নবীগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা : আটকা পড়েছে ৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ কাজ ও উদ্বোধন

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২১, ৭:৫৫ অপরাহ্ণনবীগঞ্জে ভেস্তে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ
এম এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)॥
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছেনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ কাজ। মুজিববর্ষে হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এ উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসনের দুরদর্শিতার অভাব ও প্রভাবশালীদের দাপটে থমকে আছে । এর ফলে ঘর নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত কাঠসহ বিভিন্ন গুরুত্ব নির্মাণ সামগ্রী। এর ফলে সুবিধাভোগীদের মাথা গুজার ঠাঁই পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে উক্ত ভুমি নিজের লীজপ্রাপ্ত দাবী করে বিজ্ঞ হবিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেছেন আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি। ফলে আদালত নিমার্ণ কাজের উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন । সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জকে এ বিষয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান কনে। এতে ৮টি ঘরের চলমান নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে ইনাতগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারী ভুমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বপ্নের ঘরে উঠতে পারছেন না ওই ভুমিহীন ও গৃহহীন ৮টি পরিবার। এদিকে দেরীতে হলেও নির্বাহী অফিসার বিজ্ঞ আদালতে কারন দর্শানোর জবাব দাখিল করেছেন।
সুত্রে জানাযায়, সারা দেশের ন্যায় নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র মানািবক উদ্যোগ ভুমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলায় ৩৯০ জন ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করলে প্রথম পর্যায়ে ১১০টি গৃহ, দ্বিতীয় ধাপে ৪০ গৃহ নির্মাণের বরাদ্ধ আসলে কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে আরও ২০টি ঘর বরাদ্ধ আসলেও তার কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি। যা বিগত ২৩ জানুয়ারী উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক পর্যায়ক্রমে ৮৭টি নির্মিত গৃহ ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করেন। ওই সময় ইনাতগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারের খাস খতিয়ানের ২২.৭১ শতক ভুমির মধ্যে ৮ জন ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ১৬ শতক ভুমি বন্দোবস্ত দিয়ে ৮টি গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে একেকটি গৃহ নির্মাণে বরাদ্ধ রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু করলে আহমদ আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি ভুমি তার নামে বন্দোবস্ত দাবী করে নির্মাণ কাজে বাধা দেন। ফলে সহকারী কমিশনার ভুমি সুমাইয়া মুমিন তাকে একাধিকবার নোটিশ করলে সে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। গৃহ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে আসলে উপজেলা প্রশাসন ১ম পর্যায়ে ৬০টি ঘর ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে উদ্বোধনের মাধ্যমে সমঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও ২৩ জানুয়ারী মাত্র ২৫টি ঘর সমঝিয়ে দেয়া হয় উপকার ভোগীদের মাঝে। বাকী নির্মিত ঘর গুলো ভুমিহীন ও গৃহহীনদেও মাঝে পর্যায়ক্রমে সমঝিয়ে দিলেও ইনাগঞ্জের ৮টি ঘর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে আটকা পড়ে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই ৮টি ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। মজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র মানবিক উদ্যোগ এর ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে এ পর্যন্ত ৮৭ টি পরিবারের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করা হয়। তবে কপাল ভাঙ্গে ইনাতগঞ্জ ভুমিহীন ও গৃহহীন ৮টি পরিবারের। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি প্রদান করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া কথা রয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। একই ডিজাইনে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হবে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট ও ইউলিটি স্পেসসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া নির্মিত ঘরের মান নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আহমদ আবুল কালাম আজাদের দায়েরী মামলার জবাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ মহি উদ্দিন বলেছেন, আবুল কালাম আজাদের কোন প্রকার বৈধ কাগজ পর্যন্ত নাই। যা তিনি ইতিপুর্বে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ভুমি প্রকৃত অর্থে সরকারের ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত। যা এসএ ও আর এস বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড বিদ্যমান রয়েছে। উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তাফাপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ১২৪/১২০০ দাগে মোট ২২.৭১ শতক ভুমি নদী শ্রেণী হিসেবে এসএ রেকর্ডে বিদ্যমান ছিল। বিগত আরএস জরিপে উল্লেখিত ভুমি ৬৩২ দাগে আউশ শ্রেণী হিসেবে ০.০৩০০ একর, ৬৩৫ দাগে লায়েক পতিত শ্রেণী হিসেবে ০.০৬০০ একর, ৬৩৬ দাগে চারা শ্রেণী হিসেবে ০.৩৬০০ একর, ৬৩৭ দাগে আউশ শ্রেণী হিসেবে ০.২৮০০ একর ভুমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়। এরমধ্যে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের সকল ভুমিহীন ওগৃহহীনদেও জন্য গৃহ প্রদান নীতি মালা ২০২০ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মোতাবেক ১৯/২০২০-২০২১ইং নং স্থায়ী বন্দোবস্ত মোকদ্দমায় ইনাতগঞ্জে মোঃ আলফু মিয়া গং, হারুন মিয়া গং, মোঃ ইছব আলী গং, মোঃ ফরাস উদ্দিন গং, মোঃ আব্দুল নুর গং, মোঃ ছমির উদ্দিন গং, অধীর চন্দ্র দাশ গং, মোঃ জিলু মিয়া গং দের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান পুর্বক নবীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেয়া হয়েছে। যা পরবর্তীতে তাদের নামে নামজারি করা হয়েছে। উল্লেখিত ভুমিতে সরকারী অর্থায়নে গৃহ নিমার্ণ কাজ শুরু হলে আবুল কালাম আজাদ নামের ওই ব্যক্তি বাধাঁ প্রদান করেন। কিন্তু সে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকে। যা ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারী উদ্বোধন ও নির্মিত গৃহ ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে সমঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০ জানুয়ারী হবিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসলে তা আটকা পরে। নির্বাচনী কার্যক্রমের কারনে উপজেলা প্রশাসন আদালতের জবাব বিলম্ভে প্রেরন করেন। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগের ৮টি ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার তাদের নামে বরাদ্ধ দেয়া স্বপ্নের বাড়িতে উঠতে পারছেন না। এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন অনুমান ৭৩/৭৪ সালে স্থায়ী বন্দোবস্ত নেন। এছাড়া তিনি আর কোন তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন যা বলার আদালতে বলবো। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুমাইয়া মমিন বলেছেন, উল্লেখিত ভুমি টুকু সরকারী খাস ভুমি। বিধি মোতাবেক মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৮ জন ভুমিহীনদের মাঝে ১৬ শতক ভুমি বন্দোবস্ত প্রদান করে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেয়া হয়েছে। আবুল কালাম আজাদের দাবী অবৈধ ও অযৌক্তিক। এই জায়গা সরকার কাহারো নামে স্থায়ী বা অস্থায়ী বন্দোবস্ত বা লীজ প্রদান করেন নি। তবে একাধিকবার উনাকে ডাকার পরও তিনি বৈধ কোন কাগজপত্র নিয়ে হাজির হন নি। বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে জবাব প্রদান করা হয়েছে। আদালতের পরবর্তী আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সরকারী খালের পাড় ঘেষা ১৬ শতক ভুমি ৮ জন ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বন্দোবস্ত প্রদান করেন উপজেলা ভুমি অফিস। পরে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ৮টি আধা পাকা ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ৪টি ঘরের আংশিক দেয়ালে কাজ শেষ হয়। অপর ৪টি ঘরের চর্তুর দিকে ইটের দেয়াল নির্মাণ কাজ শেষ করে উপরে টিন লাগানো, আস্তর ও বারান্দার কাজ করা কালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আসে। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে ভুমিহীনদের ওই ৮টি বাড়ি।