সিলেট নগরীতে একদিকে করোনা, অন্যদিকে এডিস মশা
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৪:৪৫ অপরাহ্ণএম.এ. রউফ, সিলেট::
করোনা আতঙ্কের মধ্যেই সিলেট নগরীর দুটি ওয়ার্ডের ৫ টি স্থানে ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে নগরবাসীর মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
এমনিতেই করোনার কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন ও স্বাস্থ্যসেবা। এ অবস্থায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সিলেটে দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক।সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৫ এপ্রিল একজন চিকিৎসকের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সিলেট অঞ্চলের জন্য উদ্বেগ ও আতঙ্কের হলেও সচেতনতায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এই অঞ্চল। এরফলে এই দৃশ্যটি গৃহবন্দি সচেতন মানুষেদের মধ্যে চরম হতাশানক। এরই মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। অবস্থাটিকে বিপদের মাঝে বিপত্তি বলেই মনে করছেন নগরবাসী।
সিলেট নগরীতে ময়লা-আবর্জনা সঠিকভাবে অপসারণ করা হয় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকলে নগরীতে এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া যেত না ।
গত জানুয়ারিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে যোগ দিতে সিলেট সফর করেছিলেন বাংলাদেশের ষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এদিন সমাবর্তনে বক্তব্যকালে সিলেটকে নোংরা বলে উলে¬খ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন সিলেটকে একটা সুন্দর শহর মনে করেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম একটি অপরিচ্ছন্ন শহর। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা, কলার খোসা পড়ে আছে।
পরবর্তীতে ১৮ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তখন এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু তা ঠিক মতো না করায় রাষ্ট্রপতির চোখে পড়েছে। এতে সিলেটের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।
গতবছর প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ থেকে ৭টি ওয়ার্ডে এডিস মশার অস্তিত্ব পেয়েছিলাম। সেই ওয়ার্ডগুলো থেকে এবারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ এবং ২৬ নং ওয়ার্ডের এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত অন্য ওয়ার্ডগুলোতে এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নিÑএমনটি দাবি করছেন সিটি করপোরেশন।
এমনকি গত বছর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিপরীতে থাকা নার্সারিতে যে এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, এবার সে জায়গায় এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ২২, ৮, ১০ নম্বর ওয়ার্ডেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই ওয়ার্ডগুলোতেও এবার এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সিসিক সূত্র জানায়, এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। কারণ ইতোমধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কর্মসূচির বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে ৫টি করে ওয়ার্ডকে এই কর্মস‚চির আওতায় আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে জুলাই পর্যন্ত একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেহেতু ২৫ এবং ২৬ নং ওয়ার্ডের এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে তাই সিসিকের প¬্যানে ২৫ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সিসিক প্রস্তুত রয়েছে। এ ব্যাপারে জুলাই পর্যন্ত একটি প¬্যান করা হয়েছে। এই প¬্যান অনুযায়ী কাজও চলমান থাকবে। এছাড়া এবার একটি স্বস্তির বিষয় হল গতবার যেভাবে ঢাকা থেকে রোগীরা এসে স্থানীয়দের আক্রান্ত করেছিলেন সেই শঙ্কাটা এখন পর্যন্ত নেই। কারণ সারাদেশে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০দিন থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিকদের করণীয় নিয়ে নগরীতে মাইকিং করানো হচ্ছে। মশক নিধন করার আগে ওয়ার্ডের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার আওতায় আনা হচ্ছে। এবার সিলেট সিটি করপোরেশনের ম্যাপ ফলো করে একটি সাইড থেকে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে ১, ৪, ৫, ৬ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কর্মস‚চির বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। ১৩ মে থেকে ৭, ৮, ৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ শুরু করা হয়েছে।