সিলেট নগরীতে কমেছে চুরি, ডাকাতি, বেড়েছে ধর্ষণ
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৪:৪৭ অপরাহ্ণস্টাফ রিপোর্টার::
চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৭৬টি। ধর্ষণের ঘটনা বাড়লে ও নগরীতে কমেছে চুরি-ডাকাতি। সিলেট মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে উন্নতি হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় অপরাধ কমেছে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। আবার কোনো কোনো থানায় তা নেমে এসেছে শ‚ন্যের কোঠায়। এর মধ্যে জেলা পুলিশের আওতাধীন ১৩টি থানায় ৫০টি এবং মহানগর পুলিশের আওতাধীন ৬টি থানায় ২৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পরিচিতজনরা যেমন পশুর রূপ দেখাচ্ছেন, তেমনই অপরিচিতদের হাতেও সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটছে অহরহ। সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ এমন তথ্য জানিয়েছেন।সূত্র জানায়, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে সিলেট মহানগরীতে অপরাধ কমেছে। মার্চ মাসে মহানগরীর ছয়টি থানায় মোট ৮৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। যেখানে ফেব্রæয়ারি মাসে মামলার সংখ্যা ছিল দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
গত মার্চ মাসে খুন ৪টি, নারী নির্যাতন ১২টি, শিশু নির্যাতন ১০টি, দ্রæত বিচার ৪টি, ধর্ষণ ৪টি, চুরি ৭টি, মাদক ৪৩টি সহ মোট ৮৪টি মামলা হয়েছে।
এপ্রিল মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩১টি। এরমধ্যে খুন ১টি, নারী নির্যাতন ৩টি, শিশু নির্যাতন ৭টি, দ্রæত বিচার ২টি, ধর্ষণ ১টি, চুরি ৬টি, মাদক ১০টি। এই দুই মাসে অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাইর ঘটনা ঘটেনি। পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, মহানগরীতে গত মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে ৫৩টি মামলা ঘ্রাস পেয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম মাস তথা জানুয়ারিতে ৪ জন নারী ও ৬ শিশু ধর্ষিত হয়েছে। ফেব্রæয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর মধ্যে ধর্ষিতার তালিকায় রয়েছে ৭ শিশু। এ বছর এখনও পর্যন্ত সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মার্চ মাসে। এ মাসে ৯ জন নারী আর ১০ শিশু লাম্পট্যের কবলে পড়েন।
মহানগরীর ছয় থানায় কমেছে চুরি ডাকাতি, কমেছে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা
থানাগুলোতে জনসাধারণের ভিড় আগের তুলনায় নেই। এখন পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজে। পুলিশ বলছে, ছিনতাই, পকেটমার, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি খুনসহ অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা কমে গেছে।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহানগরীতে শুধু অপরাধ কমেছে তা নয়, থানায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এ বছরে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৫০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নারী ২৩ জন ছাড়াও রয়েছে ২৭ শিশু। পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মাঠপর্যায়ে পুলিশের তৎপরতার কারণে ধর্ষণের ঘটনা কমে আসছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এসএমপির ৬টি থানা এলাকায় ২৬টি ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি ধর্ষণের ঘটনাই জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে ঘটেছে। এরপর এ ধরনের ঘটনা কমে আসে। মার্চে ৪টি ও এপ্রিলে ১টি ধর্ষণের ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে পুলিশের খাতায়।
সর্বশেষ ২মে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূপা (ছদ্মনাম)। বাড়ি জৈন্তাপুরের মোকামটিলায়। রূপার একই গ্রামের বাসিন্দা কয়েছ আহমদ ও সুমি বেগম। রূপার দূরসম্পর্কের খালা সুমি। একই গ্রামের বাসিন্দা, আবার সম্পর্কে খালা-রূপা তাই সরল বিশ্বাসে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইফতারে।
ঘটনাটি গত ২ মে’র। ইফতার করতে যাওয়া রূপার সাথে ঘটে ভয়ানক অমানবিকতা। ইফতার শেষে চায়ের সাথে চেতনাশক মিশিয়ে পান কৌশলে পান করানো হয় রূপাকে। সুমির সহযোগিতায় অচেতন রূপাকে ধর্ষণ করেন কয়েছ। রূপার অভিযোগের ভিত্তিতে পরে সুমি ও কয়েছকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, ‘যতোগুলো ঘটনা ঘটে, পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মামলা হয়েছে, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের (মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস) অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জেদান আল মুছা বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ সংক্রমণ রোধে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তাঘাট ও শপিংমল তথা বাজারে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় অপরাধ প্রবণতা কমেছে। এখন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশ জনসচেতনতা বাড়াতে বাড়ি বাড়ি এবং অলিগলিতেও যাচ্ছে। এ কারণেও অপরাধীরা আতঙ্কে আছে।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি ওবান বলেন, করোনার ভয়ে অপরাধীরাও ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এজন্য আগের তুলনায় বর্তমানে অপরাধ অনেকটা কমে গেছে। এরপরও র্যাব নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত টহল দিচ্ছে।