আলবার্ট আইনস্টাইনের অজানা অধ্যায়
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ৪:৪০ অপরাহ্ণকাজী ইদরাক আহমদ::
আইনস্টাইন এর মেয়ের বিয়ে ছিল। সবাই চার্চে যাচ্ছিল। পথের মধ্যে আইনস্টাইন ওনার মেয়েকে বললেন তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাবে আমার কলমটা রেখে আসছি। মেয়ে অনেক বারণ করা সত্বেও উনি গেলেন, ৩০ মিনিটের কথা বলে উনি যখন না এলেন তখন সবাই মিলে ওনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ৭ দিন পর ওনার মেয়ে যখন বাড়িতে এসে মাকে জিজ্ঞাস করলো বাবা কোথায় তখন তার মা বলল ওই যে গেল আর আসে নি। তখন তাঁর মেয়ে আইনস্টাইন এর খোঁজে ল্যাবে গেলেন। ল্যাবে গিয়ে দেখলেন যে তার বাবা একটা কলম নিয়ে বোর্ড এর সামনে গিয়ে কি জানি চিন্তা করছিল। মেয়ে বাবা কে বলল বাবা কি করছো? তখন আইনস্টাইন বললেন যে মা তুমি চার্চে যাও আমি এই কাজটা ১০ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে আসছি।
রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের সেবার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। রবীন্দ্রনাথ ঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এইমাত্র আপনি ১জন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বললেন, আপনার প্রতিক্রিয়া কী? রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিলেন, ‘আমি তো একজন বিশ্বখ্যাত কবির সঙ্গে কথা বললাম।’ এরপর সাংবাদিকরা আইন-
স্টাইনের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘আপনি একজন বিশ্ব কবির সঙ্গে আলাপ করলেন, আপনার প্রতিক্রিয়া কী? আইনস্টাইন জবাব দিলেন, ‘আমি কবির সঙ্গে কথা বলিনি, আমি একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলেছি।’
“এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না , যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন”।
শৈশবে তিন বছর বয়স পর্যন্ত আলবার্ট কথা বলতে শেখেননি। নয় দশ বছর বয়সেও তিনি কিছুটা থেমে থেমে কথা বলতেন। এতে পরিবারের লোকেরা যথেষ্ট চিন্তাগ্রস্ত হয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন হয়ত আলবার্ট বড় হয়ে জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হবে। তাছাড়া আলবার্ট ছিলেন খুব শান্তবিষ্ট লাজুক। অন্যান্য সমবয়সীদের থেকে আলাদা। খেলাধুলো, দৌড়ঝাঁপ তিনি বিশেষ পছন্দ করতেন না। ছেলেবেলায় অনেক সময় বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে সৈন্যরা কুচকাওয়াজ করে বাজনা বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে যেত। অন্য ছেলেরা এ দৃশ্য দেখার জন্য রাস্তার ধারে জমায়েত হতো। কোন ছেলেই বাদ যেত না। এর ব্যতিক্রম ছিলেন আলবার্ট। পরবর্তীকালে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, সৈন্যদের কাজ হুকুমে যুদ্ধ করা। আর হুকুম তালিম করতে গিয়ে যুদ্ধে সাহসিকতা প্রমাণ করা। দেশপ্রেমের নামে যুদ্ধ করাকে আমি ঘৃণা করি।শৈশবে সঙ্গীতের প্রতি আইনস্টাইনের প্রবল আগ্রহ দেখে তাঁর মা তাকে একটি বেহালা কিনে দেন , যেটি তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শয্যাপাশে রাখেন । আইনস্টাইন বলেছিলেন , ছয় বছর বয়সে আমি হাতে বেহালা তুলে নিই। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত একটানা বেহালা বাজানোর শিক্ষা চলে । খুব ভাল লেগে গেল মোজার্টকে। দেখলাম শিক্ষক যা শেখাতে এতদিন এত চেষ্টা করেছেন , এখন তা আমি অনায়াসে আয়ত্ব করতে পেরেছি। তখনই উপলব্ধি করলাম কর্তব্য-
পরায়ণতা নয় , ভালোবাসাই হল সবচেয়ে বড় শিক্ষক ।
ছোটবেলায় যখনই কেউ অঙ্কে ভালো করে বা বিজ্ঞানে তার কোন প্রতিভা দেখায়, তখনই তাকে বলা হয় ক্ষুদে আইনস্টাইন। আর একটু বড় হলে, বিশেষ করে হাই স্কুলে বা কলেজে একইভাবে তরুণ আইনস্টাইন বলা হয়। কেবল ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের বেশির ভাগ বাবা-মাই তাদের সন্তানদের আইনস্টাইন বানাতে চান।কেন? জবাবটা সোজা-বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। বিশ্ব, সময় এবং স্থান সম্পর্কে মানুষের হাজার বছরের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। সময়ের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মনে করেন, কোনো একদিন আসবে, যে দিন সময়ের কিংবা দুনিয়ার সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখে ফেলা যাবে চার পৃষ্ঠায়, আর তার তিন পৃষ্ঠা জুড়ে থাকবে কেবল আইনস্টাইনের নাম! কাজেই সব বাবা-মা যদি তাদের সন্তানকে আইনস্টাইন বানাতে চান, তাদের কি দোষ দেওয়া যায়?
