বিয়ানীবাজারে করস্বতী খালের সুইচ গেটে বিরাণভূমি ৩ লক্ষ হেক্টর ফসলি জমি
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৯:১৬ অপরাহ্ণমিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে :
করস্বতী খাল ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থলে নির্মিত সুইচগেট এখন লক্ষাধিক মানুষের অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এই সুইচগেটের কারণে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩৫টি গ্রামের মানুষকে কৃষিকাজে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের দাবী, দ্রুত এই সুইচগেট বাতিল করে কৃষি আবাদ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের করস্বতী খাল ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থলে নির্মিত অপরিকল্পিত এই সুইচগেইট এখন কৃষি আবাদের প্রধান অন্তরায়। প্রায় ১২ বছর আগে নির্মিত এই গেইটের কারণে আবাদি জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। পানি শূণ্যতার কারণে এতদঞ্চলের কৃষি আবাদ বন্ধ হওয়ার পথে। তিন ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ৩ লক্ষ হেক্টর ফসলি জমি বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর, চারখাই ও শেওলা ইউনিয়নের কৃষকরা এতদঞ্চলের হাওরাঞ্চল ও কৃষি জমিতে আবাদ করে থাকেন। উপজেলার শস্য আবাদ মূলত: এ অঞ্চলের কৃষকদের উপর নির্ভরশীল।
সূত্র জানায়, কুশিয়ারা নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী কুড়ারবাজার এলাকার মানুষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সড়কের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে এই সুইচগেট নির্মাণ করা হয়। যা পানির প্রবাহ ধরে রাখতে কোন কাজে আসছেনা। এছাড়া ঝরাবিল, পদ্মবিল, বুড়িবিল, দুবাগবিল, সদাখাল, মেঘারখাল, মাটিখালা, চুন্নিবিলসহ অন্যান্য জলাভূমিতে দেশীয় মাছের আকাল পড়েছে । মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হাবিব আহমদ দত্তচৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত সুইচগেটের কারণে বন্যার মৌসুমে কুশিয়ারার পানি করস্বতী খাল দিয়ে প্রবাহমান না হওয়ায় খালটি পলিভরাট হয়ে পড়েছে। আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, সুইচগেটটি না সরালে এতদঞ্চলের কৃষকদের না খেয়ে মরতে হবে।
আওয়ামীলীগ নেতা আফছার খান সাদেক জানান, সুইচগেটটি সরিয়ে নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। পুরো বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিতভাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী মাহবুব বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে পত্র প্রেরণ করা হবে।
জানা গেছে, সরকারিভাবে নকশায় কবস্বতী খালে নামোল্লেখ বা চিত্র থাকার পরও পূর্বে কখনো খনন না করায় সৃষ্টি হতো জলাবদ্ধতা। এতে চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়তো হতো সেখানকার কৃষকদের। আর তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে ও ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে দৌড়ঝাপ শুরু করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ১ কিলোমিটার পর্যন্ত পুনঃখননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্থি ফিরলেও কৃষিকাজের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সুইচগেট।