বিয়ানীবাজারে এবার শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার বাড়বে

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ৯:২৪ অপরাহ্ণমিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার :
করোনার কারণে ১১ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে ক্লাসে আগের মতো শিক্ষার্থী হয়তো দেখা যাবে না। আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার বিয়ানীবাজার উপজেলায় ঝরে পড়ার হার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দরিদ্র ও অতি দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের যারা করোনাকালে কাজে যুক্ত হয়েছে তাদের অনেকেই আর স্কুলে ফিরবে না। আবার অনেকে স্কুলে ভর্তি হলেও ক্লাসে অনুপস্থিতির হারও বাড়বে বলে জানান কবি ফজলুল হক।
তথ্য অনুযায়ী, বিয়ানীবাজার উপলোয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে গত বছরের তুলনায় এ বছর এখনো এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এমনকি শিক্ষকরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছেন না। বিশেষ করে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে ভর্তিতে কোনো ধরনের টাকা নেওয়া হয় না, সেখানেও ভর্তির হার ব্যাপকভাবে কমেছে।
জানা যায়, গত কয়েকবছর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ক্রমেই কমতে থাকে। চলতি ২০২১ সালে এই ঝরে পড়ার হার অনেক বাড়বে বলেই নিশ্চিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ঝরে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ দারিদ্র্যতা ও পারিবারিক অভাব গোছাতে কাজে যোগদান। করোনার কারণে বিয়ানীবাজার উপজেলার অনেক নি¤œবিত্ত পরিবারে দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেড়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, ‘করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অনেক পরিবারেই দারিদ্র্য বেড়েছে। অনেকেই শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে। স্কুল খোলার পর সব শিশুকে ফিরিয়ে আনতে একটি অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া সরকারের একটা প্রণোদনা দেওয়া দরকার। সেটা হতে পারে মিড ডে মিল বা দুপুরের গরম খাবার। এ ছাড়া পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য এক্সট্রা ক্লাসেরও ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুলগুলোতে সার্বিক তদারকিও বাড়াতে হবে।’
করোনায় পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া শহরাঞ্চলের নামি-দামি স্কুলগুলো নিজেরাই জুম, গুগলসহ নানা মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় অনেক দরিদ্র পরিবারে টেলিভিশন না থাকা, ডিভাইসের অভাব, ইন্টারনেটের উচ্চ দাম ও দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণেও অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারেনি। ফলে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা গত বছরের পুরোটাই ছিল পড়ালেখার বাইরে। এতে শিক্ষায় বড় বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি এডভোকেট মো. আবুল কাশেম।
করোনাকালে বিয়ানীবাজারের কিন্ডারগার্টেনগুলো সবচেয়ে বেশি দুরবস্থায় রয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনগুলোতে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। পৌরশহরের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসানকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়নি। তার বাবা দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাস অয় না, আবার স্কুলে ভর্তি অইয়া লাভ কি। যহন ক্লাস অইবে তখন ভর্তি করামু পোলারে।’ বিয়ানীবাজার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ বলেন, ‘করোনায় স্কুল বন্ধ, তাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য দরিদ্র শ্রেণির অভিভাবকদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তি করানো হচ্ছে। মূলত করোনার কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।’
বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কান্তি তালুকদার বলেন, এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে গতবারের চেয়ে ৩০ জন কম। অন্যান্য শ্রেণীতেও একই অবস্থা। তার ধারণা, সার্বিক মিলিয়ে ১০ভাগ শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে। উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৭০ জন কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তার এলাকায় এবার কমপক্ষে ৫ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে। অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে এখন ততটা আগ্রহী নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।