আইনস্টাইন সম্পর্কে বলা হয়, তিনি কথা বলতে শুরু করেন দেরিতে, চার বছর বয়সে। আর পড়তে শেখেন সাত বছর বয়সে। চার বছর পর্যন্ত যখন তিনি কথা বলছিলেন না, তখন তাঁর মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। একদিন হঠাৎ খাবার টেবিলে নির্বাক আইনস্টাইন বলে উঠলেন, স্যুপটা খুবই গরম! তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, এত দিন কেন কথা বলোনি? এত দিন তো সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, আইনস্টাইন তাঁর জীবনের দ্বিতীয় বাক্যটি বললেন।
১৯৩১ সালে চার্লি চ্যাপলিনকে আমন্ত্রণ জানালেন আইন-
স্টাইনকে। তখন সিটি লাইটস সিনেমার স্কিনিং চলছিল চ্যাপলিনের। যখন চ্যাপলিন ও আইনস্টাইন শহরের পথ ধরে যাচ্ছিলেন, অনেক মানুষ ভিড় জমায়। আইনস্টাইন চার্লি চ্যাপলিনকে বললেন, “তোমার ব্যাপারটা আমার দারুণ ইন্টারেস্টিং লাগে। তোমার ছবিতে তুমি একটা কথাও বলো না, অথচ দুনিয়ার লোক বুঝে যায় তুমি কী বলছ। তারা চার্লি বলতে অজ্ঞান। “ঠিক,” চ্যাপলিন বললেন। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা আরো বেশি ইন্টারেস্টিং। দুনিয়ার লোক আইনস্টাইন বলতে অজ্ঞান। সায়েন্টিস্ট মানেই আইনস্টাইন। অথচ তারা তুমি যা বলো, তার এক বর্ণ বোঝে না। একেই বলে ভূবন জয় করা দুই মহামানবের সেন্স অফ হিউমার।
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ । হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমায় মানবতার ব্যাপক বিপর্যয় । আলবার্ট আইনস্টাইন ও দারুণ শোকাহত। হাজার হলেও নিজের আবিষ্কারের ভিত্তিতে এই বোমা তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক হৈ চৈ। সবার মুখেই পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীর স্বীকৃতি মিলছে। এই সময় আইনস্টাইন তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে আইনস্টাইনের দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বন্ধুর ছোট নিষ্পাপ শিশুটি চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আইনস্টাইন ছেলেটির মাথায় হাত রেখে বলেন, গত কয়েক বছরে তুমি একমাত্র বাক্তি, যে আমাকে সঠিকভাবে চিনতে পেরেছে এবং আমার সম্পর্কে সঠিক বর্ণনা দিতে পেরেছে।’
আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রধান আলবার্ট আইনস্টাইনকে কত বেতন দিতে হবে জিজ্ঞেস করায় আইনস্টাইন বছরে মাত্র ৩ হাজার ডলার দাবী করে বসলেন। টাকার অংক শুনে ভার্সিটির প্রধান চুপ হয়ে গেলেন। অন্যদিকে আইনস্টাইন ভাবছেন তিনি হয়তো প্রধানের কাছে কিছুটা বেশি বেতন চেয়ে বসলেন। শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার ডলারে আইস্টাইনের বেতন নির্ধারণ হলো।
নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর আইনস্টাইন যখন সুইডেনের গোথেনবার্গে বক্তৃতা দিলেন তখন পত্রিকায় এক বিজ্ঞান
গবেষক বললেন; এখানে দুই একজন বাদে অন্য কেউ আসলে বোঝেতে পারেননি আইনস্টাইনের ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি।’ তবে এটা বুঝতে পারছি তিনি নতুন এক বিষয়ের দরজা খুলছেন মাত্র। আইনস্টাইন প্রথমবার আমেরিকায় যাওয়ার পর তার বন্ধুকে চিঠিতে আক্ষেপ করে লিখেছেন –“থিওরি অফ রিলেটিভিটি” নিয়ে আমি ১৫ বছর কাজ করেছি মানুষ তা ১৫ সেকেন্ডে বুঝতে চায়। সবাই আমাকে দেখতে আসে মনে হয় আমি চিড়িয়াখানার কোন জিরাফ। “থিওরি অফ রিলেটিভিটি” জন্যে আইন-
