গোলাপগঞ্জের বাঘায় লম্পট পুরোহিতকে রক্ষার লক্ষ্যে চলছে নানা ধরণের অপতৎপরতা

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১০:৫৯ অপরাহ্ণগোলাপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোলাপগঞ্জের বাঘায় মন্দিরের পুরোহিত কর্তৃক তরুণী ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়টি নিয়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে জোরালো আলোচনা। এতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বাঘা ইউনিয়নের হিন্দু সমাজ। একজন ধর্মীয় পুরোহিত কর্তৃক তরুণীকে ধর্ষণের অপচেষ্টার বিষয়টি হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলেও একটি অপরাধী চক্র বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়ার লক্ষ্যে নানা ধরণের অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা সহ তদন্তকারী দল সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়।
বাঘায় একটি মন্দিরে পুরোহিতের আসনে বসে টাংগাইল জেলার দেলদোহার থানার সিলিমপুর গ্রামের কালু চৌহান এর পুত্র প্রাণ গবিন্দ দাস বাবাজি ওরফে ফরেস্ট চৌহান (৪৬) একটি অপরাধি চক্র গড়ে তুলেন। ধর্মের নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নারীদেরকে নিয়ে নষ্টামি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। ফরেস্ট চৌহান এর পূর্বে বাঘা ইউনিয়নের দক্ষিণ কান্দিগাঁওয়ে একটি মন্দিরে পুরোহিতের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নারীদের নিয়ে অপকর্ম করতে থাকলে স্থানীয় হিন্দু সমাজ ও এলাকাবাসী তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর সে আস্তানা গাড়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বাঘা কালাকোনা গ্রামে। সেখানে ধর্মীয় উৎসবের নামে গভীর রাত পর্যন্ত চলত নানা ধরণের অনুষ্ঠান। এতে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের উপস্থিতি বেশি থাকত বলে এলাকার অনেকেই জানান। পুরোহিত ফরেস্ট চৌহানের পৃষ্টপোষকতায় এখানে গড়ে ওঠে একটি অপরাধি চক্র। যারা নারীদেরকে নিয়ে ফস্টিনস্টিতে ব্যস্থ থাকতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা দানের কথা বলে তরুণ-তরুণীদের এখানে জড়ো করা হতো। গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হলে এর অভিযোগে পুরোহিত ফরেস্ট চৌহানকে আটক করা হয়। তার অপকর্মের বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে থাকলে শাস্তির দাবীতে সর্বমহলের পক্ষ থেকে জুরালো আওয়াজ ওঠে। অপরদিকে ধর্মীয় গুরু ফরেস্ট চৌহানের অপকর্ম ঢাকতে ও তরুণীর শ্লীলতাহানীর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একটি অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে মাঠে নামে। তারা অপপ্রচার করতে থাকে ধর্মীয় গুরু ফরেস্ট চৌহান ষড়যন্ত্রের শিকার, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে মামলায় আসামী করে জেলে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মন্দিরে তরুণী ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি সর্বমহলে ব্যাপাক ভাবে আলোচিত হতে থাকলে বিষয়টি তদন্তের জন্য গত শনিবার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঞা মোহাম্মদ আসিস বিন হাসান পিপিএম, গোলাপগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (প্রশাসন) হারুনুর রশীদ চৌধুরী সহ তদন্তকারী দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলার বাদী সহ সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তদন্তকারী দল সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা পান বলে অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান।
এদিকে একটি অপরাধী চক্র লম্পট পুরোহিত ফরেস্ট চৌহানকে রক্ষার লক্ষে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। অতীতেও তারা বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি ও উস্কানীতে মদদ দিতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান এখানে পুলিশের কোন হাত নেই। ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে একজন তরুণী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে এরই আলোকে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় পুরোহিত ফরেস্ট চৌহানকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, স্থানীয়দের সাক্ষ্য প্রমাণে ও বাদীর তথ্য মতে ঘটনা সঠিক বলে তিনি জানালেন।