কমলগঞ্জে শীতে কাবু চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:১০ অপরাহ্ণজয়নাল আবেদীন,কমলগঞ্জ :::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বভিন্ন বাগানের চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ নি¤œ আয়ের লোকজন গরম কাপড়ের অভাবে দিনাতিপাত করছেন খুবই কষ্টে। শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগ এবং বয়সী লোকদের মৃত্যুহারও বেড়ে গেছে। গাছ গাছালি ও সবুজে ঘেরা থাকায় সাধারণত চা বাগান সমুহে শীত, মৃদু বাতাস ও কূয়াশাটুকুও কিছুটা বেশি থাকে। ফলে ঘন কূয়াশা, তীব্র শীত ও মৃদু বাতাসে কাবু হয়ে পড়ছেন। গত সোমবার ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সর্বনিম্ম সাড়ে ৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা ছিল।
উপজেলার কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডায় চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলেছে। বিশেষত: শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ঠান্ডায় সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ঠ ও নিউমোনিয়া রোগে ভূগছেন। হাসপাতাল সমুহেও চা বাগানের এসব রোগীর সংখ্যা বেশি। নি¤œ আয়ের লোকদের গরম কাপড় কেনা সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারনে এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়খুঁটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত শরীর গরম রাখছেন।
তবে কর্মজীবি নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা ভোরে নাস্তা সেরেই কূয়াশার মধ্যেই কাজে চলে যাচ্ছেন। কূয়াশার কারনে সেকশনে চা গাছ ভেজা থাকায় এর মধ্যেও তাদের কাজ করতে হয়। অনেকে চা গাছের কূয়াশার পানিতে ভিজতে হয়। রোগব্যাধী ও ঠান্ডার কারণে সম্প্রতি সময়ে উপজেলার আলীনগর, চাম্পরায়, পাত্রখোলা, মৃর্ত্তিঙ্গা, শমশেরনগর, দেওছড়া, কানিহাটি, কুরমাসহ বিভিন্ন চা বাগানে বয়সী বেশ কিছু লোকের মৃত্যু হয়েছে। গরম কাপড়ের অভাব ও ঠান্ডায় বয়সী লোকদের মৃত্যুহার বেড়ে গেছে বলে চা শ্রমিকরা দাবি করছেন।
চা শ্রমিকদের চিকিৎসায় ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর চা বাগানে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রমতে চা শ্রমিক পরিবার সদস্যরা শীতে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, গলাব্যাথা, ডায়রিয়া ও আমাশয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সর্দি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ আগে একজনের মৃত্যুও হয়েছে। তবে হাসপাতালের কোন চিকিৎসক সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন।
ইউপি সদস্য ও চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, চা শ্রমিক সংঘের নেতা রাজদেও কৈরী, নারী চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানু বলেন, শীত আসার পর চা বাগানের বয়সী লোকদের মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিনের মধ্যে আলীনগর চা বাগানের রাম বরশ শুক্লবৈদ্য, রাধা রবিদাস, দেওছড়া চা বাগানের রণছত্রী, কানিহাটি চা বাগানের মুকদা মৃধাসহ বয়স্ক অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। সবগুলো চা বাগানে একই অবস্থা। তারা আরও বলেন, মাত্র ১শ’ ২০ টাকা মজুরি। আর জিনিসপত্রের দামও খুব বেশি। আমরা চা শ্রমিকরা খাইবো কি আর কাপড় চোপড় কিনবোই বা কি? তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন বলে দাবি করেন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অধিদপ্তর এর আনিছুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ তাপমাত্রা ছিল সাড়ে ৬ ডিগ্রী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত প্রায় ৭ হাজার কম্বল দরিদ্র লোকদের মধ্যে ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম, মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চা বাগানে প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। তারপর ক্যামেলিয়া হাসপাতাল আছে। এরপরও উপজেলা হাসপাতালে চা বাগানের ঠান্ডায় আক্রান্ত লোকদেরও আসতে দেখা যায়।