নিউইয়র্কে এবিসিএইচ-এর ব্যতিক্রমধর্মী পিকনিক অনুষ্ঠিত হলো
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২১, ২:৪৩ পূর্বাহ্ণকামরুজ্জামান হেলাল, যুক্তরাষ্ট্র::: নিউইয়র্ক সিটি’র লং আইল্যান্ডের সবুজে-ঘেরা প্রকৃতির মাঝে অবস্হিত নয়নাভিরাম বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কে গত রবিবার উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী পিকনিক। এর আয়োজক ছিলো সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও ফেসবুক ভিত্তিক একটি সংগঠন ‘আমেরিকান বাংলাদেশী কমিউনিটি হেল্প’ গ্রুপ বা সংক্ষেপে এবিসিএইচ (ABCH)। বিভিন্ন বয়সের সাড়ে চারশ’ নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী ও শিশু সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই বর্ণাঢ্য পিকনিকে অংশ নেন। এবিসিএইচ-এর আয়োজনে এটি ছিলো প্রথম পিকনিক। ব্যতিক্রমী এই পিকনিকের বৈশিষ্ট্য ছিলো অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ মানুষই কেউ কারো পরিচিত ছিলেন না। কিন্ত চেনা শহরে অচেনা এসব মানুষ পিকনিকের দিন পরস্পরকে চিনে নিতে ও জেনে নিতে বেশি সময় নেননি। করোনার দমবন্ধ হওয়া গুমোট পরিস্হিতি থেকে কিছু সময়ের জন্য হাঁফ ছেড়ে সবাই অনন্য সুন্দর প্রকৃতির মাঝে সময় কাটিয়েছেন এই পিকনিকের সৌজন্যে। সামার এলেই সাধারণত নিউইয়র্ক শহর ও শহরের উপকন্ঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিভিন্ন পার্কে ঢল নামে পিকনিক আয়োজনের। বেশিরভাগ পিকনিকই হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাভিত্তিক সমিতি ও সংগঠন; বিভিন্ন পেশাজীবী, এলামনাই কিংবা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে। তবে এবিসিএইচ-এর মত শুধুমাত্র অনলাইন-ভিত্তিক কোনো গ্রুপের উদ্যোগে এতো বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে কোনো পিকনিকের আয়োজন এটাই প্রথম। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেসবুকে এই পিকনিকের প্রচারণা চলেছে। গ্রুপের সদস্য-সদস্যরা এতে বিপুল সাড়া দেন। রবিবার সকাল থেকেই নিউইয়র্কের পাঁচ বরো কুইন্স, ব্রুকলিন, ব্রন্কস, ম্যানহাটান ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ড থেকে অংশগ্রহণকারীরা আসতে শুরু করেন। নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া, মিশিগান ও ফ্লোরিডা ইত্যাদি স্টেট থেকেও অনেকে এসেছেন। এবিসিএইচ-এর তিন এডমিন জাহিদ করিম, তরিকুল ইসলাম মিঠু ও হাসান ভূঁইঞা এবং ২৫ সদস্যের ভলান্টিয়ার টিম অংশগ্রহণকারীদের বরণ করে নেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন প্রত্যেক ভলান্টিয়ার। পিকনিক স্পটে কয়েকজন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা তাঁদের বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছিলেন। পিকনিকের বৈচিত্র্য আরো বাড়িয়ে দিতে পান-সুপারি ও চটপটি-ফুচকার স্টল নিয়েও হাজির ছিলেন দু’জন। শাড়ি, জামা-কাপড়, কানের দুল, চুড়ি, ইমিটেশন গয়নার স্টলও ছিল। রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ বা সলিউশন (মর্টগেজ, বাড়ি কেনা, ব্যাংক লোন ইত্যাদি) দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ফেয়ারওয়ে মর্টগেজ কর্পোরেশন। রকমারি পণ্যের পসরা ছিলো নিউইয়র্কের জনপ্রিয় ফাইভ সিস্টার্সের স্টলে। এমব্লেম হেলথ এসেছিলো মেডিক্যাল ইনসুরেন্স সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে। পিকনিক হবে অথচ গান বাজনা, নাচ ও খেলাধূলা হবে না, তা কি হয়? সুদূর ফ্লোরিডা থেকে এসেছিলেন শিল্পী আমিরুল ইসলাম বাবুল। ছিলেন শিল্পী মিথুল হক, ঝুলন সেন এবং সৌখিন শিল্পী খন্দকার রবি। তাঁদের সুললিত কন্ঠের গান সবাইকে মুগ্ধ করেছে। গানের তালে তালে ‘ব্যাকরণহীন’ নাচও সবাই উপভোগ করেছেন। দুপুরে পার্কের মাঠে মহিলাদের বালিশ প্রতিযোগিতা, বালক-বালিকাদের দৌঁড় প্রতিযোগিতা এবং তরুনদের নিয়ে ক্রিকেট ম্যাচও হয়েছে। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় রেফল ড্র। সেখানে মোট পুরস্কার ছিলো ১৩টি। তেরজন ব্যবসায়ী এসব স্পন্সর করেছিলেন। স্বর্ণের চেইন, অ্যাপল ওয়াচ, স্যামসাং টিভি ও ট্যাবলেট, মেসি’জ-এর ক্রোকারিজসহ সবগুলো পুরস্কারই ছিলো আকর্ষণীয়। উল্লেক্ষ্য যে, এবিসিএইচ গ্রুপে এখন পনের হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান সদস্য যারা একে অপরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আমেরিকার মাটিতে একটি শক্ত বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে তুলেছে। সারা আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই গ্রুপের সদস্য। গ্রুপটি আমেরিকার পাশপাসি বাংলাদেশেও অসহায় দরিদ্র মানুষদেরকে সাহাজ্য সহযোগিতা করে আসছে। উদ্যোক্তারা জানান যে, বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষদেরকে নিয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। তারা আর বলেন যে, এবিসিএইচ গ্রুপ সারা আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মানুষের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।