স্টাইন নোবেল পান নাই। তবে এই কাজের জন্যে তিনি পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়েছেন।
পাবলিকের যন্ত্রণায় তিনি শেষ পর্যন্ত মানুষকে “থিওরি অফ রিলেটিভিটি” বোঝাতে বলেছেন: তুমি যদি কোন মেয়ের সাথে এক ঘণ্টা বসে থাক তাহলে তোমার মনে হয় তুমি তার সাথে এক মিনিট ছিলে, অন্যদিকে চুলার উপর এক মিনিট বসে থাকলে মনে হয় এক ঘণ্টা বসে আছ। আমাদের কাছেও “থিওরি অফ রিলেটিভিটি” নারী আর চুলাতে গিয়েই ঠেকেছে।
ভার্সিটি পড়া অবস্থায় আলবার্ট আইনস্টাইন হতাশায় পড়ে একবার তার পিতাকে চিঠিতে লিখেছিলেন যে, “আমার জন্ম না হওয়াই হয়তো ভাল ছিল।” বিখ্যাত হওয়ার পরেও আইনস্টাইন নিজেকে কখনো খুব জিনিয়াস বলেন নাই। তবে অন্যদের থেকে বেশি কল্পনা করার শক্তি তার আছে তা স্বীকার করতেন। অন্যদিকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের লক্ষকোটি গ্রহের মাঝে কোন এক গ্রহের চিপা গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে ধর্ম প্রচারকরা ঘোষণা করতো- “আমি জন্মাবো বলেই ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।”
আইনস্টাইনের এক সহকর্মী একদিন তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। আইনস্টাইন তখন একটি টেলিফোন বই খুঁজে বের করলেন। সেই বই থেকে তাঁর নিজের নম্বরটা খুঁজতে লাগলেন। সহকর্মী তাকে বললেন, ‘কি আশ্চর্যের ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘না জানা নেই। তার দরকারই বা কি? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে তথ্যটা মুখস্থ করে মস্তিস্ক খরচ করবেন কেন?’
মিঃ আইনস্টাইন? আপনি আমাকে চিনতে পারছেন?
কে আপনি?(বৃদ্ধ আইনস্টাইন জানতে চান)। এক সময় আপনি আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কি আমাদের বিয়ে হয়েছিল? স্বামী সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল আইনস্টাইনের স্ত্রীর? তাঁর স্ত্রীকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কি বুঝতে পারেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘না, কিন্তু আমার স্বামীকে বুঝি। আমি জানি, তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।’
১৯৫২ সালে আইনস্টাইনকে নবগঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলে, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি রাজনীতির চেয়ে সমীকরণ বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাজনীতি লেখা হয় বর্তমানের খসড়া খাতায় আর সমীকরণ লেখা থাকে মহাকালের অজর গ্রন্থে।’ এমনই বিজ্ঞান অন্তপ্রাণ ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন।
মানবজাতির সমগ্র চিন্তার ইতিহাসে আইনস্টাইনের মত প্রতিভাবান, উদ্ভাবনী মানুষ জন্ম নেয় নি। সম্ভবত নিবেও না। আইনস্টাইন জীবনের মাত্র ২০ বছর বিজ্ঞান সাধনায় কাটিয়েছিলেন যেখানে তিনি মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম করেছিলেন ৪০ বছর। আজ এই মহামানবের পৃথিবীতে আগমনের দিন। পৃথিবীর , সভ্যতার , মানুষের অস্তিত্ব যতদিন থাকবে ততদিন এই ধরিত্রীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটি আইনস্টাইন হয়েই রবে। ‘শুভ জন্মদিন আল বার্ট আইনস্টাইন'”।
(১৪ মার্চ আইনস্টাইনের জন্মদিন উপলক্ষে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত )।