জামালগঞ্জে হাওরের ধান গোলায় তুলতে পেরে খুশি কৃষক
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২১, ১০:২৪ অপরাহ্ণ
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ ::::
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরের ধান কেটে কৃষকের গোলায় তুলতে পেরে খুশি কৃষকরা। ছিটেফুটে যেটুকু রয়েছে তাও কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। এবারই হাওরের শতভাগ ধান কৃষকের গোলায় উঠছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এই উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২৬৪ কোটি ৫২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এবার ধান উৎপানের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা ছাড়িয়ে গেছে। হাওরের ধান নিয়ে সরকার, কৃষক, প্রশাসন সকলই ছিল উদ্বিগ্ন। করোনা লকডাউনের কারণে বাইরের জেলা থেকে ধান কাটা শ্রমিক আসতে পারবে কি না, ফসলের ষোলোআনা কৃষকের গোলায় উঠবে কি না, আবার আকস্মিক বন্যায় কষ্টার্জিত ধান পানিতে তলিয়ে যাবে কি না, হাওর রক্ষা বাঁধ ঠিকবে কি না, এছাড়া প্রবীণদের ধারণা অনুযায়ী, প্রতি ৩ বছর পরপর আকস্মিক বন্যার রেওয়াজ রয়েছে কৃষকের মাঝে। এমনই সব ভাবনায় সর্বমহল উদ্বিগ্ন ছিল। কারণ হাওরের ধান দেশের উৎপাদনের ২০ ভাগ পূরণ করে। তবে এবার হাওরের ধান কৃষকের গোলায় উঠায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সফলতা পেয়েছে। কারণ হাওরের ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক আনা এবং হাওরের বিভিন্ন এলাকায় ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে কম্মাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন সরবরাহ করায় উপজেলা প্রশাসনের এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ ধান কাটা নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে গেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয় সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিক প্রকল্পের বাজেটের আওতায় উপজেলায় ১৪টি ছোট-বড় হাওরের জন্য গত বছর ছোট-বড় মিলিয়ে ৮টি এবং এ বছর ১৩টি হারভেস্টার এবং ৬টি রিপার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার কারণে দ্রুত হাওরের ধান কাটা সম্ভব হয়েছে।
উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের বড় কৃষক মো. ফজলুল হক জানান, এবার হাওরের সব ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। এ বছরের মতো আর কোন বছর এত শান্তিতে ঘরে তুলতে পারি নাই। ধান কাটার সময় সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক, জেলা প্রশাসক, কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন হাওরে এসে ধান কাটার উৎসবে যোগ দিয়ে কৃষকের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন যেকোন সমস্যায় প্রশাসন আপনাদের সহযোগিতা এগিয়ে আসবে। বিশেষ করে সঠিক সময়ে ধান কাটার মেশিন সরবরাহ করে প্রতিটি হাওরে পৌঁছে দিয়েছে। যে কারণে আমরা অতি দ্রুত ঘরে ধান তুলতে পেরেছি। তবে আমাদের মতো যারা বড় কৃষক তাদের কাছ থেকে যেন ১০-২০ টন ধান খাদ্য গুদামে নেওয়া হয়, সেই জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, হাওরের ধান কাটা নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম। কারণ হাওরের পানি নামতে বিলম্ব হওয়ায় ধানের চারা রোপণে অন্য বছরের তুলনায় এক মাস বেশি সময় লেগেছে। ধানের শিস যখন বের হয় তখন থেকে দিন গুণছিলাম কোনদিন এই ধান ঘরে তুলতে পারব। অনেক রাত গেছে চিন্তা ঘুমাতে পারিনি। তিন বছর আগে বন্যায় ডুবে যাওয়া সেই দিনের কথা মনে পড়ছে। এবার হাওরের ধান কাটার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়ে শ্রমিক এবং ধান কাটার মেশিন ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে দেওয়ার কারণে আমরা দ্রুত ধান কেটে গোলায় তুলতে পেরেছি। গত বছর ধান কাটলেও অতি বৃষ্টির কারণে মাড়াই করতে না পারায় ধানের চারা রঙ কালো হয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম জানান, হাওরবেষ্টিত উপজেলা জামালগঞ্জের বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৭ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাও শতভাগ ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে হিটশকে কিছু জমির ফসল নষ্ট হলেও কৃষকরা তা পোষিয়ে নিতে পারবে। কিছু কিছু টান এলাকায় অন্য জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। এগুলো তাদের মতো করে ঘরে তুলতে পারবে।