অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় ইংল্যান্ড প্রবাসী ছেলেকে হত্যা করতে চান বাবা!
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০১৯, ১০:২৭ অপরাহ্ণনিউজ সর্বশেষ২৪রিপোর্ট: সুনামগঞ্জের ছাতকের মন্ডলীভোগ গ্রামের এমরান চৌধুরী (৩৯)। লন্ডন প্রবাসী এ যুবক তার বাবা কর্তৃক হয়রানির শিকার। পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়া সত্বেও বাবা হিরন মিয়া চৌধুরী (৬৮) তাকে প্রাণে মারতে চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তার দাবি, বাবার নানা অনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিবাদ করায় তাকেসহ তার মা এবং স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যার হুমকিসহ বাড়ি থেকে বের করেও দিয়েছেন; একই সাথে চাঁদা দাবীসহ হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা এবং তার নামীয় মার্কেটও দখল করে রেখেছেন।
বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবের আমীনুর রশীদ চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি তার বাবার দখল থেকে তার সম্পত্তি উদ্ধারসহ জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘তার বাবা একজন খারাপ ও চরিত্রহীন প্রকৃতির লোক। তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই একাধিক বিবাহ করেছেন। এছাড়া একাধিক নারীদের সাথেও তার অনৈতিক মেলামেশা রয়েছে। তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় ছেলে এবং প্রথম স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে এমরান চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘তিনি লন্ডন থেকে জমি ক্রয় করার জন্য তার পিতার কাছে টাকা পাঠালে ক্রয়কৃত জমি বাবা এবং মায়ের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। বর্তমানে সেই জমিতেই ‘চৌধুরী ভবন’ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনের সামনের অংশে তার নামে একটি মার্কেটও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তারা বাবা নানা অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়লে তাতে মা বাধা দেন। এ কারণে তিনি তাকে ব্যাপকভাবে মারধর করেন। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য মুরব্বিদের কাছে বিচার চাইলে তিনি আরও ক্ষেপে যান এবং মায়ের উপর তার নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। একই সাথে নতুন করে আরও নারীদের বাসায় এনে অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত হন। তাছাড়া তিনি তার নামীয় মার্কেটের নাম মুছে ফেলে তার দাদা মৃত মনোহর মিয়া চৌধুরীর নামে নামকরণও করেন। এতে তার মা প্রতিবাদ করলে তিনি তার নামীয় জমিসহ সকল সম্পত্তী নিজের নামে লিখে নিতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তবে আমার মা তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তাকে মারধর করেন।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘মা তার নামীয় জমি এবং বাসা আমার নামে লিখে দিলে বাবা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এরপর তিনি বাড়িতে থাকতে হলে তাকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় তাকেসহ তার স্ত্রী-সন্তান এবং মাকেও হত্যার হুমকি দেন।’
প্রবাসী এমরান গত ৯ মে লন্ডন থেকে দেশে আসেন উল্লেখ করে বলেন, দেশে আসার পর তার বাবা গত ১২ মে দিবাগত রাতে তার উপর হামলা করেন। তিনি রড দিয়ে বেধড়কভাবে পেঠানও। এর কয়েক ঘন্টা পর তিনি আবারও বন্দুক নিয়ে এসে আমায় হত্যার হুমকি দেন। এদিন তিনি আমার বাসার বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ঘটনায় ছাতক থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।’
একই ভাবে গত ১৫ মে তার মা হাওয়ারুন নেছা চৌধুরীকেও হত্যা করতে বন্দুক নিয়ে বাসায় আসেন পিতা হিরন মিয়া চৌধুরী। এসময় তার আত্মচিৎকারে আমরা এগিয়ে আসলে তিনি স্থানত্যাগ করে চলে গেলে আমার মা তার কবল থেকে রক্ষা পান। পরদিন আমার মা সুনামগঞ্জ নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট আদালতে আমার পিতা হিরন মিয়া চৌধুরী ও তার তৃতীয় স্ত্রী মারজানা বেগমকে অভিযুক্ত করে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় আদালতে যাতে হাজির হতে না পারি সেজন্যই গত ১০ জুন সোমবার রাতে ১০টার দিকে ছাতক থানা থেকে সিলেট শহরে ফেরার পথে পেপার মিল সংলগ্ন সড়কে বাবা হিরণ চৌধুরী তার সহযোগিদের নিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। এসময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমায় কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে যান। সেখান থেকে আমার স্বজনরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী এমরান বলেন, তিনি বর্তমানে প্রাণের ভয়ে স্ত্রী-সন্তান এবং মাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়া। তাছাড়া তার বাবা কর্তৃক ক্ষতির আশঙ্কায়ও আছেন। যে কারণে তিনি প্রাণের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।