রমজানে দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস : মনিটরের কেউ নেই
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ৪:২০ অপরাহ্ণএবার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে মাহে রমজান। সারা পৃথিবী কোভিড -১৯ বা করোনা ভাইরাসের আঘাতে লন্ডভন্ড। গত বছরের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। অল্প দিনের মধ্যেই এটা সারা পৃথিবীতে ছড়াইয়া পরে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়। ১ লক্ষ ৮০ হাজার লোক মারা যায়। পৃথিবীর প্রভাবশালী দেশগুলো এর প্রতিরোধের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়। কার্যতঃ সারা বিশ্বের শিক্ষা স্বাস্থ্য ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পরে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকায় কোটি কোটি লোক বেকার হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ও এর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। দেশের বেশী র ভাগ মানুষ উপার্জনের সুযোগ বঞ্চিত হয়ে যখন দিশেহারা, তখন রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য বেড়ে আকাশচুম্বী। যা সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে।
মুসলিম জাহানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের মাস রমজান। এই মাসে রোজা রাখা ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে সর্বোচ্চ সংযম পালন করে থাকে। প্রতি বৎসর রমজান মাসে নিত্যপণ্যর মূল্য অনেক বেড়ে যায়। পৃথিবীর আর কোন দেশে এরকম দেখা যায় না। একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেটের কারসাজিতে জিনিস পত্রের দাম বাড়ানো হয়। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার বা মনিটর করার যেন কেউ। অসহায় ক্রেতাসাধারণ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পবিত্র রজমান মাসকে কেন্দ্র করে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে, একমাত্র বাড়েনি ডিমের দাম। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে বলছেন— রোজার আগ মুহূর্তে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, এটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডিম ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে বেড়েছে অন্তত ১৫ রকমের নিত্যপণ্যের দাম। আর এই সপ্তাহে বেড়েছে ১৩ রকমের পণ্যের দাম। এছাড়া, স্থির থাকা সবজির দামও বেশ খানিকটা বেড়েছে।
দেশের বাজারগুলোর তথ্য বলছে, নতুন করে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও দেশি মুরগির দাম। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের পর সবজির দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ আরও বেড়েছে । জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সব সময়ই বিপাকে পড়েন সীমিত আয়ের মানুষেরা। আর রোজাকে সামনে রেখে দাম বাড়লে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষদের কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
রাজধানীর বাজারগুলোর তথ্য বলছে, মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহে যা ছিল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা। কয়েক মাস আগেও এই ডালের দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি। আর বড় দানার মসুরের ডাল গত সপ্তাহের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার এ ডাল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৯০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহে যা ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। ছোট দানার মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩০-১৪০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় ছোলার কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে যে ছোলার দাম ছিল ৮০ টাকা, শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। একইভাবে চিনির দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিকেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ৬০ টাকা। আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার চীনের আদা প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এছাড়া দেশি আদা ২৩০ টাকা থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি হালি লেবুর দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। শুক্রবার এক হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। ২০ টাকা করে প্রতিকেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। ২০ থেকে ২৫ টাকা প্রতিকেজি শসার দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৪৮ টাকা। ২০-৩০ টাকার বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। সজনে ডাটার প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা করে। ১৫ টাকা কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ২০ টাকার বেশি। এছাড়া করলার কেজি ৩০-৪০ টাকা। বরবটি ৪০-৫০ টাকা কেজি। পেঁপে ৩০-৪০ টাকা কেজি। পটল ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০-৫০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহে ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১২০-১৩০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। তবে গত সপ্তাহের মতোই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৬০০ টাকায়। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০০-৯০০ টাকা।
এদিকে মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৮ টাকা কেজি, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকা, গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৫০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল ৯৫-১০০ টাকা, ভালো মানের পাম অয়েল ৮৫-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
উপরের এই চিত্রটি ভয়াবহ।মানুষ একদিকে অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত, লকডাউনের কারণে কর্মহীন, উপার্জনের পথ বন্ধ অন্যদিকে যুক্তিহীন ভাবে নিত্যপণ্যর মূল্য বৃদ্ধি করে দেশকে একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত করা হয়েছে। কালবিলম্ব না করে দেশের জনগণকে এই মৃত্যু কোপ থেকে উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে।