গোলাপগঞ্জ থানায় এসে সাংবাদিককে নির্যাতন করলেন এসআই মামুন

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২১, ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণস্টাফ রিপোর্টার :::
বিজ্ঞাপন প্রদানের কথা বলে দৈনিক সবুজ সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার সেলিম হাসান কাওসারকে আপোস হওয়া মামলায় সোমবার (১৭ মে) বিকেলে আটক করে র্যাব-৯। পরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় রাতেই তাকে হস্তান্তর করা হয়।
হস্তান্তরের পর গোলাপগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহারকৃত এসআই মামুনুর রশীদ পুলিশ লাইন থেকে তাঁর ব্যাচম্যান্টদের সঙ্গে নিয়ে এসে গোলাপগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার পাশাপাশি কাওছারকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করেন। থানায় লকাপে থাকা সাংবাদিক কাওছারকে দেখতে যাওয়া সহকর্মীদের কাছে তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা করেন কাওছার। তিনি বলেন এসআই মামুনুর রশীদ তাকে কলম দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। পাশাপাশি তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করাসহ মোবাইল দিয়ে ভিডিও ও তাঁর ছবি তোলেন।
সাংবাদিক কাওছার এসআই মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদানে জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশের সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ করেন। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে এ অভিযোগটি তদন্ত করছে পিবিআই, সিলেট। এছাড়াও কাওসার এসআই মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগও করেন। এসআই মামুনের বিরুদ্ধে কাওছারের দেওয়া অভিযোগই কাল হয়ে দাঁড়ায়। এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য পুলিশ লাইন থেকে থানায় এসে কাওছারের ওপর ক্ষিপ্ত হন এসআই মামুনুর রশীদ।
এসময় গোলাপগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী থানায় অবস্থান করলেও তিনি তাকে কোনো কর্ণপাত করেননি। অসহায় কাওছার থানায় তা মুখ বুঝে সহ্য করেন। দৈনিক সবুজ সিলেট অফিস থেকে তাঁর সহকর্মীরা তাকে দেখতে গেলে তিনি থানায় তাঁর ওপর চলা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কাওছার আরো বলেন, গোলাপগঞ্জের চিহ্নিত রাজাকারদের দোসর, থানার দালাল কথিত এক সাংবাদিক নির্যাতন চলাকালীনসময় থানায় উপস্থিত হয়ে তাঁর সঙ্গে অসধাচারণ করার পাশাপাশি কাওছারকে আরো ভোগতে হবে বলে তিনি হুমকি প্রদান করেন।
সাংবাদিক কাওছার যেসময় নির্যাতনের বর্ণনা করছিলেন তখন থানার ওসি হারুনুর রশিদ থানায় উপস্থিত ছিলেন না।
রাতে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালে ফোন করার জন্য বলেন।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞাপন প্রদানের কথা বলে দৈনিক সবুজ সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার সেলিম হাসান কাওসারকে আপোস হওয়া মামলায় আটক করে র্যাব-৯। সোমবার (১৭ মে) বিকেলে নগরীর উপশহর এবিসি পয়েন্টের ফুলকলি মিষ্টির দোকান থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক কাওসার গোলাপগঞ্জ উপজেলার রনকেলী উত্তর গ্রামের এলাকার মৃত আওলাদ হোসেনের ছেলে।
সাংবাদিকতা করার সুবাদে স্থানীয় জামায়াত শিবিরের মদদপুষ্ট সাংবাদিক নামধারী স্থানীয় দুর্বৃত্তদের সাথে সেলিম হাসান কাওসারের বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা রয়েছে পক্ষে বিপক্ষে।
উপশহর থেকে আটক হওয়ার সময় কাওসারের সাথে থাকা দৈনিক যায়যায়দিনের দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি সুমন আহমদ জানান, উপশহরের একটি টাওয়ারের বিজ্ঞাপন দিতে এক ব্যক্তি ফোন করেন কাওসারকে। ফোন পেয়ে উপশহরের বি ব্লকে টাওয়ারের ঠিকানা দিলে কাওসার ও আমি সেখানে যাই। পরবর্তীতে এবিসি পয়েন্টে যাই আমরা। এ সময় সাদা পোশাকে ২ ব্যক্তি এসে ফুলকলির ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে পর বিনাবাধায় গেলে হাতকড়া পরানো হবে না বলে জানান। পরে তাকে র্যাবের একটি পিকআপভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বিজ্ঞাপনদাতা পরিচয় দিয়ে দৈনিক সবুজ সিলেট অফিসের ফোন করা হয় ০১৩২৩২৫৯৬০৭ নাম্বার থেকে। ফোন রিসিভ করেন দৈনিক সবুজ সিলেটের স্টাফ ফটোগ্রাফার নিজাম উদ্দিন টিপু। এ সময় ফোনদাতা নগরীর উপশহরের একটি টাওয়ারের ফ্ল্যাট বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার জন্য সিলেটের কয়েকটি আঞ্চলিক দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রদানের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এ সময় আঞ্চলিক দৈনিকগুলোর কার্যালয়ে সরাসরি যোগাযোগের পরামর্শ দিলে ফোনদাতা সাংবাদিক সেলিম হাসান কাওসারের পূর্বপরিচিত দাবি করে মোবাইল নাম্বার নেন।
র্যাব-৯ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুসা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, গোলাপগঞ্জ থানার মামলার পরোয়ানার ভিত্তিতে কাওসারকে আটক করা হয়েছে।
গোলাপগঞ্জ থানার এসআই জাহাঙ্গীর বলেন, থানায় কাওসারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় পরোয়ানা ও অপর মামলায় কাওসার পলাতক ছিলেন।
সাংবাদিক কাওসারের ভাই মাহবুব হোসেন সবুজ সিলেটকে জানান, গোলাপগঞ্জ থানায় কাওসারের বিরুদ্ধে যে দুটি সাজানো মামলা রয়েছে, তা অনেক আগেই আপোস হয়েছে। পুলিশের সিকিউরিটি সেলে অভিযোগের বিষয়ে আপোসের জন্য এসআই মামুন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগেও চেকপোস্টে মামুনের সাথে কাওসারের দেখা হয়। এ সময় মামুন সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কাওসার পলাতক হলে ওই সময়েই মামুন গ্রেফতার করতে পারতেন। কিন্তু আপোস হওয়া মামলাগুলো র্যাবের কাছে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে কাওসারকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। এসআই মামুনের অপকর্ম নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। যা থেকে মামুনের ধারণা কাওসার এ সকল সংবাদের নেপথ্যে কাওসারের হাত ছিল। এ থেকে এসআই মামুন ক্ষোভ থেকে তার এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় কাওসারকে উপশহর থেকে আটক করায়।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। পরে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।
কাওছারের ভাই মাহবুব সর্বশেষ জানান, ওসি হারুনুর রশিদ ও এসআই মামুনের চক্রান্তে অন্য সাজানো মামলায় কাওছারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের কোনো ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।