সুদিনের হাতছানি : সরকারের পথনকশার পথ ধরেই এখন এগিয়ে যাচ্ছে চা-শিল্প
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২০, ৪:২০ অপরাহ্ণসালাম মশরুর::
‘চা-শিল্পের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পথনকশার পথ ধরেই এখন চা-শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চা শিল্পে সুদিনের হাতছানি দেখছেন মালিক শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা। সিলেট বিভাগের অনাবাদি ছোট বড় অসংখ্য টিলা ভুমি চা-চাষের আওতায় নিয়ে আসা হলে চা-উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সিলেটে গেলো বছরেও চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববাজারে চা-শিল্প চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
এবার মৌসুমের প্রথমেই অনাকাংখিত বৃষ্টি চায়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। চা-গাছের প্রয়োজনে এই সময় কৃত্রিম উপায়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এই সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা নয়। বছরের শুরুতে অসময়ের এ বৃষ্টি চাগাছের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি প্রায় এক মাস পর্যন্ত মাটির উর্বরা শক্তি যুগিয়েছে। বাগানের জন্য বর্তমান সময়ে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। বৃষ্টির পানিতে নাইট্রোজেন থাকে, যা আমাদের কৃত্রিম ইরিগেশন চা-গাছগুলোতে পাইপের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পানি দেওয়া থেকে অনেক উপকারী। ফলে তাড়াতািড় নতুন কুঁড়ি বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। ধারণা অনুযায়ী এবার ডিসেম্বর পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৯৫ মিলিয়ন কেজির ওপরে। অর্থাৎ ৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ চা-বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি বাগানে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা-উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। সে বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। এর আগে, ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। তবে এই ধারা বজায় রাখতে না পারায় ২০১৭ সালে চা-উৎপাদন কমেছিল। সেবার উৎপাদন হয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি। বিশ্বাবাজারে বাংলার চায়ের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল একসময়। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়েছিল বাংলাদেশ। শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে শুরু করে রপ্তানির পরিমাণ। এরই ধারাবাহিতকায় ২০১৫ সালে চা রপ্তানি হয়েছে মাত্র দশমিক ৪৯ মিলিয়ন কেজি। চা-শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালেই মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। ‘চা-শিল্পের উন্নয়নে পথনকশা’ নামে একটি কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছিল। ১৫ বছর মেয়াদি পথনকশায় চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩২ মিলিয়ন কেজি। রপ্তানির টার্গেট ছিল ২৫ হাজার মিলিয়ন।
চা-বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমানে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে চা-চাষ হচ্ছে। ২০১২ সালে হয়েছিল ৫০ হাজার হেক্টরে। গত তিন বছরে দেশে গড়ে বছরে ১২ হাজার মিলিয়ন কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় ‘বাগান মালিকরা এখন পুরনো চা-গাছ তুলে নতুন চারা লাগাচ্ছেন। বাগানের পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে, যে কারণে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। ‘সত্তরের দশকে দেশে চায়ের উৎপাদন ছিল ৩০ মিলিয়ন কেজি। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন কেজি। তখন চা রপ্তানি করা যেত। আর এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৮৫ মিলিয়ন, আর উৎপাদন হচ্ছে ৮২ মিলিয়ন। চা-বাগানের মালিকরা জানান, ‘এ শিল্পে আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই আবার বিদেশে চা রপ্তানি সম্ভব। বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ বলেন, ‘ওই পথনকশার পথ ধরেই চা শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাগানমালিকরা এখন চায়ের প্লানটেশন বাড়াচ্ছেন। বিশেষ করে পঞ্চগড়ের দিকে চায়ের প্লানটেশন অনেক বেশি হয়েছে।’ এর আগে দেড়শ বছরের চায়ের ইতিহাসে ২০১৬ সালে প্রথম সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা-উৎপাদন হয়। তবে এই উৎপাদনের ধারা ধরে রাখতে না পারায় ২০১৭ সালে চা উৎপাদন কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজিতে।
