২২ বছর ধরে জামানত হারানো মতিন জিততে চান

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১২ পূর্বাহ্ণদেশে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট অন্যতম। চট্টগ্রামে সুন্নি আক্বিদার মানুষের আধিক্য থাকায় দলটির রয়েছে জনপ্রিয়তাও। তবে ভোটাররা দুই বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভক্ত থাকায় সুন্নিয়তের জনপ্রিয়তাকে ভোটে কাজে লাগাতে অনেকটাই ব্যর্থ ইসলামী ফ্রন্ট। যে কারণে দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন চট্টগ্রামের বাসিন্দা হয়েও ২০০১ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গিয়ে জামানত হারিয়েছেন।
তবে এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের আশা দেখছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এ প্রার্থী। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে দলীয় প্রতীক ‘মোমবাতি’ নিয়ে ভোটে লড়বেন তিনি। ওই আসনের বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে নৌকার মাঝি হয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়াও ওই আসনে আরও পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী এম এয়াকুব আলী, জাতীয় পার্টির মো. নুরুচ্ছফা সরকার, ইসলামিক ফ্রন্টের কাজী মো. জসিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির রাজীব চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সৈয়দ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জিহাদী।
প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য ছোটদলগুলোর প্রার্থীদের আমলে নিচ্ছেন না এম এ মতিন। তিনি বলেন, আমরা (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট) এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফাইট করবো এবং নির্বাচিত হবো, ইনশাল্লাহ্।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া নির্বাচনী হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন এম এ মতিন। তার স্ত্রীও পেশায় ব্যবসায়ী। হলফনামায় দুজনের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকার বেশি। এম এ মতিন এবার দুটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের ৩৫ নম্বর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক মোমবাতি। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানাধীন বরুমছড়া এলাকায়।
২০০১ সালে ১ অক্টোবরের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এম এ মতিন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাই তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে ১ অক্টোবরের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এম এ মতিন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাই তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিগত এসব নির্বাচনে প্রতিবারই জামানত হারিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এ প্রার্থী। এবার দুই আসনে মনোনয়ন জমা দিলেও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এবারের নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিগত সময়ের নির্বাচনী ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে এম এ মতিন চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তখন ওই আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৫ জন। নির্বাচনে তিনি ১২৩০ ভোট পেয়ে জামানত হারান। যেখানে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। পরে তিনি মন্ত্রীও হন। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত এম এ মান্নান পান ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৯ ভোট।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ এলাকা চট্টগ্রাম-১২ (বর্তমানে চট্টগ্রাম-১৩) আসনে প্রার্থী হন এম এ মতিন। তখন ওই আসনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ২১ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ১০ হাজার ২৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম ধানের শীষ প্রতীকে পান ৮৭ হাজার ৫০৬ ভোট। অন্যদিকে ৪ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে জামানত হারান এম এ মতিন।
এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি। তবে সবশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১, ১২ এবং ১৩ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ৭ হাজার ৪০৯ জন। নির্বাচনে তিনি মাত্র ১২৩৮ ভোট পেয়ে জামানত হারান। ওই আসনে তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম আবদুল লতিফ ২ লাখ ৮৩ হাজার ২০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী পান ৫২ হাজার ৯১৬ ভোট।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬১ জন। এরমধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৩টি ভোট পড়ে। ১ লাখ ৮৩ হাজার ১৭৯ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির এনামুল হক পান ৪৬ হাজার ৬১০ ভোট। এম এ মতিন পেয়েছিলেন ৭ হাজার ২২৬ ভোট।
একই ভাবে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৩১৩ ভোট। এরমধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৮টি ভোট পড়ে। এতে মাওলানা এম এ মতিন ৩ হাজার ৭৯৪ ভোট পান। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ওই আসনে বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সরওয়ার জামান নিজাম পান ৫ হাজার ৮৫৩ ভোট।
‘আমরা (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট) এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফাইট করবো এবং নির্বাচিত হবো, ইনশাল্লাহ্।’ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া নির্বাচনী হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন এম এ মতিন। তার স্ত্রীও পেশায় ব্যবসায়ী। হলফনামায় দুজনের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকার বেশি
এবারের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাওলানা এম এ মতিন ব্যক্তিগতভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। তার বর্তমান বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৬৩৬ টাকা। তার মধ্যে কৃষিখাত থেকে ১৬ হাজার ৭৬০ টাকা, ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৪০ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা আয় করেন তিনি। একইভাবে তার স্ত্রীও ব্যবসা থেকে বছরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, এম এ মতিনের বর্তমানে ৯৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এরমধ্যে নগদ ২০ লাখ ৯৩৯ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা, ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি রয়েছে। এছাড়া নিজের কাছে সোনা রয়েছে ২০ তোলা। পাশাপাশি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং সমপরিমাণ আসবাবপত্র রয়েছে। তার ব্যবসায়ে মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং জমি কেনার জন্য অগ্রিম দিয়েছেন ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
অন্যদিকে এই প্রার্থীর স্ত্রীর নগদ ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ টাকা রয়েছে। ব্যাংকে কোনো জমা টাকা নেই। ৩০ তোলা সোনা রয়েছে। ব্যবসায়ে বিনিয়োগ রয়েছে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাওলানা এম এ মতিনের রয়েছে এক একর কৃষিজমি। যার অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ২০ হাজার টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৭ টাকার। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়েছেন ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। হলফনামায় স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকার অকৃষি জমি দেখিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এই প্রার্থী।