কমলগঞ্জে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ইটভাটা !

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৭:৩৯ অপরাহ্ণ ক্ষতিগ্রস্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ॥ পুড়ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি
জয়নাল আবেদীন,কমলগঞ্জ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যালয়ের আঙিনায় ইটভাটা। ক্ষতিগ্রস্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ও ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা, হাটবাজার ও কৃষিজমির উপর গড়ে উঠেছে এসব ইটের ভাটা। ছড়িয়ে পড়া কালো ধোঁয়ার বিষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ স্থানীয়রা পরিবেশ বিপর্যয়ের সন্মুখীন হচ্ছেন।
সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মুন্সীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়, সাজেদা বারি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও বেগম জেবুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। শ্রীমঙ্গল পৌর মেয়র মহসিন মিয়া জনপ্রতিনিধি হয়েও জালালিয়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘মেসার্স মহসিন ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা। এখানে ভবন পর্যন্ত ইটভাটার ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্যালয় সীমানার তিন পাশের আঙ্গিনায় কৃষিজমির জমির উপর বিশাল ইটভাটায় শারীরিক, মানসিক ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি গুণছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাঘাত হওয়ায় বেগম জেবুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানালেও অদৃশ্য কারণে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি প্রশাসন।
মুন্সীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাজেদা বারি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও মুন্সীবাজার বাজারের পার্শ্ববর্তী কৃষিজমির উপর রয়েছে বিশালা আরো ১১টি ইটভাটা। বিদ্যালয় আঙিনায় ইটভাটায় প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও হাটবাজার, লোকালয়ের কয়েক হাজার বাসিন্দা প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসে ইটভাটার ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
ইট পুড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাহাড়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং লোকালয় থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরীর আইনগত নিষেধ থাকলেও কৃষিজমি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বনাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে এসব ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। বিনষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি।
জমির উর্বর মাটি ও গাছ গাছালি এসব ইটের ভাটায় চলে যাওয়ায় ফসল ফলানো কৃষি জমির উর্বরাশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমির উর্বর মাটি দিয়ে এসব ইটভাটায় তৈরী করা হচ্ছে ইট। গ্রামের দরিদ্র কৃষক অর্থাভাবে কেউ কেউ ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। সবকটি ভাটায় পরিবেশ আইন না মেনেই কোনমতে চিমনি লাগিয়ে ইট তৈরির হিড়িক চলছে। ফলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যালয় খোলা থাকলে ইটভাটার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নানা অসুখ লেগেই থাকে। পাশাপাশি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। লেখক আহমদ সিরাজ বলেন, বিষয়টি প্রশাসনকে এর আগেও জানানো হয়েছে। গত বছর উপজেলা পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও এই ভাটা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
জেবুনেচ্ছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নার্গিস আক্তার বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এমপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে জানিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। এখন স্কুল বন্ধ তাই হয়তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে স্কুল খুললে সমস্যা দেখা দেবে।
মেসার্স মহসিন ব্রিকসের ব্যবস্থাপক পরিতোশ দেব বলেন, স্কুলের জায়গায় ইটভাটার কোনো কার্যক্রম হচ্ছে না। এই ইটভাটা ২২ বছর আগের। এসময় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়নি। এখন ভাটাটি কী করবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা লোকালয়ের পাশে ইটভাটার ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, এলার্জি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্র্মকতা সাইফুল ইসলাম তালকুদার বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা সভায় উঠেছে। এরপরও ইটভাটার বিষয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।