পল্লী বিদ্যুতের সভাপতির হাতে আলাদিনের চেরাগ
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২১, ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার :::
সিলেট পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর পরিচালক হয়ে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে গোলাপগঞ্জের আব্দুল আহাদ ওরফে নুর মিয়া। প্রথম দফায় পল্লী বিদ্যুতের নির্বাচনের সময় তার বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। নির্বাচনে জালিয়াতি করে জয়লাভের পর যেন তিনি আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। এ সময় পল্লী বিদ্যুতের নাম ভাঙিয়ে তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। আব্দুল আহাদ ওরফে নুর মিয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আব্দুল আহাদ ওরফে নুর মিয়া। সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে থানার দালাল হিসেবে এলাকায় নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন। তার নিজস্ব কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকার পরও জালিয়াতির মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সেক্রেটারি হয়েছেন। কিন্তু এসব কিছু ছাড়িয়ে যায় তার পল্লী বিদ্যুতের সভাপতি হওয়ার পর। এসময় তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এমনকি ঠিকাদাররা বিদ্যুতের কাজ পাওয়ার পরও আব্দুল আহাদকে চাঁদা না দিলে তিনি এলাকায় কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও দীর্ঘদিনের।
গোলাপগঞ্জের বাঘার কালাকোনা গ্রামে নতুন সংযোগের সময় আব্দুল আহাদ ওরফে নুর মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। কাজের ঠিকাদার তাকে উৎকোচ না দেওয়া আহাদ বাঘা গৌরাবাড়ির জনৈক জিবারকে দিয়ে কালাকোনার কাজ জোরপূর্বক বন্ধ করে দেন। শেষে এলাকা থেকে পরিবার প্রতি ১০ হাজার ও খুটি প্রতি ৫০ হাজার করে টাকা আদায় করেন। এমনকি মিটার সংযোগের জন্য আদায় করে ১০ হাজার টাকা করেন। বিদ্যুত সংযোগের আগে থেকে আবদুল আহাদ তার বিশেষ লোকদের দিয়ে এলাকা থেকে আদায় করেছেন কয়েক লাখ টাকা।
কালাকোনা গ্রামের খাতই মিয়া বলেন, সরকার বিনামূল্যে বিদ্যুত দিয়েছে। এ বিদ্যুত সংযোগের জন্য বিধি মোতাবেক ঠিকাদার কাজ পেয়েছিল। ঠিকাদার আব্দুল আহাদকে প্রথমে কোন চাঁদা দেয়নি। তখন আহাদ তার মনোনীত বিশেষ লোকজনকে দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঠিকাদারের কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন আহাদের সাথে যোগাযোগ করে কয়েক লাখ টাকা উৎকোচ দিলে আবার বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হয়।
উত্তর গোলাপনগর গ্রামের মনু মিয়া বলেন, আমার ঘরের মিটার সংযোগের জন্য নতুন খুঁটির প্রয়োজন হয়। আব্দুল আহাদের কাছে গেলে খুটি বাবত ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি ৫০ হাজার দিই। এরপর বলে মিটার সংযোগের জন্য, লাইনের ক্যাবলের জন্য আরো ২০ হাজার দিতে। আমি তার হাতে এ টাকাও তুলে দেই। তারপর সে প্রায় ২ বছর আমার কাজ সিস্টেমে আছে বলে। এরপর এলাকা থেকে সে বিভিন্নভাবে টাকা উত্তোলন করে। আমার ১টি খুঁটির সংযোগ পেতে লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ হিসেবে এলাকায় শতাধিক খুটি স্থাপন হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুতের এক ঠিাকাদার বলেন, সরকারী কাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে আমরা কাজ পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজ করতে গেলে আহাদ কাজে বাঁধা দেয়। এলাকা থেকে চাঁদা উত্তোলন করে আবার আমাদের কাছ থেকেও চাঁদা দেয়। চাঁদা না দিলে তিনি বিভিন্নভাবে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এলাকায় তার বিশেষ বাহিনী দ্বারা মালামাল লুটপাট করান। শ্রমিকদেরও অত্যাচার করেন। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন দ্বারা হয়রানী করায়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা তার কথা মোতাবেক চলতে হয়।
কালাকোনা গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, আহাদ এলাকা থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা নিয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরী।