জামালগঞ্জে ধানের বাজার দর ভালো থাকায় সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২১, ৫:২৮ অপরাহ্ণ
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি :::
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় সরকারি খাদ্য গুদামে ধান চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য প্রায় সমান থাকায় গুদামে ধান দিতে অনীহা প্রকাশ করছে কৃষকরা। অপরদিকে ধান বিক্রির টাকা উত্তোলনে বিলম্ব ও ভোগান্তির কারণে কৃষকরা খাদ্য গুদামের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন। এর কারণে সরকারি ধান চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জামালগঞ্জ খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৩ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন বোরো ধান, ৪৪১ মেট্রিক আতব চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৭ টাকা কেজি দরে ধান ও ৩৯ টাকা কেজি দরে মিল মালিকদের আতব চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় গত মে মাসের ৫ তারিখ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ চলবে। তবে সংগ্রহের ১ মাস ৮ দিন অতিবাহিত হলেও ৭২ শতাংশ ধান কিনতে পারেনি খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। খোলা বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া এবং খাদ্য গোদামে বিক্রিত ধানের টাকা তুলতে ভোগান্তির কারণে কৃষকরা এ বছর ধান দিচ্ছে না খাদ্য গোদামে। এর কারণে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এক মাস ৮ দিনে মাত্র ৯২৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করলে টাকা তুলতে বিভিন্ন অফিসে ঘুরতে হয়। এতে টাকা হাতে পেতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু আমাদের তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজনে ধান বিক্রি করি। তাছাড়া ধানের দাম এমনিতে বাজারে ভালো। খাদ্য গুদামে ধান দিতে যাতায়াত ও শ্রমিক খরচ দিয়ে যে মূল্য পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি মূল্য ঘরে বসেই পাওয়া যায়। তাই খাদ্য গুদামে ধান দেওয়ার আগ্রহ নেই আমাদের। এর জন্য এ বছর ধান সংগ্রহ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
চালের ব্যাপারে সরকারের নির্ধারিত মূল্য ও বাজার মূল্যের অসঙ্গতির কারণে গুদামের চাল সরবরাহ করতে মিল মালিকরা অনীহা দেখাচ্ছেন। মিল মালিকটদের চাল সরবরাহ করতে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ চাপ দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য গুদামে এই পর্যন্ত ২১৪ মে. টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মুকিত চৌধুরী বলেন, এ বছর ৩৭টি মিল মালিকের সাথে ৩৯ টাকা কেজি দরে ৬৪১ মেট্রিক টন আতব চাল খাদ্য গুদামে সংগ্রহের জন্য মিল মালিকদের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু গুদামে বিক্রির উপযোগী চাল প্রস্তুত করতে প্রতি কেজিতে ব্যয় হয়েছে ৪০ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে ১ টাকা মিল মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে। অথচ এই চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থায় খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহ করতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও চুক্তি থাকার কারণে আমরা চাল সরবরাহ করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ধান সংগ্রহের জন্য এ বছর অনলাইন লটারির মাধ্যমে উপজেলা প্রতিটি গ্রাম থেকে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহ হারিয়েছে। যার কারণে মে মাসের ৩০ তারিখ থেকে ধান সরবরাহ উন্ম ুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং প্রতি কৃষক কৃষি কার্ডের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান দিতে পারবে। মিল মালিকরা চাল ক্রয়ের ব্যাপারে শর্ত শিথিল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু সেটা করা সম্ভব নয়। আর্থিক ক্ষতি হলেও চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে চাল দিতে হবে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।