জামালগঞ্জে শ্রমিক সঙ্কটে জনপ্রিয় হচ্ছে কম্পাইন্ড হারবেস্টার
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২১, ৯:০৯ অপরাহ্ণমো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি :::
জামালগঞ্জে এবার বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সঙ্কট ও অতিরিক্ত শ্রমিক মুজুরী কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিক সঙ্কট ও অতিরিক্ত শ্রমিক মুজুরীর কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আধুনিক কৃষিযন্ত্র কম্পাইন্ড হারবেস্টার। এই মেশিন দিয়ে একজন শ্রমিক দিনে ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমির ধান কাটতে পারে এবং মাড়াই ঝারাই ও বস্তা ভর্তিকরণ করা যায়। পাশাপাশি এ মেশিনে প্রতি বিঘা ধান কাটতে কৃষকের খরচ হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতেও সক্ষম এই আধুনিক যন্ত্র।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও করোনার কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় ধান কাটার শ্রমিকরা সঠিক সময়ে আসতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যার কারণে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন কৃষকেরা। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম হওয়ায় কম্পাইন্ড হারবেস্টার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমের ২৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। উপজেলায় ৯৭ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের ধান কাটা পুরোদমে শুরু হবে। একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মণ ধান কাটতে পারে। সে জন্য তাকে মুজুরি দিতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান হয় সর্বোচ্চ ২৫ মণ। এই ধান কাটতে শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ১০ থেকে ১২ জন। এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা। চাষ, বীজ, সার খরচের সঙ্গে কাটা-মাড়াই ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ যোগ করলে যে খরচ হয় তাতে ধানের বাজারমূল্য মিলালে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন না।
কৃষক নিহার রঞ্জন দত্ত সহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, ক্রমাগত শ্রমিক সঙ্কট ও অতিরিক্ত মুজুরীর কারণে চাষাবাদ যান্ত্রীকীকরণের দিকে কৃষকরা ধাবিত হচ্ছে। ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা-মাড়াই ঝাড়াই ও বস্তা ভর্তি করা সবই মেশিন দিয়ে করা যায়। ফলে এই মেশিনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের জন্য সরকার উন্নয়ন সহায়তায় কম্পাইন্ড হারবেস্টার ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে কৃষকদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছে। হাওরের ধান সময়মতো কাটতে কম্পাইন্ড হারবেস্টারের বিকল্প নেই। এই অর্থবছরে জামালগঞ্জ উপজেলায় ১০টি কম্পাইন্ড হারবেস্টারের বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং সবগুলোই বর্তমানে ধান কাটায় ব্যবহৃত হবে। যদি কৃষকগণ এই কম্পাইন্ড হারবেস্টারে আগ্রহীন হন তাহলে সময়মতো কম খরচে কৃষকেরা ধান ঘরে তুলতে পারবেন। আমরা আশা করছি জামালগঞ্জে কম্পাইন্ড হারবেস্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, কম্পাইন্ড হারবেস্টার যন্ত্র কৃষকের সুবিধার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে প্রদান করছেন। এই যন্ত্র ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াসহ বস্তাবন্দী এক সাথেই করা যায়। যার কারণে শ্রমিকের প্রয়োজনীয় অনেকটা কমে আসবে।