জামালগঞ্জে করোনার লকডাউনে বাউল শিল্পীদের মানবেতর জীবনযাপন
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২১, ৮:৪০ অপরাহ্ণ
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ:
সারা বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। আমাদের দেশে জীবন-জীবিকা স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। এ থেকে কবে পরিত্রাণ মিলবে তা কারও জানা নেই। তাই কর্মচঞ্চল ও অন্যান্য পেশার মানুষের মতো বাউল শিল্পীদের জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। স্তব্ধ হয়ে থেমে গেছে মানুষের জীবন-জীবিকা। ঠিক তেমনি সবার মতো থমকে গেছে বাউল শিল্পীদের গানের আসর। আজ কোথাও শোনা যায় না বাদ্যযন্ত্রের হৃদয় উতালা সুরের আওয়াজ। নেই বাদকের সেই ঢোল, বেহালা ও দু’তারার আওয়াজ। যেখানে বাউল শিল্পীরা মাসের পর মাস গ্রামেগঞ্জ ও নগরে ছুটে চলেছেন গানের তাগিদে সেখানে তাদের দিন কাটছে আবদ্ধ ঘরে। এভাবে বন্ধ হয়ে যাবে সুরের আসর তা কখনও কল্পনা করেননি বাউল শিল্পীরা। যারা গানের উপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। করোনাকালীন লকডাউনে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
জন্মের পর বোঝ হওয়ার আগেই উস্তাদের হাত ধরে হাতে নিয়েছেন বেহালা আর দু’তারা। গানই জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ মনে করে অন্য পেশায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি এই শিল্পী সমাজ। প্রতি রাতেই শিল্পীরা গানের আসরে মত্ত থাকতেন। তাদের সাথে বাদ্যবাদকেরাও ব্যস্ত থাকতেন। কোন কোন রাত ২-৩টি আসরে গান গাইতে হতো তাদের। এই পরিস্থিতিতে কোন প্রোগ্রাম আসর না থাকায় হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন তারা। তাই স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে বাউল শিল্পীদের জগৎ।
বর্তমান এই করোনা আতঙ্ক নিয়েই কথা হয় জামালগঞ্জে আগত তরুণ বাউল শিল্পী নিপা সরকারের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, বাউল শিল্পীরা সবসময়ই মানুষের সুখ-দুঃখের কথা নিয়ে গান করে থাকে। তাই আমরা মানুষের ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে পড়ি। মানুষের সাথে গান-বাজনার মাধ্যমে আমরা শান্তি খোঁজে পাই। করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের কারণে কোন অনুষ্ঠান না থাকায় সবার কাছ থেকে দূরে রয়েছি আমরা। আমাদের আয়ের পথও রুদ্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের পারিবারিক খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
করোনায় সব ল-ভ- হয়ে যাওয়ায় মন ভালো নেই শিল্পী সুফাজ্জল কবীরের। করোনা সংক্রমণের পর থেকে তার ঘরে মন বসছে না। তারপরও তাকে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হচ্ছে। মাসদু’য়েক আগেও গানের আসরের জন্য দম ফেলার সুযোগ পেতেন না তিনি। বর্তমানে কেমন সময় কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরবন্ধী জীবন একদম ভালো লাগছে না। আমাদের আয়ের প্রধান উৎস হলো গান। গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে ভাষায় গানের চর্চা করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে ভাটি বাংলা ইউসুফ নূরী বাউল সংগঠনের সভাপতি ইনচান আল আজাদ জানান, যুগের পর যুগ বাউল শিল্পীরা তাদের জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চালিয়ে আসছেন। তবু তারা তাদের উস্তাদের দেখানো পথ থেকে কখনও সরে যায়নি। এই করোনাকালে তাদের জীবন-জীবিকা একদম থমকে গেছে। লকডাউনে পেশাদার বাউল শিল্পীদের জন্য কোন ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। অনেক শিল্পী পেটের তাগিদে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি এই করোনাকালীন সময়ে বাউল শিল্পীদের তালিকা করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করার জন্য।