আপোষ হওয়া মামলায় কারাগারে সাংবাদিক কাওসার : থানায় গিয়ে নির্যাতন করেন প্রত্যাহারকৃত এসআই মামুন
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২১, ১১:৫৯ অপরাহ্ণস্টাফ রিপোর্টার :::
বিজ্ঞাপন প্রদানের কথা বলে নগরীর উপশহর থেকে আটক করা দৈনিক সবুজ সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার সেলিম হাসান কাওসারকে আপোস হওয়া মামলার এজাহারনামীয় আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গত সোমবার বিকেলে সিলেট নগরীর উপশহর থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৯। পরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় রাতেই হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, হস্তান্তরের পর গোলাপগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহারকৃত এসআই মামুনুর রশীদ পুলিশ লাইন থেকে গোলাপগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে কাওছারকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় তিনি পুরনো মামলা সম্পর্কে ও তাকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করেন ইন্সপেক্টর অপারেশন সুমন চন্দ্র সরকারের সামনে। থানায় অবস্থানকালে কাওছারকে দেখতে যাওয়া সহকর্মীদের কাছে তিনি এই অভিযোগ করেন। কাওসার এসময় আরও বলেন, এসআই মামুনুর রশীদ তাকে কলম দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। পাশাপাশি তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করাসহ মোবাইল দিয়ে ভিডিও ও তাঁর ছবি তোলেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে গোলাপগঞ্জ থানার একটি মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এর আগে র্যাব ৯ গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কাওসারকে গোলপগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে আটক করার দাবি করা হয়। এএসপি ওবাইন, এএসপি আফসান আল আলম এবং এএসপি সৌমেন মজুমদারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে কাওসারকে আটক করা হয়। পরে সবুজ সিলেটের পক্ষ থেকে র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি ওবাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপশহর থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানান।
কাওসারের স্বজনরা জানান, সাংবাদিক কাওছার এসআই মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদানে জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশের সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ করেন। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে এ অভিযোগটি তদন্ত করছে পিবিআই, সিলেট। এছাড়াও কাওসার এসআই মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগও করেন। এসআই মামুনের বিরুদ্ধে কাওছারের দেওয়া অভিযোগই কাল হয়ে দাঁড়ায়। এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য পুলিশ লাইন থেকে থানায় এসে কাওছারের ওপর ক্ষিপ্ত হন এসআই মামুনুর রশীদ।
এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, কাওছারকে আমরা গ্রেফতার করিনি, করেছে র্যাব। এরপর তাকে গোলাপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করার পর দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় এস আই মামুনুর রশীদ ও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি কাওছারের সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন। তবে এসআই মামুনের কাছে কাওসারের কোন মামলা নেই বলে জানা যায়। এমন অবস্থায় এসআই মামুন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন কি না একজন বহিরাগত পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি গোলাপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ।
প্রত্যাহার হওয়া এসআই মামুনুর রশীদ ডিউটি অফিসারের কক্ষে কাওসারের সাথে কথা বলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাংবাদিক কাওসারকে র্যাব হস্তান্তরের পর থানায় ছিলাম। এ সময় ডিউটি অফিসারের কক্ষে থানার সিনিয়র অফিসারের সাথে যাই। আমি কাওসারকে বলি আপনার এ মামলা আপোস হয়ে গেছে। আদালতে আপোসনামা দাখিল করলে দ্রুত জামিন হয়ে যাবে। এর বেশি কোনো কথা হয় নি। কোনো ধরণের কলম দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা হয় নি।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞাপন প্রদানের কথা বলে দৈনিক সবুজ সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার সেলিম হাসান কাওসারকে আপোস হওয়া মামলায় আটক করে র্যাব-৯। সোমবার (১৭ মে) বিকেলে নগরীর উপশহর এবিসি পয়েন্টের ফুলকলি মিষ্টির দোকান থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক কাওসার গোলাপগঞ্জ উপজেলার রনকেলী উত্তর গ্রামের এলাকার মৃত আওলাদ হোসেনের ছেলে।
সাংবাদিকতা করার সুবাদে স্থানীয় জামায়াত শিবিরের মদদপুষ্ট সাংবাদিক নামধারী স্থানীয় দুর্বৃত্তদের সাথে সেলিম হাসান কাওসারের বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা রয়েছে পক্ষে বিপক্ষে।
উপশহর থেকে আটক হওয়ার সময় কাওসারের সাথে থাকা দৈনিক যায়যায়দিনের দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি সুমন আহমদ জানান, উপশহরের একটি টাওয়ারের বিজ্ঞাপন দিতে এক ব্যক্তি ফোন করেন কাওসারকে। ফোন পেয়ে উপশহরের বি ব্লকে টাওয়ারের ঠিকানা দিলে কাওসার ও আমি সেখানে যাই। পরবর্তীতে এবিসি পয়েন্টে যাই আমরা। এ সময় সাদা পোশাকে ২ ব্যক্তি এসে ফুলকলির ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে পর বিনাবাধায় গেলে হাতকড়া পরানো হবে না বলে জানান। পরে তাকে র্যাবের একটি পিকআপভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বিজ্ঞাপনদাতা পরিচয় দিয়ে দৈনিক সবুজ সিলেট অফিসের ফোন করা হয় ০১৩২৩২৫৯৬০৭ নাম্বার থেকে। ফোন রিসিভ করেন দৈনিক সবুজ সিলেটের স্টাফ ফটোগ্রাফার নিজাম উদ্দিন টিপু। এ সময় ফোনদাতা নগরীর উপশহরের একটি টাওয়ারের ফ্ল্যাট বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার জন্য সিলেটের কয়েকটি আঞ্চলিক দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রদানের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এ সময় আঞ্চলিক দৈনিকগুলোর কার্যালয়ে সরাসরি যোগাযোগের পরামর্শ দিলে ফোনদাতা সাংবাদিক সেলিম হাসান কাওসারের পূর্বপরিচিত দাবি করে মোবাইল নাম্বার নেন।
র্যাব-৯ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুসা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, গোলাপগঞ্জ থানার মামলার পরোয়ানার ভিত্তিতে কাওসারকে আটক করা হয়েছে।
সাংবাদিক কাওসারের ভাই মাহবুব হোসেন সবুজ সিলেটকে জানান, গোলাপগঞ্জ থানায় কাওসারের বিরুদ্ধে যে দুটি সাজানো মামলা রয়েছে, তা অনেক আগেই আপোস হয়েছে। পুলিশের সিকিউরিটি সেলে অভিযোগের বিষয়ে আপোসের জন্য এসআই মামুন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগেও চেকপোস্টে মামুনের সাথে কাওসারের দেখা হয়। এ সময় মামুন সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কাওসার পলাতক হলে ওই সময়েই মামুন গ্রেফতার করতে পারতেন। কিন্তু আপোস হওয়া মামলাগুলো র্যাবের কাছে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে কাওসারকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। এসআই মামুনের অপকর্ম নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। যা থেকে মামুনের ধারণা কাওসার এ সকল সংবাদের নেপথ্যে কাওসারের হাত ছিল। এ থেকে এসআই মামুন ক্ষোভ থেকে তার এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় কাওসারকে উপশহর থেকে আটক করায়।