জামালগঞ্জে মাছের বংশবৃদ্ধিতে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে বিল খনন
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ৫:৫১ অপরাহ্ণ
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ :::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণে দেশের জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, আমরা ইতিমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের যত জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল ও ডোবা রয়েছে সেগুলোকে আমরা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই। যাতে করে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬টি বিল খননে প্রায় ৯৪ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই পুনঃখননের ফলে সাড়ে ৫ হেক্টর জলাশয় সংস্কারের আওতায় আসবে এবং শীঘ্রই পরিকল্পিত মাছ চাষের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাওরাঞ্চল এলাকায় প্রতি বছর পাহাড়ী ঢলে মেঘালয় থেকে নেমে আসা পানিতে পলি থাকায় হাওরের অনেক নদীনালা, খালবিল নাব্যতা হারায়। যার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলের অধিকাংশ জলাশয়ে সারাবছর পানি থাকে না। আবার প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্টি কর্মকা-ের কারণে খালবিল, ডোবানালায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও অবাধ বিচরণের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব জলাশয় সংস্কার ও পুনঃখননের মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের আবাসস্থল পুনঃরুদ্ধানের পাশাপাশি জলাশয়ের পরিবেশ উন্নয়নে প্রকল্পটির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
উপজেলার ফেনারবাঁক ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ছয়হারা নদী খননের জন্য ১৯ লাখ ৬ হাজার, একই ইউনিয়নের নলচুল্লী বিল থেকে চানপুরের খাল পর্যন্ত ১৭ লাখ ৯ হাজার ৯০, আবু মুন্সীর ডোবায় ৬ লাখ ১০ হাজার ও মহিষাকুড়ি খালে ১৫ লাখ, বেহেলী ইউনিয়নের বাড়ির লামা বিল থেকে বৌলাই নদী পর্যন্ত ১৯ লাখ ৬৫ হাজার এবং ভীমখালী ইউনিয়নের দিরাই চাতল লম্বা বিলে ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩৯ টাকাসহ মোট ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিরাই চাতল লম্বা বিল কাজ সমাপ্ত না করায় ইজারা পাল্টে অন্য মৎস্যজীবী সমিতিকে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ছয়হারা নদী খনন কাজের দলনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রীকান্ত তালুকদার বলেন, জলাশয় পুনঃখননে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের সেই দাবি পূরণ করেছেন।
বেহেলী বাড়ির লামা বিল ও ছয়হারা নদী সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কাজ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। এ দুটি খনন কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা রানী মোদক বলেন, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৬টি বিল খননের কাজ প্রায় সম্পন্ন। দিরাই চাতল বিলের খনন কাজে পূর্বের ইজারাকৃত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে জামালগঞ্জ সদরের একটি সমিতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শনিবারের মধ্যে বাকি কাজ শুরু করা হবে।
তিনি আরও জানান, ছয়হারা নদী ও বাড়ির লামা বিলের অংশটুকু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে চাষাবাদ করত। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সীমানা নির্ধারণ করে দুই একরেরও বেশি জায়গা উদ্ধার করে খনন করা হয়েছে। সরকারি খাস জলাশয় উদ্ধার হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীরা উপকৃত হবে। এই প্রকল্পে উপজেলার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থার সৃষ্টি দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে ও আয় বৃদ্ধিতে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পরবর্তীতে বরাদ্দ আসলে টারপিন ও গাছ লাগানো হবে।