বিজ্ঞানভিত্তিক চাষই খাদ্য সমস্যার সমাধান
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২০, ৪:৪৫ অপরাহ্ণআফতাব চৌধুরী::
যদিও বলা হচ্ছে খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু সুষম খাদ্যে এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি এ দেশ। সুস্থ, সবল জাতি গড়তে হলে সকল বাংলাদেশিকে সুষম খাদ্য দেয়া জরুরি।
আমরা এখন ভন্ডুল জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংস¤পুর্ণ, কিন্তু সুষম খাদ্য তালিকায় সবজির যে এক বিশেষ ভ‚মিকা আছে তা বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন যা আমরা এখনও পালন করতে পারিনি। আমাদের খাদ্য তালিকায় দৈনিক ২০১ গ্রাম সবজি থাকা উচিত, অথচ আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫০ গ্রাম, যেখানে জাপানে মাথাপিছু ২৮৭ গ্রাম, কোরিয়ায় মাথাপিছু ৫৮৯ গ্রাম এবং চীনে মাথাপিছু ৩০৬ গ্রাম সবজি গ্রহণ করছে।বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক। আমরা দেখতে পাচ্ছি যেখানে জাপানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.০৪ শতাংশ, কোরিয়ায় ১.০১ শতাংশ, চীনে ১.০৬ শতাংশ, ভারতে ১.০৯ এবং বাংলাদেশে ২.১৯ শতাংশ। এর ফলে চাষের জমি ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যবহƒত হচ্ছে। একই জমিতে একাধিকবার এবং অধিক ফসল ফলানোর জন্য জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, সে সঙ্গে অবৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের ব্যবহারের ফলে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, জমির নিজস্ব উৎপাদিকা শক্তি হ্রাস পেয়ে চলেছে এবং মাটির প্রাকৃতিক গঠন নষ্ট হচ্ছে।
জমিতে খুবই কম জৈব পদার্থের উপস্থিতি, মাটির অনুখাদ্যের ভান্ডারও কমতির দিকে। অনেক জমিতে অনুখাদ্যের অভাব, মাটির পানি ধারনের ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধান এককভাবে না করে সমষ্টিগতভাবে করা উচিত। জাপান, কোরিয়া এবং চীনের খাদ্য তালিকায় সবজি ব্যবহার আমাদের চেয়ে বেশি এবং সবজি ফসলের উৎপাদনশীলতাও অনেক বেশি। আমাদের দেশের সবজি উৎপাদনশীলতা যেখানে ৫০০ টনের মত প্রতি হেক্টরে, সেখানে জাপানে ৩১.৭৯ টন, কোরিয়ায় ১৭.২০ টন এবং চীনে ৩৫.০৩ টন প্রতি হেক্টরে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ উৎপাদনশীলতা বাড়ার কারণ হাইব্রিড বীজ ব্যবহার এবং উন্নত চাষ পদ্ধতি প্রয়োগ।
জাপান, কোরিয়া, চীন ইত্যাদি দেশে দেখা যায় বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি প্রায় একশ শতাংশই উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের সবজির আওতায়। বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে এও দেখেছেন যে, উন্নত জাতের বীজের জন্যই ২০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ হাইব্রিড বীজে রোগপোকা প্রতিরোধের ক্ষমতা বিদ্যমান, প্রয়োজনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও এ উন্নতমানের বীজে বিদ্যমান। তাই সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমাদের উন্নত জাতের হাইব্রিড সবজি এবং উন্নত প্রথায় চাষবাস করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে, একক জমিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াবার জন্য উন্নত মানের বীজ এবং জমির স্বাস্থ্য বজায় রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা। তা হলে আমাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের চাষিরা কিন্তু এখনও জানেন না কোন সবজি মাটি থেকে কী পরিমাণ কী সবজিত খাদ্য অপসারণ করে এবং বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভাল উৎপাদন পেতে কত এবং কী কী সার মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। যেমন, বিদেশের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৯০৮০ কেজি বাঁধাকপি উৎপাদনের জন্য এক একর জমি থেকে প্রায় ২৮ কেজি ক্যালসিয়াম এবং ৬৮১০ কেজি ফুলকপি উৎপাদনের জন্য প্রায় ১৯ কেজি নাইট্রোজেন, ৭ কেজি ফসফেট, ২২ কেজি পটাশ ও ৩ কেজি ক্যালসিয়াম মাটির সবজিত ভান্ডার থেকে অপসারণ করে।
আমাদের চাষিরা কিন্তু এসব বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কিছু কিছু চাষি সবজি চাষে বেশ ভাল ফলন ফলাচ্ছেন। কিন্তু জমির স্ব^াস্থ্য বজায় রেখে কি সে ফলন ফলাচ্ছেন? এ বিষয়ে এখন কৃষি বিভাগকে অগ্রণী হতে হবে।
আরও একটি বিষয়ে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছি। তা হল, কোন সবজির কী পুষ্টিগুণ। এও আমাদের সাধারণকে বোঝাতে হবে এবং সেভাবে সবজি চাষের এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের শুধু সবজির চাষ করলে চলবে না। সে সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক কোন সবজি কোন এলাকায় হবে তাও ঠিক করে আমাদের এগোতে হবে। কারণ এ পরিকল্পনার অভাবে আমাদের চাষীভাইরা অনেক সময় উপযুক্ত মূল্যে তাঁদের উৎপাদন বিক্রি করতে পারেন না। আমরা প্রায়ই দেখি ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ইত্যাদি একই সময় সব চাষীভাই বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে উপস্থিত হবে হিমাগার না থাকার জন্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। চাষিরা যদি উপযুক্ত জলদি ও নাবি জাতের এসব সবজি চাষ করেন, তা হলে কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তাঁদের ফসল বাজারজাত করতে পারবেন এবং উপযুক্ত মূল্যও পেতে পারবেন। এখন কিন্তু অনেক উন্নত মানের, বিভিন্ন আবহাওয়ার উপযুক্ত জলদি ও নাবি সবজি বীজ পাওয়া যায়।