মহামারি ও মহাপ্রলয়ে ঈদ উৎসব মলিন
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৫:৩৪ অপরাহ্ণকাজী তোফায়েল আহমদ::
এক কঠিন সময়। প্রায় তিনমাসব্যাপী অদৃশ্য মহাশক্তি করোনা ভাইরাসের রক্তচক্ষু। তার উপর প্রলয়নকারী ঘুর্ণীঝড় ‘ আম্ফান-এর তান্ডব। এর মধ্যে আর তিনদিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এই ত্রিমুখী চাপে মানুষ দিশেহারা। মহামারী ও মহাপ্রলয়ে ঈদ উৎসব মলিন।
গত ৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে কোভাড-১৯ এর আক্রান্ত প্রথম ধরা পড়ে। গত বছর শেষের দিকে চীনের উহান শহরে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অল্প দিনের মধ্যেই এটা সারা পৃথিবীতে ছড়াইয়া পড়ে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মানুষ এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণ করতে থাকে। এর ভয়াল থাবায় সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পরে। মানুষ কার্যতঃ হয়ে পড়ে গৃহবন্দী। বিশ্ব অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পরে। সমৃদ্ধ শালী দেশশুলী হিমসিম খায়। অনুন্নত দেশগুলোর অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। কোভিড-১৯ কোন চিকিৎসা আবিস্কৃত না হওয়ায় পৃথিবীর প্রায় ৪৯ লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়। মৃত্যুবরণ করে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ। বাংলাদেশে (২০ মে) আক্রান্ত ২৬ হাজার ৭৩৮ জন। মারা যায় ৩৮৬ জন।
এই অবস্থায় ঈদ এবং জীবিকার তাগিদে আরোপিত লকডাউন শীতিল করা হয়। পর্যায়ক্রমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। একই সাথে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রশ্ন দেখা দেয় এখনি লকডাউন উঠানো ঠিক হবে কিনা। কার্যকর লকডাউন যে সংক্রমণ ঠেকাতে সহায়তা করে তার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে টোলারবাগ।
সারাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণার আগেই রাজধানীর টোলারবাগ এলাকা লকডাউন করা হয়। আইইডিসিআর এর সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে সমগ্র ঢাকায় ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ১২ই এপ্রিলের পর টোলারবাগে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, শিবচর, টোলারবাগের মতো যেসব এলাকায় কার্যকরভাবে লকডাউন পালিত হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। “নির্দেশনায় কিন্তু আছে যে গণজমায়েত করা যাবে না, গণসমাবেশ করা যাবে না, মসজিদে না গিয়ে বাসায় নামাজ পড়ার। অনেক জায়গায় কিন্তু বাস্তবায়ন ভালভাবে হয়েছে যেমন টোলারবাগ, বাসাবো এবং মাদারীপুর।”
“এসব এলাকায় কিন্তু লকডাউনের ভাল ফল পাওয়া গেছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে কাজ করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে এটে (সংক্রমণ) নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।”
এদিকে দেখা গেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জে সংক্রমণ বেশি হয়েছে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের মধ্যেই। যে কারণে সাধারণ ছুটি কতোটা কার্যকর সেটি নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন।
যেহেতু একমাসের বেশি সময় ধরে সারাদেশের গণপরিবহন, অফিস আদালত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনীতি সচল করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে এসেছে।
লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কার্যকর লকডাউনের সফলতা যেমন আছে তেমনি এর অর্থনৈতিক ক্ষতিও বহুমাত্রিক।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হয়েছিল এ মাসে বিশ্বব্যাংক এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে প্রবৃদ্ধি কমে ২-৩ শতাংশ হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে এই মহামারি যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তাহলে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হবে যা বাংলাদেশে -৫.২ পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশে সাধারণ ছুটিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের হিসেবে সাধারণ ছুটির একমাসে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১ লাখ ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা। যা দৈনিক কমপক্ষে ৩৩০০ কোটি টাকা।
তবে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার সেবা খাতে, প্রতিদিনের ক্ষতি হচ্ছে ২০০০ কোটি টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নিজস্ব হিসেবে সারাদেশে ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন তারা ক্ষতির হিসাব করছেন সেটি শিগগিরই জানানো হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির সার্বিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন খাতের জন্য বরাদ্দ এই অর্থ স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে দেয়া হবে।
বিআইডিএস এর নাজনীন আহমেদ বলেন, “সহজ পন্থায় এই ঋণ দ্রুত বিতরণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে যেসকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেননা, তারা অন্তত সেই বেতনটা দিতে সক্ষম হবে।”
তবে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ পর্যাযে লকডাউন তুলে নেয়া ঠিক হবে না বলেও মনে করেন নাজনীন আহমেদ।