সিলেট কারাগারে করোনায় ১ জনের মৃত্যু ৮৬ বন্দি কোয়ারেন্টাইনে, আক্রান্ত ৩
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৫:৪০ অপরাহ্ণসেলিম হাসান কাওছার::
করোনাভাইরাস থেকে বন্দিদের সুরক্ষায় যৌথভাবে কাজ করছে কারা কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেডক্রস (আইসিআরসি)। সারা দেশে ৬৮টি কারাগারের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছেন তারা। এপ্রিল থেকে এ কার্যক্রম শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসে এক বন্দির মৃত্যুর পর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের আরও তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সিলেটে কারাগারে করোনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।আক্রান্তদের মধ্যে দুই কারারক্ষী ও এক কারা-সহকারী রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ মে) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। করোনাভাইরাসে এক বন্দি মারা যাওয়ার পর শনিবার (১৬ মে) সিলেট সিভিল সার্জনের একটি টিম কারাগারের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠায়। গত ১০ মে সিলেট কারাগারে আহমদ হোসেন (৫৫) নামে এক বন্দির করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সারা দেশের সব কারাগারের মধ্যে তিনিই প্রথম শনাক্ত হয়েছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই বন্দি ৫ মার্চ কারান্তরীণ হয়েছিলেন। তার বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ঘড়াই গ্রামে। কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলায় গত ৫ মার্চ তিনি কারাগারে যান।
চলতি মে মাসের শুরুর দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে জ্বর, সর্দি, এরপর কাঁশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। শুরুতে কারাগারের চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসাসেবা দেন। তবে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকায় গত ৮ মে তাকে কারাগার থেকে নেওয়া হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহমদ হোসেনের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকায় ওসমানী কর্তৃপক্ষ তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে গত রোববার (১০ মে) তিনি মারা যান। এ ঘটনার পর মারা যাওয়া বন্দির ওয়ার্ডের ৮৩ জন বন্দিকে লকডাউন করে দেওয়া হয়। এর বাইরে জেলার, কারা চিকিৎসক, কারারক্ষীসহ ২৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।’ করোনা রোগে ওই বন্দির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বন্দি ও তাদের স্বজনরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে সিলেটের কারাগারে গত সপ্তাহে ২৬৮৭ জন বন্দি ছিলেন। এদের মধ্যে ৬৯জন নারী। অনেকে জামিন ও সরকারি আদেশে মুক্তি পেয়েছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক বন্দি মারা যাওযার পর (১৬ মে) সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেট সিভিল সার্জনের একটি টিম ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। আরো ৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৮৬ জন বন্দির নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ওই কারাগারে ৪৫১জন নারী-পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, আহমদ হোসেনের করোনায় আক্রান্ত হওয়া নিয়ে কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ তোলপাড় চলছে। কারাগারে যাতে করোনা না ছড়ায়, সে জন্য গত মার্চ মাস থেকেই নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুরানো কারাগারের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরানো সেই কারাকারে বর্তমানে ৫০জন (কয়েদি) বন্দি রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ৩৮জন কারারক্ষী। তাদের সুরক্ষার জন্যও সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতো বন্দিদের ইফতার ও সেহরি করানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে নতুন বন্দিকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখার পর পুরানো বন্দির সাথে রাখা হচ্ছে। কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন কোনো বন্দির মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
এছাড়া গত এপ্রিল থেকে কারাগারে বন্দিদের সাথে স্বজনদের সরাসরি সাক্ষাৎ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বজনদের সাথে বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের বিশেষ ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। সপ্তাহে একদিন একজন বন্দি ৫ মিনিট তার স্বজনদের সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের কথাবার্তা পুরোপুরি মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে কারাগারে থাকা জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর ও চাঁদাবাজির মামলায় আসামিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য নয়।
কারা কর্মকর্তারা আরো জানান, কারাগারের কর্মকর্তা, কর্মচারী, কারারক্ষী সবার জন্য মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। বাইরে থেকে কারাগারে ঢুকতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত-মুখ ধুতে হচ্ছে। জুতার মাধ্যমে যাতে ভাইরাস ভেতরে ঢুকতে না পারে, সেজন্য ভেতরে ঢোকার সময় জীবাণুনাশক পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। এছাড়াও গেল ২২ মার্চ থেকে কারাগারের বন্দিদের আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মুজিবুর রহমানের সাথে আলাপ হলে তিনি সবুজ সিলেটকে জানান, প্রায় এক মাস থেকে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন সাধারণ বন্দিরা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের এই জেলে করোনা আক্রান্ত একজন বন্দি মারা যাওয়ার পর কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিলের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বন্দিদের সুরক্ষিত রাখতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুরনো কারাগারের বন্দিরাও নিরাপদে আছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক বন্দি মারা যাওয়ার পর (১৬ মে) সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেট সিভিল সার্জনের একটি টিম ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। আরো ৮জনের পাঠানো হবে। তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৮৬ জন বন্দিদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। আর হবেও না। কেন্দ্রীয় ওই কারাগারে ৪৫১ জন নারী-পুরুষ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন আইনজীবী জানান, কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৮৬ জন বন্দিদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তাই কারাগারের বন্দিরা কতটুকু সুরক্ষিত আছেন?