। — যে ২১ দিন যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধে এই সমস্ত অফিসার এবং সৈনিকরা মনোবল ও সাহসিকতার যে পরিচয় দিয়েছেন তা বিশেষভাবে উলেখযোগ্য। এই ২১ দিন লড়াইয়ের মধ্যে পাকবাহিনী তেলিয়াপাড়ার উপর প্রায় দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য দিয়ে পাঁচবার আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে তাঁরা তিনবার আমাদের কাছ থেকে তেলিয়াপাড়া দখল করে। আমরা দুবার তাদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হই। কিন্তু তৃতীয় বারে তাদের সৈন্যসংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্র এত বেশি ছিল যে তেলিয়াপাড়া ঐবার আর দখল করা যায়নি। ১৯শে মে শেষ পর্যন্ত তেলিয়াপাড়ার পতন হয়।’
ঐ সকল যুদ্ধে মোট ৮৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং আপরদিকে প্রায় ১১০ জন পাকসেনা নিহত হয়।
৪ এপ্রিলের সভার বিষয়ে এ কে খন্দকারের অভিমত, ‘৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর আলোকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং একটি সাংগঠনিক রূপ পেয়েছিল। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ বাহিনী গঠন, নেতৃত্ব নির্ধারণ, সমন্বয় সাধন ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর জন্য যা অত্যন্ত জরুরী ছিল।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনায় তেলিয়াপাড়ায় অনুষ্ঠিত ক্রান্তিকালের এ সভাটি যেমন ছিল উর্ধ্বতন বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের প্রথম সমন্বয় সভা, তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক ভিত রচনায়ও এটি একটি মাইলফলক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখান থেকেই বিদ্রোহী বাহিনীর নামকরণ হয় মুক্তিবাহিনী Ñ যাদের শ্রম আর ত্যাগের বিনিময়ে মাত্র ন’মাসে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।