ভুয়া নাম পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব করছে আহাদ
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২১, ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ::::
তদবীর, দালালী আর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জে নিজেকে আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত করে তুলেছেন সাংবাদিক নামধারী আবদুল আহাদ। মুলত তার নাম আবদুন নুর; একটি পত্রিকার গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি হওয়ার জন্য এসএসসি পাস সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
তখন নিরুপায় আবদুন নুর ভাতিজা আব্দুল আহাদের এসএসসি পাস সার্টিফিকেট জমা দিয়ে সাংবাদিকতার খাতায় নাম লিখান। আবদুন নুর হয়ে ওঠেন আব্দুল আহাদ। সেই থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ভুয়া নাম ব্যবহার করে একের পর এক গোলাপগঞ্জের লোভনীয় বিভিন্ন লাভজনক পদ-পদবি। এখানেই শেষ নয়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান গোলাপগঞ্জ মডেল থানার নিয়ন্ত্রক তিনি। নামে সাংবাদিক হলেও সাধারণ মানুষ থানার দালাল হিসেবেই তাকে বেশি মর্যাদা দিয়ে থাকেন।
আবদুন নুর ওরফে আব্দুল আহাদ স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াত-শিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী হলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে রয়েছে গভীর সখ্যতা।
এছাড়া সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি, গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের একাংশের আজীবন সভাপতি, গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ লাভজনক সব পদ ধরে রেখেছেন তিনি। আর এ সকল পদের দোহাই দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে থানায় দালালি, মামলায় তদবির, চার্জশিটে নাম ঢুকানো কিংবা চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া সব কিছুতেই সিদ্ধহস্ত তিনি।
পারিবারিক বিরোধ থানা পর্যন্ত গড়ানোর পাকা খেলোয়াড় গোলাপগঞ্জ উপজেলার আবদুল নুর ওরফে আবদুল আহাদ।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌঘরী একাডুমা গ্রামের মরহুম আব্দুর রহিমের পুত্র আব্দুন নূর ওরফে আব্দুল আহাদ। আব্দুন নূর ওরফে আব্দুল আহাদের পিতা ছিলেন পেশায় একজন দর্জি।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ফুটপাতে বসে কাপড় সেলাই করতেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তানের নাম রাখেন আব্দুন নূর। সেই আব্দুন নূর এখন আব্দুল আহাদ নামেই স্থানীয় মামলাবাজ, প্রতারক, থানার দালাল, সন্ত্রাসী চক্র, হলুদ সাংবাদিক ও অসহায় নিরীহ মানুষের কাছে আতংক হিসেবেই পরিচিত। এক দরিদ্র দর্জি পরিবারের সন্তান হয়ে টার্গেট করে করে উপজেলার লোভনীয় ও লাভজনক পদে নিজেকে আসীন করে নানা কৌশলে।
জানা গেছে, লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেকোনো কৌশল নিতে পারদর্শী আবদুন নুর ওরফে আব্দুল আহাদ মা-বাবার লালিত স্বপ্ন পূরন করতে পারেনি। আব্দুন নূর নামেই গোলাপগঞ্জ উপজেলার রাণাপিং এর একটি কওমি মাদ্রাসায় তার শিক্ষা জীবন শুরু।
শৈশবে আলেম হওয়ার জন্য মা বাবা মাদ্রাসায় ভর্তি করলেও সেখান থেকে পালিয়ে ভর্তি হয় একটি হাই স্কুলে। কিছু দিন পর লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় মনি নিউজ এজেন্সিতে পিয়নের চাকরি নেয় আব্দুন নূর (বর্তমান আব্দুল আহাদ)। তার মালিকের আস্থাভাজন হয়ে হিসাবরক্ষকের পদে আসীন হয়। এসময় মনি নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সংবাদ নিয়ে সে নিয়মিত আসা যাওয়া করতে থাকে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার অফিসে।
এ থেকেই তার মনে সাংবাদিক হওয়ার বাসনা জাগলে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তা পারে নি। চতুর আব্দুন নূর তার ভাতিজা ফারুক মেম্বারের ছেলে আব্দুল আহাদের এসএসসি সার্টিফিকেট দিয়ে স্থানীয় একটি পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করে। এরপর থেকেই আব্দুন নূর নিজের আসল নাম বাদ দিয়ে আব্দুল আহাদ নাম নিয়ে নিজেকে জাহির করতে থাকে।
সাংবাদিকতার লেবাস গায়ে লাগানোর পর থেকেই বেপোরোয়া হয়ে উঠে কথিত আব্দুল আহাদ। এ সময় সে আদর্শ লাইব্রেরি নাম দিয়ে সাইনবোর্ড সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খুলে গড়ে তুলে অপরাধ জগতের আস্তানা। সাংবাদিক পরিচয়ে আব্দুল আহাদ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলে অপরাধ জগতের নেটওয়ার্ক।
মিথ্যা মামলা, চাদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ভুয়া সংগঠনের নামে সংবাদপত্রে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো, হলুদ সাংবাদিকতাসহ এমন কোন অপরাধ নেই যার সাথে আহাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। বিভিন্ন সংস্থার প্যাড ও সিল জাল করে পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান ও বিভিন্ন অফিসে স্মারকলিপি প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক বছর আগে স্থানীয় ডাক্তার কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দায়ের করে পরে তদন্তে তা ভুয়া প্রমানিত হয়। ২০০২ সালে মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি সংবাদ পত্রে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আব্দুল আহাদ।
এই ঘটনায় খলিলুর রহমান প্রেস কাউন্সিলে মামলা দায়ের করলে পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক ও প্রতিনিধি আব্দুল আহাদকে বিচারপতি মোজাম্মেল হক ও অন্যান্য বিচারকরা তিরষ্কার করেন।
মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত আব্দুল আহাদ নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আপোস রফার নামে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৯ সালে জনৈক ছাবুল ও বাবুলের বিরুদ্ধে আহাদ একটি মামলা দায়ের করে। যার নং ১৬(৬)৯৯। এই মামলায় ছাবুলকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে পরে ১০ হাজার টাকায় আপোস করে।
২০০০ সালে ভুমি আত্মসাতের লক্ষে জনৈক মশিক ও রুহেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পরে ২০ হাজার টাকায় আপোস করে। ২০০২ সালে একইভাবে জনৈক হেলাল, বেলাল ও আখতারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যার নং ০২(১২)০২। কিন্তু তদন্ত শেষে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হয়। এছাড়াও পল্লী বিদ্যুতের খুটি স্থাপনের টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আহাদ এতটাই নিষ্টুর তার সহকর্মী সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে ২০১৩ সালে ফেনসিডিল ও চুরির মামলা দিয়ে জেল খাটায়। এছাড়াও রাজনৈতিক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় সরাসরি থানায় গিয়ে তদবিরের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আহাদের বিরুদ্ধে।
গোলাপগঞ্জ থানার ওসি (অপারেশন) সুমন চন্দ্র সরকার বলেন, সাংবাদিক আহাদ থানার রাজনৈতিক মামলাগুলোর নিয়মিত আপডেট নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করে থাকেন।