জামালগঞ্জে করোনায় থমকে গেছে মৃৎশিল্পীদের জীবনমান
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২১, ৯:৫০ অপরাহ্ণমো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
বাংলা নববর্ষ ও পণতীর্থের মেলাসহ শাহ আরেপিনের মেলার আশায় নির্ঘুম ব্যস্ত সময় পার করেন জামালগঞ্জের অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা। তারা বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে আশায় বুক বেঁধেছিল সারা বছরের একটি মাত্র উপলক্ষ বাংলা নববর্ষ। কিন্তু করোনার লকডাউনে বিভিন্ন নববর্ষের অনুষ্ঠান, পণতীর্থের ¯œান ও শাহ আরেপিনের মেলা বন্ধ হওয়ায় থমকে গেছে তাদের সমস্ত আশা ভরসা। কিভাবে চলবে তাদের সংসার, কি করে সারাবছর তাদের সন্তানদের ভরণপোষণ করবে সেই চিন্তায় উপজেলার মৃৎশিল্পীদের থমকে গেছে জীবনমান। বংশানুক্রমে প্রতি বছর বৈশাখী মেলাতে দৃষ্টিনন্দন করতে মৃৎশিল্পীদের নিজ হাতে নিপুণ কারুকার্যে মাটি দিয়ে তৈরি করে থাকেন সাংসারিক ও খেলনা জাতীয় হাড়িপাতিল, কড়াই-থালা, বাটি, ফুলের টব ছাড়াও শিশুদের আনন্দ দিতে নানা রকমের পুতুল, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, মোরগ, খরগুস, হাঁসসহ বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে প্রথম দিন থেকেই লকডাউন ঘোষণায় বৈশাখী মেলা, পণতীর্থ মেলা ও শাহ আরেপিনের মেলার নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছরসহ চলতি বছরে মুখ থুবড়ে পড়েছে তাদের এই ব্যবসা। উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বদরপুর, মশালঘাট, সাচনা গ্রামের পালপাড়ার কয়েকশ’ পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। তারা বিভিন্ন মেলাসহ উৎসবে তাদের মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিশেষ করে বাংলা নববর্ষে জেলার বিভিন্ন মেলায় অধিকাংশ মাটির সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন তারা। তাই পুরুষ মৃৎশিল্পীর পাশাপাশি নারী শিল্পীরাও সমানতালে কাজ করে থাকেন। নারী-পুরুষের শ্রমঘামে অধিকাংশ পরিবারের আয়ের সংস্থার হয়। মেলা উপলক্ষে শিশুদের নানান ধরনের খেলনা তৈরি করে রেখেছিলেন তারা। করোনার কারণে তাদের তৈরি মালামাল বিক্রি করতে না পারায় সারাবছরের জন্য থেমে গেছে তাদের জীবনযাপন।
বদরপুর কুমারপাড়া সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতেই প্রচুর পরিমাণে খেলনা, তৈজসপত্র তৈরি করে কার্টুনে ভর্তি করে রেখেছেন। অনেকে হাড়ি-পাতিল তৈরি করে পুড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তারা জানান, নববর্ষ আসার আগ থেকেই পাইকাররা আসতো তাদের গ্রামে। তৈজসপত্র ও বিভিন্ন ধরনের খেলনা নিয়ে যেতো বিভিন্ন মেলায়। কিন্তু গত বছর এবং এবারও কোন পাইকার আসেনি। তারা পাইকারদের মোবাইল করলে জানায়, এবার করোনার লকডাউন্ডের জন্য কোন মেলা হবে না। তাই আসা হয়নি আমাদের।
বাঙালির কৃষ্টি ও ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের কদর বাড়ে বৈশাখ আসলেই। শুধু মেলার সময়ে কর্মমুখর হয়ে উঠে চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই মৃৎশিল্পের গ্রামগুলো। পহেলা বৈশাখের আগে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও মৃৎশিল্পীরা তাদের হৃদ গৌরব ফিরে পায় এবং মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানান সামগ্রী তৈরিতে। করোনার প্রভাবে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম হতাশায় জীবন কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
বদরপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী ঝুটন চন্দ্র পাল, লিটন চন্দ্র পাল, সতী রানী পাল, প্রমিলা রানী পালসহ অনেকেই জানান, বাপদাদার পেশা ছাড়তে পারি না। তাই সারা বছর অপেক্ষায় থাকি, বৈশাখী মেলাসহ জেলার বিভিন্ন মেলার আশায়। বৈশাখী মেলার বিক্রি দিয়েই সারাবছর পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু গত বছরসহ এ বছর আমাদের সব আশা ভরসা শেষ করে দিয়েছে। আমাদের একমাত্র জীবিকা নির্বাহের পথটি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেল।
তারা আরও জানান, আমাদের একমাত্র পেশা মৃৎশিল্প। আমাদের কোন জমিজমা নেই। তাই আমাদের তৈরিকৃত আসবাবপত্র বিক্রি করতে না পারায় আমরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি আমাদের জীবন বাঁচাতে সরকার থেকে যেন প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, করোনায় মেলা বন্ধ হওয়ায় তাদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে না পারায় তারা মানবেতন জীবন কাটাচ্ছে। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি যেন মৃৎশিল্পীদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক।