করোনা পরবর্তী পৃথিবী : সুশাসনের বিকল্প নেই
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২০, ৪:৫৭ অপরাহ্ণমতি গাজ্জালী::
যে কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিপর্যয়ের পর কি মানুষের মননে চিন্তা-চেতনায় নৈতিক ও মানবিক দিক থেকে ইতিবাচক পরির্বুন আসে? সাধারণ ও দরিদ্রের কোনো আর্থিক উন্নয়ন ঘটে? এমন প্রশ্ন প্রায়শ মনে আসে। কিন্তু উত্তর মিলে না।
রাজনীতি একদিকে কল্যাণকর, অন্যদিকে অনিষ্টকর। যেখানে জনগণ সরকার পরির্বুনের ক্ষমতা রাখে সেখানে রাজনীতি জোছনালোকের মতো মায়াবী। আর যেখানে জনগণ ক্রীতদাস, সরকার পরির্বুনের গণতান্ত্রিক সুযোগ হারায় সেখানে অমাবস্যাকাল। ঘোর অন্ধকার। সেখানে কতিপয় লোক রাষ্ট্রের সকল কিছু লুটপাট করে খায়। দলের লোকেরা ভালো থাকে। সাধারণ মানুষগুলো দরিদ্র থেকে যায়। বাকস্বাধীনতা হারায়। মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া বাকস্বাধীনতা। অবাধ চলাফেরা, মুক্ত জীবন। শেষোক্ত শাসনে শৃঙ্খলিত জীবন। বন্দি জীবন।সেসব দেশে মহামারি যুদ্ধ বা যে-কোনো জাতীয় বিপর্যয়ে সরকার যতœবান হয় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে। জনগণের মৌলিক অধিকার নিয়ে ভাবে না। প্রয়োজনে স্টিমরোলার চালায়। শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি করে। বহির্বিশ্বের সাথে সযতনে নিজকে সরিয়ে রাখে। কারো কথায় কান দেয় না। সেসব সরকার শুধু উন্নয়নের ¯েøাগান দেবে। তাদের লোকজন বিদেশে সম্পদ টাকাকড়ি পাচার করবে। জনসংখ্যানুপাতে সেসব দেশ সম্পদের সুষম বন্টন ভুলে যায়। দলের লোকজন সব সুবিধা লুটে নেয়। গৃহহীন দিনমজুর হতদরিদ্র মানুষগুলো অনাহারে উপোসে মারা যায়। সরকার প্রচার-প্রচারণায় মানবিক। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংবাদ প্রচার করে। মিডিয়াগুলো গৃহপালিত প্রাণীর মতো প্রভুর পা চাটবে আর অপরিচিত কেউ কাছে আসলে ঘেউঘেউ করবে। দলকানা আর দলদাসদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
দৈবদুর্বিপাকে ভিন্নমত পোষণ করে এমন দরিদ্রের পাশে ওইসব সরকার বা দলকানারা সাহায্যের হাত বাড়াবে না। শুধু বক্তৃতাবাজি আর চাপাবাজি করে শাসনকে পোক্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। জনগণের মধ্যে ভীতির রাজত্ব কায়েম করে। গুম হত্যা হয়ে ওঠে শাসনের মূল চরিত্র। অথবা সন্ত্রাসী জঙ্গি অভিযোগে বিনাবিচারে নিরীহদের খুন করার কালচাল তৈরি করে। সন্তানের লাশটা পর্যন্ত বাবা-মা গ্রহণ করতে সাহসী হয় না। কাঁদতেও পারে না। বেওয়ারিশ লাশের মতো সরকারি লোকজন দাফন করে। স্বদেশে যেন বিদেশি কোনো রক্তপিপাসু সরকার ক্ষমতায়। একজন সাধারণ মানুষ কি কখনো সরকারের প্রতিদ্ব›দ্বী হতে পারে? সেই সাহস রাখে? মানুষের জীবনতো একটা। কল্লাতো একটা। তাই সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ চুপ করে মানবেুর জীবন যাপন করে।
নবেল করোনা পরবর্তীতে এ ধরনের সরকারগুলোর আচরণ কি হবে এখনই স্পষ্ট। তারা আগের মতোই বেপরোয়া আর শোষকের চরিত্র নিয়ে ক্ষমতাসীন থাকবে। পারে তো বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যে আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠবে। মানুষজনের ওপর তদারকি বাড়িয়ে দেবে। আইনহীন বিচারহীন রাষ্ট্র কায়েম করবে।
পৃথিবীতে তাহলে সুখ শান্তির কি হবে? এর উত্তর কারো জানা নেই। মুষ্টিমেয় কিছু রাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের কল্যাণের ভাবনা ভাববে। এখনও তারা তাদের জনগণের জানমাল হেফাজতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সেসব দেশ সভ্য ও গণতান্ত্রিক।
আর যেসব দেশ আগে থেকেই স্বেচ্ছাচারী সরকার দ্বারা শাসিত, সেসব দেশের শাসন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরির্বুন আসা আকাশকুসুম কল্পনা। যদি গণঅভ্যুত্থান ঘটে, বৃহৎ শক্তিগুলো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সে ইতিহাস ভিন্ন। সাধারণত সেরকম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেসব দেশে দুর্ভিক্ষ মহামারি আসা মানে সরকার তা আশীর্বাদ হিসেবে নেয়। এসবকে পুঁজি করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার নতুন নতুন অঙ্ক কষে। ষড়যন্ত্রের নতুন নতুন জাল বুনে। দেশকে বিরাজনীতিকরণ করে। বিরোধীদের নির্মূল করে দেয়। জনগণ প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে সাহস হারিয়ে ফেলে। সামরিক বাহিনী তাদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। সুযোগ-সুবিধা লুটে তারা মোটাতাজা হয়। আমিরের জীবনযাপন করে। দেশ ও মানুষ নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও একই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। অন্যায্য ক্ষমতা প্রদর্শন করে। আমলারা আরও এককাঠি ওপরে। সরকারকে বিভ্রান্ত করে, তারা তাদের অনৈতিক সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নেয়। ক্ষমতাবান হয়। সরকারকে জিম্মি করে। আমলা রাজত্ব কায়েম করে। সরকার এই মহাফাঁদ থেকে বের হতে পারে না। জনগণের ভোগান্তি হয় চরম। মানবেুর জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সহজ সরল মানুষগুলোকে। আইনহীন বিচারহীন একটা সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সুতরাং ওই গণবিরোধী সরকার দেশের মানুষের মূলশক্তি নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধ্বংস করে রেখে যায়। দীর্ঘ একটা অন্ধকার যুগ আসে। মানুষ দিশেহারা হয়ে ওঠে। ভেতরে ক্রন্দন হয়, কিন্তু কাঁদতে পারে না। বর্গির মতো একটা লুটেরা বাহিনী সব লুটপাট করে খেয়ে নেয়। রাষ্ট্র চুষে খাওয়া আমের আঁটির মতো আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকে। মাছি ভনভন করে।
এমন সময় যদি কোনো রাষ্ট্রের হয়, তাহলে প্রজা বা সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কি হবে, তা ভাবতে খুব বিদ্বান বা পন্ডিত হতে হয় না। আগামী পৃথিবী এবং তার মানুষ সুখী হবে তো?
(চলবে)…
লেখক : কবি, প্রবন্ধিক, সাংবাদিক।