জামালগঞ্জে করোনার বন্ধে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের মানবেতর জীবন
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২১, ৯:৪৯ অপরাহ্ণ
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ :::
মানুষ গড়ার দায়িত্ব পালন করছেন যে শিক্ষক-শিক্ষিকা তারাই আজ মানবেতন জীবনযাপন করছেন। করোনার কারণে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আবার চলছে লকডাউন। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের পরিবারে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। কারণ তাদের পরিবার চলে শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। অস্বচ্ছল পরিবারের এসব শিক্ষকদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
জামালগঞ্জ উপজেলার ৩টি সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিন্ডারগার্টেনসহ আরও ৫টি স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। মোট ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বেতন না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা। অর্থকষ্টে জীবনযাপন করা এসব শিক্ষক সরকারি প্রণোদনার দাবি জানিয়ে আসছেন সরকারের কাছে।
জানা যায়, উপজেলা সদরে ৩টি, সাচনা বাজারে ১টি ও অন্যান্য স্থানে ৪টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এসব শিক্ষকরা প্রায় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। এই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের বেতন ও টিউশন ফি দিয়ে চলে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সরকারি আদেশে গত ১৮ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় বেতন নেই শিক্ষকদের। টিউশন ফি বন্ধ থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক সম্মানীও বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কেজি স্কুলের শিক্ষকরা নিষ্ঠার সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। এসব স্কুলে লেখাপড়া শিখে অনেক ছাত্রছাত্রীই বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত আছেন। যাদের হাত ধরে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে জীবনে স্বচ্ছলতা পেয়েছে সেই স্কুলের শিক্ষকরা বর্তমানে চরম সঙ্কটে পড়েছেন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে শিক্ষকরা দিনের পর দিন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এসব স্কুলের শিক্ষকদের অর্থবিত্ত না থাকলেও সমাজে তারা শিক্ষক হিসেবে সম্মানীয়। ফলে তারা না পারছে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে, না পারছে মুখ ফোটে কাউকে কিছু বলতে। ফলে মানুষ গড়ার কারিগররা এখন তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। লজ্জায় কারও কাছে ধারদেনা করতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ কিন্ডারগার্টেনের সিনিয়র শিক্ষক মো. আলী আমজাদ জানান, অর্থ না থাকলেও শিক্ষক পরিচিতির কারণে আমরা অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে পারি না। এখন আমাদের অনেকের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষক আছেন যারা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর চলে তাদের সংসার। আমাদের শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ফি করোনায় বন্ধ থাকায় আদাল করতে পারছি না। তাই শিক্ষকরা বেতন নিতে সমস্যায় পড়ছেন। তাই সরকারের কাছে সকল কেজি স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে জামালগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ও চাইল্ড কেয়ার প্রতি বছরই ভালো ফলাফল করে আসছে। এ করোনা সঙ্কটে শিক্ষক কর্মচারীদের প্রণোদনা দিলে তারা কিছুটা হলেও কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেত। এসব কেজি স্কুলের শিক্ষকদের মাঝে সরকারি উপহার প্রদান করার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা বলেন, কেজি স্কুলের শিক্ষককতা করে কোন রকম পরিবারের খরচ সামাল দিচ্ছিলাম। এমনিতেই স্কুলে ঠিকমতো বেতন পাই না। তার উপর লকডাউন। ফলে আর্থিক অস্বচ্ছল শিক্ষক পরিবারের নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। শিক্ষক মানুষ চক্ষুলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না, আবার সইতেও পারছেন না। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ তারা যেন আমাদের কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করেন।
আরেকজন শিক্ষক বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু কেজি স্কুলের শিক্ষকরা ৪-৫ হাজার টাকা বেতন পায় তা, সবারই জানা। বর্তমান দুর্যোগে অনেকেরই বেতন বাকি পড়ে আছে। এ অবস্থায় জীবন আর চলছে না। অপেক্ষা এবং আশায় আছি কবে আমাদের কষ্টের অবসান ঘটবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কেজি স্কুলগুলো বন্ধ থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের বেতন পুরোপুরী আদায় করা যাচ্ছে না। যেহেতু এসব স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় চলে তাই এ সমস্ত শিক্ষকগণ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের আর্থিক অসুবিধা কাটানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং তাদের বেতন ভাতাদি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।