১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা-চাষ শুরু হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সেই চা-বিদেশে রপ্তানি হতো। দেশের রপ্তানিপণ্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল-চা। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলার চায়ের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। কিন্তু একসময় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশের চা। শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে শুরু করে রপ্তানির পরিমাণ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে চা রপ্তানি হয়েছে মাত্র দশমিক ৪৯ মিলিয়ন কেজি। আর চা-শিল্পকে এখান থেকে টেনে তুলে আবারও বিশ্ববাজারে হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালেই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। বিশ্বে চা-উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন নবম স্থানে আছে। ২০১৭ সালে ছিল দশম স্থানে। আর ২০১৫ সালে ছিল ১২তম স্থানে।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। চা-শিল্পের উন্নয়নে বাগান মালিকদের চিন্তা ধারা ব্রিটিশ আমলের পথ চলার সেই গতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাগান পরিচালনায় জমিদারী মনোভাব, উৎপাদন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাব, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, বাগানগুলোর পানি সেচ সুবিধার অভাব, বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা, চায়ের রি-প্ল্যান্টিংয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ওপর্যাপ্ত পুঁজি বিনিয়োগের অভাবে চা-উৎপাদন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হয়। যুগের পর যুগ অনেক বাগানে টি প্লান্টেশনে আধুনিকতার ছুয়া লাগেনি। এগিয়ে যাবার পরিবর্তে রুগ্ন হয়ে ধুকে ধুকে মরেছে অনেক বাগান। প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০০৯ সালে প্রায় ৪০টি বাগান রুগ্ন শিল্পের তালিকায় ছিল। পরবর্তীতে নানান উদ্যোগের ফলে প্রায় ২৫টি বাগান তাদের রুগ্ন দশা থেকে উন্নতি লাভ করে। মুলত অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পুজি সংকটের কারনে বাগানগুলি রুগ্ন দশায় পতিত হয়। দেশে ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে সিলেটে বিভাগে রয়েছে ১৩৬টি বাগান। বিদেশী রপ্তানীযোগ্য এক সময়ের অন্যতম ব্যবসা এই চা শিল্পের দুদর্শার দিকে নজর দেয় বর্তমান সরকার। এই ক্ষেত্রে নজরদারী ও কর্মকৌশল গ্রহন করায় গত ক’বছরে চা শিল্পের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
নির্দিষ্ট বাগানগুলোর বাইরে সিলেট বিভাগের কোথাও আজও নতুন করে চা চাষ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। সিলেট বিভাগে সরকারী ও ব্যক্তিমালিকানায় বিপুল পরিমান টিলা জাতীয় ভুমি অনাবাদি অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় সিলেট বিভাগে উঁচুনিচু টিলা জাতীয় চা-চাষের উপযোগী প্রায় ৫০হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। সেগুলোকে চা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হলে দেশের চা-উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সিলেট হবিগঞ্জ, মৌলবীবাজার জেলার টিলা জাতীয় ভুমিতে কমলা লেবু, আদাজামির, আনারস, লেবুসহ অন্যান্য মৌসুমী ফলের চাষ হয়ে থাকে। তবে সেটা উল্লেখযোগ্য পরিমানে হচ্ছেনা। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ক্ষুদ্র আকারে বাগান তৈরী করে চা-চাষ করার ক্ষেত্রে জমির মালিকদের উৎসাহিত করা হলে সহজেই অনাবাদি জমি চা চাষের আওতায় চলে আসবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্ষুদ্র আকারের এই সকল টিলাভুমি চা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হলে চা উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভূমির মালিকরা যেমন নতুন ব্যবসার সুযোগ পাবেন তেমনি উল্লেখযোগ্য শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরী হবে। বাগান বলতে বিশাল আয়তন নিয়ে চা-উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরীর চিন্তা না করে পঞ্চগড়ের মতো ক্ষুদ্র আকারের বাগান স্থাপনের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র আকারের টিলা জাতীয় অনেক ভূমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই সকল ভুমিতে চা চাষের ব্যবস্থা করা এবং সেসাথে এই ভুমিতে উৎপাদিত কাচা পাতা বিক্রির ব্যবস্থা করা। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই সকল ভূমিতে প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদিন চা-পাতা (কাচা পাতা) বিক্রির জন্য ক্ষেত্র তৈরী করা হলে এবং ভূমির মালিকরা সে সুবিধা পেলে এদিকে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত হবেন। আর এক্ষেত্রে চা-বোর্ডকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেহেতু ন্যাশনাল টি কোম্পানীর অধিনে ১৩টি চা বাগান রয়েছে, সেই বাগান গুলোর মাধ্যমে সরকারও এই অঞ্চলের উৎপাদিত পাতা ক্রয় করে নিতে পারে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই সকল টিলা ভুমি মালিকদের কাছে অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপে পরিনত হয়েছে। নিজের সম্পদ থাকা সত্তেও পরিকল্পনা ও পুজির অভাবে সেগুলো কাজে লাগাতে পারছেন না।
