জামালগঞ্জে ছাদ কৃষিতে সফল গৃহবধূ মুন্নি
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৭:২৭ অপরাহ্ণমো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি ::
কোলাহল নগরীর দূষণীয় আবহাওয়ায় সবাই চায় একটু সবুজ সতেজতা। সে লক্ষে এখন বাড়ির ছাদে সবাই বিভিন্ন ফুল, ফলসহ ঔষধী গাছের ছারা টবে চাষ করে থাকেন। বিষ ও ফরমালিনমুক্ত সবজি ও ফলমূলের যুগে যদি বলি বাড়ির ছাদে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে কেউ সফলতার মুখ দেখেছেন তখন একটু ব্যতিক্রমী বলা চলে। তেমনি ব্যতিক্রমী এক গৃহবধূ মিতালী রায় মুন্নী। সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে ৫ শতক জমির ওপর নির্মিত ভবনের ছাদে শুরু করেছেন সৌখিন গৃহবধূর মুন্নির সবুজ বিপ্লব।
তিনি নানা প্রজাতির ফল, ঔষধী ও সবজি গাছ লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি সবুজ উদ্যান। তার এই উদ্যোগে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে ছাদে চাষ শুরু করার স্বপ্ন দেখছেন। উপজেলা ফেনারবাঁক ইউপি সচিব অজিত কুমার রায়ের স্ত্রী মিতালী রায় মুন্নি। এক সন্তানের জননী মুন্নির ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। তাই তিনি তাঁর বাড়ির ছাদেই নিজের পরিচর্যায় গড়ে তুলেছেন সবজি ও ফলের বাগান। আম, লিচু, জামরুল, কিউজাই আম, থাই বারোমাসী আম, কাটিমন, ইন্ডিয়ান পুকলা, ব্ল্যাক স্টোন, মেঙ্গু বারী-১১, ব্রুনাই কিং, সূর্য ডিম, কাঁচা মিষ্টি আম, স্ট্রবেরী, পেঁয়ারাকলি, মাধবী পেঁয়ারা, রামভুটান, অগ্নিস্বর কলা, এলাচি, চায়না কমলা, ছাতকী কমলা, ব্ল্যাকবেরী, বাড়ি-৪, মালটা, ড্রাগন, সফেদা, আমড়া, বেদানা ও ৬ প্রকারের তুলসী গাছ থেকে শুরু করে হরেক রকমের দেশী বিদেশী ফল ও সবজি আর বিভিন্ন ফুলের বাগান রয়েছে তার ছাদের সবুজ বাগানে। জামালগঞ্জে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত এসব ফল ও সবজি উৎপাদনে মুন্নি রীতিমতো সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
গৃহবধূ মুন্নি বলেন, ফরমালিন রোধে নগর জীবনে প্রতিটি নারীই এভাবে বাড়ির ছাদে সবুজ বাগান তৈরি করে নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারেন। এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা হবে তেমনি প্রতিটি নরনারীর কৃষির প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তার মতে শহরে কিংবা নগরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বড় বড় ভবনের কারণে সবুজ গাছগাছালী অনেকটা কমে গেছে। এ অবস্থায় মানুষ তাদের বাড়ির ছাদ ফেলে না রেখে যদি আমার মতো সবজি ও ফলমূলের গাছ লাগায় তাহলে একদিকে পরিবেশ যেমন রক্ষা হবে তেমনি ফরমালিনমুক্ত সবজি ও ফল পাওয়া যাবে।
মুন্নির এই সবুজ বিপ্লবে তার পরিবারের সদস্য খুশি। অবসর সময়ে পরিবারের সদস্যরাও বাগান পরিচর্যায় সময় কাটান। স্বামী অজিত কুমার রায় স্ত্রীর এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ও সন্তান সুষ্মিতার গড়ে তোলা এই সবুজ বাগানে আসলে মনটা ভরে যায়। উপজেলার প্রতিটি মানুষের উচিত তাদের বাসাবাড়ির ছাদে এ ধরনের সবুজ বাগান গড়ে তোলা। নতুন পদ্ধতির এই ছাদ বাগান দেখতে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বপরিবারে ছুটে আসেন মুন্নির এই ছাদ বাগানে। চাষপদ্ধতি আর ফলন দেখে সবাই খুশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, ছাদ কৃষিতে বর্তমানে অনেকেই নিজেদের নিয়োজিত করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জায়গাও যাতে পতিত না থাকে, এই স্লোগানের সাথে সুর মিলিয়ে অনেকে নিজেদের ছাদে বিভিন্ন ফলফুল ও সবজি বাগান গড়ে তুলেছে। এতে করে নিজেদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি দিয়ে যেমন পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে তেমনি মানুষের মননের নান্দনিক চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। জামালগঞ্জ উপজেলার অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রায় প্রতিটি ছাদে ছাদ কৃষি চালু করার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।