শিল্পীর তুলিতে: করোনা পরবর্তী গণপরিবহন ব্যবস্থা
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ৩:৪৬ অপরাহ্ণঅভিজিৎ চৌধুরী ::
লকডাউনে নেই রিকশার ঠুং ঠুং আওয়াজ ও উবার আর পাঠাও-এর দাপাদাপি নেই, তালাবন্ধ গোটাসমাজ, রেললাইনে ট্রেনের আওয়াজ নেই, গোলাকাটা রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা- উবার আর পাঠাও-এর দাপাদাপি নেই, নেই বাসের হুটোপুটি, নেই রিকশার ঠুং ঠুং আওয়াজ । নিঃশব্দের প্রহর গুনে চলেছেন মানুষ লকডাউনের আবহে। লকডাউনের পর মুখোশ পরে জীবনের আর কত দিন কাটাতে হবে? লকডাউন খোলার পর অনেক বদলে যাবে মানুষের গণপরিবহণ ব্যবহারের ধরন-ধারণ। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা এখনই প্রয়োজন। প্রথম প্রয়োজন গণপরিবহণের বিকল্প পরিকল্পনা। এই অবস্থায় ঢাকা শহরে লকডাউনের পর গণপরিবহণ ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে বহু ধরনের সংশয় রয়েছে। সংশয় এই কারণেই যে, মহামারির কারণে দৈহিক দূরত্বের যে বিধি বহুল প্রচারিত হয়ে মানুষের মগজে ঢুকে গিয়েছে, তাতে বাদুড়ঝোলা হয়ে ট্রেনে-বাসে, ঘেমে নেয়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রাতারাতি লকডাউনের পর মানুষ যাবে, সেটা ভাবা যথেষ্ট কঠিন। সঙ্গত কারণেই সচেতন মানুষের এই সংক্রমণ ভীতি গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে।
প্রথমে ধরা যাক, এই শহরের গণপরিবহণে রিকশার সংখ্যা বাড়িয়ে সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। শহরের গণপরিবহণে তৃতীয় বৃহত্তম ক্ষেত্র হচ্ছে অটোরিকশা বা সিএনজি। সেটিতেও তিনের বদলে যদি সংক্রমণ রোধের কারণে যাত্রী সংখ্যা দুই হিসেবে ধার্য হয়, কিন্তু ঢাকা শহরের বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে, দৈহিক দূরত্ব বজায়ের আশঙ্কায়, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তলিয়ে যাওয়া ডিজেলের দামের সাথে সঙ্গতি রেখে সরকার জ্বালানির খরচে ভরতুকির সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তে লাভ দু’দিক থেকেই। এক দিকে যেমন সংক্রমণ মুক্তির লক্ষ্যে খানিক কম যাত্রী নিয়ে চলতে পারে, অন্য দিকে, তাদের কাক্সিক্ষত আয় নিশ্চিত করার প্রয়োজনে প্রতিদিন বাড়তি ট্রিপ চালু রাখতে পারে কম জ্বালানি খরচকে পুঁজি করেই।
প্রতিটি শহরেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণেই তার রাস্তায় যান চাহিদার পরিবর্তন ঘটে বিভিন্ন সময়ে। সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যার অফিস টাইম বলতে লোকে যা বোঝে, এই দু’টি পর্যায়ে যাত্রীদের সংখ্যা ও যানবাহনের চাহিদা দিনের বাকি সময়ের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। ফলে ওই দু’টি সময়ে গণপরিবহণে যাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ভাবা যেতে পারে শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অফিস, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দশটা পাঁচটার দৈনিক কাজের সময়সূচির পরিবর্তন।
যে সমস্ত ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ রয়েছে সেখানে অতি অবশ্যই অন্তত আগামী ছয় মাস সেই সুযোগের ব্যবহার করা উচিত রাজপথে যাত্রী সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যেই।
সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে রেহাই পেতে মোটর সাইকেল অথবা বাইসাইকেলের ব্যবহার উত্তরোত্তর বাড়াবে বলেই আশা করা যায়।
লকডাউন পরবর্তীকালে মানুষের স্বল্প দূরত্বের পথে হেঁটে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়বে, যেটি এক অর্থে মানুষের সুস্বাস্থ্যের সহায়ক হবে। এখন প্রয়োজন মানুষের বাঁচার তাগিদে ব্যতিক্রমী সময়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
লেখক : শিল্প নির্দেশক, দৈনিক ইত্তেফাক।