জর্জ ফ্লয়ডের মৃত্যু ও আমেরিকার বর্ণবাদী চেহারা

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২০, ৫:৪৪ অপরাহ্ণচৌধুরী জহিরুল ইসলাম ::
মহামারির মৃত্যু এখন আর হৃদপিণ্ড কাঁপায় না। কিন্তু মানুষ নামের অমানুষের হাতে একজন আদম সন্তানের মৃত্যু ভাবায়। আমরা এ কোন সভ্যতার বড়াই করি? ঠান্ডা মাথায় মানুষকে হত্যার অনুমোদন দেয় যারা, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে? এ নিছক দুর্ঘটনা নয়। মহামারির মারণঘাতিও নয়। মানুষের হাতেই মানুষের মৃত্যু! যে বর্ণবাদ আমেরিকার জীবনধারায় বহমান, তারই সর্বশেষ শিকার হলেন ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়ড। মৃত্যুর আগে বারবার তিনি বলছিলেন- “Please”, “I can’t breathe”, and “Don’t kill me”| । প্লিজ আমাকে হত্যা করো না। আমি শ্বাস নিতে পারছি না!
মেনিসোটার মিনিয়াপোলিস শহরে একটি রেস্তোরাঁর বাইরে ফুটপাথ ঘেঁষে জর্জকে হত্যা করা হয় ২৫শে মে সন্ধ্যার কিছু আগে। সামাজিক মিডিয়ায় এই হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এর বিরুদ্ধে আজ সোচ্চার আমেরিকার প্রতিটি শহর-নগরের সর্বস্তরের মানুষ।
৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েডের বিরুদ্ধে অভিযোগ “২০ ডলারের একটি নকল নোট রাখার”। পুলিশের ভাষ্য-প্রথমত জর্জ তার গাড়ি থেকে নামতে চায়নি। দ্বিতীয়ত পুলিশের গাড়িতে উঠতে চায়নি! সে কারণে একটি মানুষের ঘাড়ে হাঁটু ঠেকিয়ে হত্যা করতে হবে? পুলিশ তার ঘাড়ে প্রায় ৯ মিনিট হাঁটু গেড়ে বসে থাকে। এর ৩ মিনিটের মধ্যে জর্জের মৃত্যু ঘটে।
হত্যাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হয়েছে। সহযোগী বাকি ৩ জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হবে। কিন্তু সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্তত অর্ধেকে। লুটতরাজ এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আজ যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্যের অন্তত ৩৭ নগরীতে কারফিউ চলছে।
মহামারির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে একদিন। কিন্তু বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই শেষ হবে কবে? সুখের বিষয়-সাদা, কালো, লেটিনো আজ সবাই এক হয়ে রাস্তায় নেমেছে। দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুতে এমনিতে মানুষের মনে চরম হতাশা, তার উপর পুলিশের বর্বরতা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
মানুষের প্রতিবাদ গিয়ে ঠেকেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্ণবাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনের বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জর্জের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে যথাযথ বিচারের আশ্বাস দিলেও মানুষের তাতে আস্থা নেই বলেই মনে হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের সামনে গত কয়েকদিন ধরে টানা প্রতিবাদই এর প্রমাণ।
এদিকে গতকাল প্রেসিডেন্ট এক টুইট বার্তায় অঘঞওঋঅ নামের একটি সংগঠনকে “জঙ্গি সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্তির হুমকি দিয়েছেন। তার মতে, এটি “অতি বাম” সংগঠন। বাস্তবে এটি একটি দেশীয় এন্টি ফ্যাসিস্ট সংগঠন।
কোনো দেশীয় সংগঠনকে “জঙ্গি” আখ্যা দিয়ে হুমকি দেওয়া সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন। যে কোনো নাগরিক অধিকার আন্দোলনকে জঙ্গি তৎপরতার তূল্য মনে করাটা যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অপরাধ।
‘এন্টিফা’ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটের প্রতিক্রিয়ায় নিউইয়র্ক টাইমস আজ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। তাতে সংগঠনটির ইতিহাস এবং কার্যক্রম তুলে ধরেছে।
আন্দোলন কখন শুরু হয়েছিল?
“অ্যান্টিফা” শব্দটি প্রথম ১৯৪৪ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি একটি জার্মান বাক্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছিল। যা নাজিবাদের বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রে এই আন্দোলন কার্যত শুরু হয়। তারা বিশ্বাস করেছিলেন যে হুমকির মুখোমুখি তথাকথিত ওয়েল-ডান দ্বারা ডাকা হয়েছিল, মি. ব্রা বলেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এর বিশাল একটি ফলোয়ার্স রয়েছে। যারা সংবাদ নিবন্ধ শেয়ার করে এবং কখনও কখনও ডক্স করার চেষ্টা করে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের একাধিক ঘটনা ঘটলে এন্টিফার পালে বাতাস লাগে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা ডানপন্থি লেখকদের একটি সমাবেশ বাতিল করতে বাধ্য করে। শার্লটভিলে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের মুখামুখি এরাও সাহসী ভূমিকা রাখে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সারা বিশ্বে। বর্ণবাদ ফ্যাসিবাদেরই আরেক রূপ।
লেখক : সাংবাদিক, নিউইয়র্ক প্রবাসী।