চাঁদের বুকে বিশাল সুড়ঙ্গের সন্ধান
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ণতথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। আমাদের চিরচেনা এই গ্রহ নিয়ে আগ্রতের কমতি নেই। আর তাইতো প্রতিনিয়তই চন্দ্রাভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চাঁদের বুকে সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছে। যা যুগান্তকারী আবিষ্কার।
চাঁদের মাটির নিচে এই গুহাপথের খোঁজ মিলল। আজ থেকে ৫৫ বছর আগে অ্যাপেলো ১১ অভিযানে গিয়ে চাঁদের বুকে যেখানে অবতরণ করেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন, সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরেগুহাপথটির খোঁজ মিলেছে। জানা গিয়েছে। চাঁদের বুকে যেখানে অবতরণ করেছিলেন আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন, সেখান থেকে গুহাপথটির দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার লুনার রিকগনেইসেন্স অরবিটার রেডারের সাহায্যে গুহাপথটির অবস্থান নির্ণয় করা গিয়েছে। আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীতে এমন যে গুহাপথ তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে চাঁদের বুকের ওই গুহাপথটি তুলনা করে দেখেন তারা। সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ন্যাচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে।
নাসা জানিয়েছে, ৫৫ বছর আগে চন্দ্রপৃষ্ঠে যেখানে অবতরণ করেন আর্মস্ট্রং, সেই মারে ট্র্যাঙ্কুইলিট্যাটিসের একটি গহ্বর থেকে পৌঁছানো সম্ভব ওই গুহাপথটিতে। গুহাপথটি ৪৫ মিটার চওড়া এবং ৮০ মিটার লম্বা। আয়তনে প্রায় ১৪টি টেনিস কোর্টের সমান। চাঁদের মাটির ১৫০ মিটার নিচে অবস্থিত গুহাপাথটি।
একদশক আগে চন্দ্রপৃষ্ঠে একাধিক গহ্বর আবিষ্কৃত হয়। তবে এই গুহাপথটির আবিষ্কারে শোরগোল পড়ে গিয়েছে সর্বত্র। কারণ চন্দ্রাভিয়ানের ক্ষেত্রে আগামী দিনে ওই গুহাপথটি নভোশ্চরদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ইতালির ইউনিভার্সিটি অব ত্রেন্তোর অধ্যাপত লরেঞ্জো ব্রুজোন জানিয়েছেন, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভার স্রোত থেকেই ওই গুহাপথের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। চাঁদের বুকে প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পেতে আগামী দিনে ওই গুহাপথটি মানুষের আশ্রয়স্থল হতে পারে।
ওই গুহাপথটিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বিবেচিত করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু তত্ত্ব উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গুহার অন্দরে তাপমাত্রা তুলনামূলক স্বাভাবিক। ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি, সৌর বিকিরণ এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উল্কাপাত থেকে রক্ষা পেতেও কার্যকরী হতে পারে গুহাপথটি।
নাসার লুনার অরবিটারের তোলা ছবিতে তাতে গহ্বরের নিচে বড় বড় পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। এই গহ্বরের নিচের অংশ কোনও গুহাপথের সঙ্গে সংযুক্ত কি না বোঝা যায়নি সেই সময়।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লুনার অরবিটার থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং কম্পিউটির সিমুলেশনস থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায় গহ্বরটি ১০০ মিটার চওড়া, যার নিচে আরও একটি ধাপ রয়েছে এবং পশ্চিম দিক বরাবর এখটি গুহাপথের সঙ্গে সংযুক্ত।
ওই গহ্বরের মধ্যে থাকা পাথরগুলোও পরীক্ষা করে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। চাঁদের সৃষ্টি এবং অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস বোঝার জন্য তা জরুরি বলে মত তাদের। ওই গহ্বরের মধ্যে জলীয় বরফের খোঁজ মিলতে পারে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীদের একাংশ। এখনও পর্যন্ত চাঁদের বুকে এমন ২০০-র বেশি গহ্বরের খোঁজ মিলেছে। ফলে আগামী দিনে আরও গুহাপথের হদিশ মিললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। চাঁদের বুকে গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সেগুলো নভোশ্চরদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে।
গুহাপথ আবিষ্কারের ফলে গোড়াতেই চন্দ্রপৃষ্ঠে বড় ধরনের নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে না বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের। তবে এই গুহাপথে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। গুহাপথটি যেহেতু মাটির ১২৫ মিটার নিচে অবস্থিত, তাই নভোচরদের অত গভীরে পৌঁছাতে হবে প্রথমে। সেক্ষেত্রে মাটির গঠন জানা অত্যন্ত জরুরি। মাটি আলগা হলে গুহাপথে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে ধস নেমে চাপা পড়তে পারেন নভোশ্চররা। ফলে গুহাটির ঘিরে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।