সিসিকের ৯ নারী কাউন্সিলরের আন্দোলন ভেস্তে গেল কোন জাদুবলে
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৪:২১ অপরাহ্ণস্টাফ রিপোর্টার::
সিসিকের সংরক্ষিত নারী আসনের ৯ কাউন্সিলরবৃন্দের অধিকার আদায়ের বড়বড় বুলি বন্ধ হয়ে গেল, বন্ধ হয়ে গেল প্রতিবাদ কর্মসূচিও। এমনকি সকল অভিযোগের তির সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপর থাকলেও মাত্র তিন দিনের ফারাকে চুলোয় গেছে সেই অভিযোগ। সেই থেকে আন্দোলন নিয়েও মুখে ‘রা’ নেই সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের।
গত ৯ মে নগরীতে মেয়রের মশক নিধন কার্যক্রমে ভেস্তে যায় নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ৯ নারী কাউন্সিলরদের আন্দোলন।
বিষয়টি অনেকটাই রহস্যাবৃত্ত। শাহনাজ একা ছিলেননা, নারী কাউন্সিলরদের মধ্যে সাথে ছিলেন দুজন আইনজীবী কাউন্সিলর। তারা হচ্ছেন, অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা, অ্যাডভোকেট কুলসুমা বেগম পপি। তবে মশক নিধন অভিযানে দাওয়াত পাননি একাধিক কাউন্সিলর। একাধিক কাউন্সিলরের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ওই তিন নারী কাউন্সিলর কোন জাদুমন্ত্রে হাজির হয়েছিলেন সেখানে ?
এর আগে নারী কাউন্সিলরদের সাথে সমঝোতা বৈঠকের আহবান জানিয়ে ৮ মে নগর ভবনে বৈঠক ডাকেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দীর্ঘ দেড় ঘন্টার মিটিং শেষেও মহিলোা কাউন্সিলরদের অনেকেই মেয়রের প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু তাতেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তারপর সবকিছুই আগের মতোই শুরু হলো নতুন করে। ক্ষোভ দেখানো মহিলোা কাউন্সিলররা এক সময় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এখন আর ফোনও রিসিভ করেন না। দুদিন থেকে রোকশানা বেগম শাহনাজ এবং মাসুদা সুলতানা সাকিকে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে মহিলোা কাউন্সিলদের সাথে আন্দোলনের শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন না ১৩ ,১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে মহিলোা কাউন্সিলর আক্তার শানু। কেন তিনি আন্দোলনে নেইÑএমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘গেজেটের নিয়ম অনুযায়ী সিসিক থেকে সবকিছুই বণ্টন করা হচ্ছে। এখানে পুরুষ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরের সুযোগ-সুবিধার কথাও বলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, আমার তিন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাথে কোনো বিষয়েই মতবিরোধ হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা সবাই বিতরণ কার্যক্রমে আমাকে পাশে রাখছেন’। অভিযোগ রয়েছে, আপনি সিসিক থেকে আলাদা সুবিধা গ্রহণ করেই আন্দোলনে জড়িত হননি, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ সিসিক মেয়রের প্রতি আমার অভিযোগই ছিল না। অতএব, আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি এখানে কোনোভাবেই আসেনা। তবে যারা অভিযোগ তুলেছেন, তাদের মধ্যে অনেক কাউন্সিলর আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
অবশ্য ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ বলেছেন, আন্দোলন শেষ হয়নি। স্থগিত আছে। সাকী সুস্থ হলে আমরা বসব। তিনি স্বীকার করেন কয়েকজন কাউন্সিলর লাখ টাকা করে নিয়েছেন। তবে তিনি নেননি। কাউন্সিলর রোকশানা তথ্য দেন, গত ৮ মে নগর ভবনে মেয়র আরিফুল হক তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানে কিছুটা আশ্বাস মিলেছে। প্রধানমন্ত্রীর যে ৪০ হাজার উপহার আসার কথা, তা এলে তারা ভাগ পাবেন। এলাকায় চাল বন্টনেরও একটা হিস্যা তারা পাবেন বলে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন।
বিষয়টি জানতে সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর নাজনীন আক্তার কনা বলেন, মশক নিধন কার্যক্রমের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ৮ মে নগরভবনে মেয়রের সাথে অমীমাংসীত একটি বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের পর কয়েকজন কাউন্সিলরকে দেখলাম মশক নিধন কার্যক্রমে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, এই আন্দোলন ছিল অধিকার আদায়ের-ব্যক্তি ফায়দা হাসিলের জন্য নয়। তবে, আন্দোলনের জন্য তিনি এখনও প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
গত ৬ মে সিসিকের ত্রাণ কার্যক্রমে মহিলোা কাউন্সিলরদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না রাখার প্রতিবাদে আন্দোলনে ডাক দেন তাঁরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৭মে বৃহস্পতিবার সিলেট নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মস‚চি পালনের ঘোষণা করা হয়। কিন্তু খেলা শেষ হয়ে যায় তার আগেই। ৬ মে বুধবার রাতেই দাবার ঘুঁটিতে হেরে যান বিক্ষুব্ধ এক নারী, নারী কাউন্সিলর। নগরীর ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরের নাম মাসুদা সুলতানা সাকি। বুধবার রাতেই ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিকান্দর আলীর বাহিনীর হাতে পরাস্থ হয়ে তিনি চলে যান হাসপাতালে। ব্যাস ! শেষ হয়ে গেল আন্দোলন। যদিও কর্মসূচির দিনে অপর কাউন্সিলরদের বক্তব্য ছিল,‘সহকর্মীকে হাসপাতালে রেখে আন্দোলনে যাব না, তিনি সুস্থ হলে তবেই ফিরব আন্দোলনে।’ কিন্তু সাকি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও মুখ গুটিয়ে বসে আছেন অন্যরা।