চা বোর্ড সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ৬০০ হেক্টর পাহাড়ি জমি ক্ষুদ্রায়তন চা চাষের আওতায় আনতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটে ৫০০ হেক্টর এবং বান্দরবন জেলায় ১০০ হেক্টর। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামীতে দেশের চা এর উৎপাদন বাড়বে ১২লাখ কেজি। মূলত দেরীতে হলেও ২০০৩ সাল থেকে চা বোর্ড ক্ষুদ্রায়তনে চা চাষ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক্ষেত্রে গতি সঞ্চার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চা উৎপাদন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নজরদারী বৃদ্ধি পেয়েছে। পঞ্চগড়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং বান্দরবনে ১১৮ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে চা চাষ করা হয়। ভালো ফল পাওয়ায় বড় বাগানের পাশাপাশি ক্ষুদ্রায়তন বাগান সৃস্টিতেই চা বোর্ড অধিক আগ্রহ নিয়ে কাজ করছে। বেসরকারি বাগান মালিকের অনেকেই রুগ্ন চা-বাগানে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে চা উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ চা বোর্ডের নেয়া প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, চা উৎপাদন বাড়াতে আগামী ১২ ব্ছরে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরআই। প্রকল্পগুলোর আওতায় সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও পঞ্চগড় জেলার ছয় হাজার ৪৪০ হেক্টর পতিত জমিতে আরও ১০৬টি চা বাগান তৈরি করা হবে।
দেশে ১৬৬টি চা বাগানে ৫৮ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে চা-আবাদ হয়। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ১ হাজার ৩৭০ কেজি। গেলো বছর ভালো মাপের চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপযোগী আবহাওয়া ছিল সহায়কশক্তি। পর্যাপ্ত পরিমান বৃষ্টিপাত ছিল অন্যতম কারন। এক্ষেত্রে বলা যায় খরার হাত থেকে রক্ষা করে চায়ের অধিক ফলন পেতে হলে বাগানগুলোর পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে অধিকাংশ বাগানের সে ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি বাগানে পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থাও অধিক জরুরী।
সারা বছর যাতে প্রচুর পাতা পাওয়া যায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকে এই কামনায় চা-শ্রমিকদের রীতি অনুযায়ী সকল চা-বাগানে আয়োজন করা হয় দোয়া, মিলাদ মাহফিল, বৃক্ষপূজা ও নতুন পাতাকে স্বাগত জানিয়ে চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী গীতিনৃত্য। পরে সবাইকে করানো হয় মিষ্টিমুখ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা-গবেষণা কেন্দ্রের (বিটিআরআই) পরিচালক ড. মাঈন উদ্দিন জানান, অনুকূল আবহাওয়া, উৎপাদন এলাকার স¤প্রসারণ, ক্লোন গাছের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং চা বোর্ডের নজরদারির ফলে চা উৎপাদন বেড়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশে চায়ের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে কমেছে চা রফতানি। আর এ সুযোগকে পুঁজি করে ভালো চায়ের সঙ্গে আমদানি করা নিম্নমানের চা বাজারজাত করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দেশের চা শিল্পকে রক্ষা করতে আমদানির ওপর ট্যারিফ বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশে দেশি চায়ের বাজার সৃষ্টিতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চা ব্যবসায়ীরা।
চা উৎপাদনের সাথে চা শ্রমিকদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। চা-শ্রমিকদের বাগান বান্ধব করে রাখা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে আধুনিক জীবন ব্যবস্থার সাথে চা শ্রমিকদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা এখনো সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্টার বিষয়টি সামনে এনে বিভিন্ন মহল রাজনৈতিক রং ছড়িয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনমুখী করার পক্ষে কাজ করছে। এতে এই সেক্টরে শ্রমিক সন্তুষ তৈরী হচ্ছে। যথাসময়ে শ্রমিকদের ন্যায্য বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হলে মালিক শ্রমিক উভয়ের জন্য মঙ্গল। পরিমান মতো চাপাতা তুলে জমা না দিলে টাকা দেয়া হয়না এ ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় কাজ করে তাদের মধ্যে। ১৮৩৬ সালে ব্রিটিশদের আগমন ঘটে এ দেশে। সে সময় চীনে উদ্ভাবিত চা প্রথমে সিলেটের মালনীছড়া ও চট্টগ্রামের হায়দ্রাবাদ গ্রামে রোপন করা হয়। তখন ব্রিটিশরা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সিলেটকে উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে বেছে নেয়। চা শিল্পের উন্নয়ন পরিকল্পনার এক পযার্য় ভারতের উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড উত্তর প্রদেশ বিভিন্ন এলাকার দিকে তাদের দৃষ্টি পড়ে। সাওঁতাল, ওঁরাও, মোন্ডা, দেশওয়ালী, মোরা, উড়িয়া রাজবংশী প্রভৃতি সম্পাদায়ের চা- শ্রমিকদের ভুমিসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে আনা হলেও বাস্তবে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। ভুমি তো নয়ই সামান্য বাসস্থানের ব্যবস্থাটুকু করে দেয়া হয়নি সে সময়। চা উৎপাদনের সাথে জড়িত চা শ্রমিকদের জীবন মানের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদেরকে এক্ষেত্রে অধিক পরিশ্রমী হওয়ার ব্যবস্থা নেয় প্রয়োজন।