কুলাউড়ায় বনবিভাগের লোকজনের উপর খাসিয়াদের সশস্ত্র হামলা : ৩ বনকর্মীসহ আহত ৬
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:০০ অপরাহ্ণথানায় অভিযোগ দায়ের
নাজমুল ইসলাম,কুলাউড়া
কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের গহীন অরণ্য নুনছড়া ও রুশনাবাদ মৌজা এলাকায় বনবিভাগের লোকজনের উপর খাসিয়ারা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
(২০ ফেব্রুয়ারী) শনিবার ভোরে এ হামলায় ৩ বনকর্মীসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। এঘটনায় বনবিভাগ ১১ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ইতিপূর্বে ২ বার খাসিয়ারা একই স্থানে বনবিভাগের উপর হামলা চালায়।
বনবিভাগ ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে নুনছড়া ও রুশনাবাদ মৌজা এলাকায় বনবিভাগ ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুন মাস থেকে পরিকল্পনা করছে। সে লক্ষ্যে একটি নার্সারীর কাজ গত অক্টোবর মাসে শুরু করে। কিন্তু খাসিয়ারা বনভিাগের সেই কার্যক্রম বিনষ্টের লক্ষ্যে এবং উক্ত জমি জবর দখলের লক্ষ্যে নানা ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা শুরু করে। ২৮ অক্টোবর নার্সারীর কাজে প্রথম বাঁধা দেয়। বিষয়টি খাসিয়াদের বাঁধার মূখে বনবিভাগ ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে এবং কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নং ১১৯২ তাং ২৮/১০/২০) করেন। এরপর গত ২৩ নভেম্বর ২য় দফা বনবিভাগের কাজে বাঁধা ও হামলা চালায়। এব্যাপারে বনবিভাগ কুলাউড়া থানায় একটি মামলা (নং ১৬ তাং ২৩/১১/২০) দায়ের করেন।
বনবিভাগ নার্সারীতে ইতোমধ্যে চারা উৎপাদন কাজ শেষ করেছে। উৎপাদিত চারা পলিব্যাগে তোলার কাজ শুরু করে। শনিবার ভোর ৬টায় বনকর্মীরা নার্সারীতে কাজ করার মুহুর্তে নুনছড়া পানপুঞ্জির মন্ত্রী ববরিন খাসিয়া ও সিলভেস্টার তালের নেতৃত্বে অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালায়।
কুলাউড়া রেঞ্জার রেজাউল হক জানান, খাসিয়ারা তীরধনুক, গুলতি (স্থানীয় ভাষায় গুলইল) ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলায় বনপ্রহরী আব্দুল হালিম, বনমালী জিয়াউর রহমান, প্রহরী প্রতাপ চন্দ্র দেব, উপকারভোগী ও শ্রমিক ইছাক আলী, এলাইচ মিয়া ও ফজলু মিয়া আহত হন। আহতদের মধ্যে ইছাক আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রেঞ্জার আরও জানান, বনকর্মী ও উপকার ভোগীরা আহত হওয়া ছাড়াও খাসিয়াদের হামলায় চারাসহ ১০ হাজার পলি ব্যাগ ও নার্সারী জন্য নির্মিত শেডঘর ভাঙচোর করেছে। এতে বনবিভাগের ২ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এঘটনায় নলডরী বিট কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বাদি হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে বেলা ৪টায় বনবিভাগের লোকজন প্রেসক্লাব কুলাউড়ায় এই ঘটনার বিস্তারিত ঘটনার বর্নণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুলাউড়া রেঞ্জার রেজাউল হক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, খাসিয়ারা একতরফাভাবে বনবিভাগের লোকজনের উপর হামলা করেছে। বার বার হামলার ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা বেপরোয়্ াহয়ে উঠেছে। তাদের কারণে সরকারি কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। হামলার পরও ঘটনাস্থলে বনবিভাগের লোকজন রয়েছে। ফলে তাদের উপরও ফের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। বনবিভাগের লোকজন রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। এভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান।
নুনছড়া পানপুঞ্জির মন্ত্রী ববরিন খাসিয়ার সাথে মোবাইল (নং ০১৭১৬১১২১৫২) ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় জানান, বনবিভাগ একটি মামরা দায়ের করেছে। তবে খাসিয়ারা তাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাদেরও ৬-৭ জন আহত হয়েছে। তারা চিকিৎসা নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বনবিভাগের লোকজনের উপর হামলার ঘটনা জেনে আহতদের দেখতে কুলাউড়া হাসপাতালে গিয়েছি। বনবিভাগকে বলেছি থানায় মামলা করার জন্য। বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই ঝামেলা চলছে। রোববার ২১ ফেব্রুয়ারী খাসিয়া ও বনবিভাগকে নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিলো। কিন্তু এর আগেই খাসিয়াদের হামলা দূ:খজনক।