সিলেটে বন্ধ হচ্ছে ‘সূর্যের হাসি’ ক্লিনিক : হাজার স্বাস্থ্যকর্মী চাকরি হারানোর শঙ্কায়
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৪:২৩ অপরাহ্ণস্টাফ রিপোর্টার::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও দিঙ্নির্দেশনায় স‚র্যের হাসি নেটওয়ার্কের স্বাস্থ্য কর্মীরা যখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, ঠিক সে মুহুর্তে সিলেট বিভাগের ১৮টিসহ ১৫৮টি স‚র্যের হাসি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়ে কর্মীদেরকে বাধ্যতাম‚লক চাকরিচ্যুত করার পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মহামারি করোনাভাইরাসের ফলে উদ্ভ‚ত সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেই চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন স‚র্যের হাসি ক্লিনিকের ১৫৮টি শাখার প্রায় দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। এ অবস্থায় চাকরি বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মী। গত ১০ মে সিলেট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে উপশহর সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ক্লিনিক ম্যানেজার সুচন্দা দাস, চৌকিদিঘী সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার পপি দে, চাদনীঘাট ক্লিনিকের ম্যানেজার তাইফা ও দক্ষিণ সুরমার ম্যানেজার রুখসানা ও সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে হাসপাতাল বন্ধের আদেশ স্থগিতের আবেদন করেছেন।
আবেদনে বলা হয়, দেশের মানুষ যখন করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচার জন্য ঘরে বন্দি, প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের মানুষকে করোনার হাত থেকে মুক্ত করার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কে স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, ঠিক সে মুহ‚র্তে সিলেট বিভাগের ১৮ টিসহ মোট ১৫৮টি স‚র্যের হাসি ক্লিনিক বন্ধ করে এর প্রায় ২ হাজার কর্মীকে বাধ্যতাম‚লক ভাবে চাকরিচ্যুত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার সদস্যের সাধারণভাবে খেয়ে পরে জীবন ধারণ করা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যমে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়ের কাউকে চাকরিচ্যুত এবং হয়রানি করা যাবে না।
এবিষয়ে সুচন্দা দাস বলেন, স‚র্যের হাসি ক্লিনিক দীর্ঘদিন সারাদেশে পরিবার পরিকল্পনা এবং গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়ে আসছে। তাদের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে, গর্ভবতী নারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আস্থার প্রতীক। অথচ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বন্ধ ঘোষণা করা ১৫৮ টি হাসপাতালের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের প্রশ্ন রাখে, যা সত্য নয়। বন্ধের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা কর্তৃপক্ষের সাথে মেইল এবং ফোনে যোগাযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের ফান্ড সংকটের কথা বলেছে যদিও তারা জানতে পেরেছেন, আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিকাশ সংস্থার (ইউএসএইড) থেকে ইতোমধ্যে ফান্ড চলে এসেছে।
গত ৫ এপ্রিল স‚র্যের হাসি নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের ১৫৮টি ক্লিনিক বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি আবেদন করেন। এরও আগে ৭৪টি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এ পরিস্থিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করা প্রায় হাজার স্বাস্থ্যকর্মী চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। এতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরও ১৫ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে লক ডাউন থাকায় তারা সরাসরি প্রধান কর্যালয়ে যেতে পারছেন না বলেও উলে¬খ করেন তিনি। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি এবং সংশ্লি¬ষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসকদের নিকট স্থগিতের আবেদন করছেন উলে¬খ করে এই ক্লিনিক ম্যানেজার বলেন, তারা আশা করেন কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনা করবে। তারা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
উল্লে¬খ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের সাধারণ প্রসব সেবা, ইপিআইয়ের মতো গুরুত্বপ‚র্ণ কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য ১৯৯৭ সাল ইউএসএইড-এর সহযোগিতায় দেশে স‚র্যের হাসি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। সারা দেশে ৩৬৯টি উপজেলায় এ ক্লিনিক রয়েছে।