জয় হোক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২০, ৭:৪২ অপরাহ্ণরেদোয়ানুল হক::
জন্ম হয়েছিল ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামের রাউজানে এক রাজকীয় পরিবারে। ছাত্রাবস্থায় তিনি চড়তেন ব্যক্তিগত গাড়িতে। ছিলো পাইলটের লাইসেন্স। লন্ডনে পড়ার সময় রাজকীয় দর্জি বাসায় এসে তার স্যুটের মাপ নিয়ে যেত! এজন্য পরিশোধ করতে হতো অতিরিক্ত ২০ পাউন্ড। অথচ স্বাধীনতার পরে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তিনি বেছে নেন অতি সাধারণ জীবন। দেশ বিদেশে তার কোনো ফ্লাট নেই। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ি দান করে দিয়েছেন ছোট বোনকে।মরণোত্তর দেহ দান করেছেন। ফলে প্রয়োজন হবে না কোন দাফনের কাপড় কিংবা কবরের জমি। তাঁর সম্পর্কে জাহানারা ইমাম তার একাত্তরের দিনগুলি বইয়ের ১৬১-১৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেনÑজাফরুলাহ তখন লন্ডনে এফআরসিএস পড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। চার বছরের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে যখন পরীক্ষার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, তখন জানতে পারলেন পাকিস্তানি বাহিনীর ২৫ মার্চের নির্মম হত্যাকান্ডের কথা। পরীক্ষা বাদ দিয়ে ভারতে এলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে তৈরি করলেন হাসপাতাল। যা আজকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামে পরিচিত।
পাকিস্তানি নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইড পার্কে নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। হয়েছিলেন রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক। তারপর ইংল্যান্ড থেকে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের প্রত্যয়ন নিয়ে নেন। ভারতের ট্রাভেল পারমিট নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এযেন রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন ।
১৯৭৫ সালের আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে লন্ডনে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি তার নিজের রক্ত দিয়ে জাতির ঋণ পরিশোধ করলেন।
একাত্তর সালের যুদ্ধটা ছিল দৃশ্যমান অপশক্তির বিরুদ্ধে। অপশক্তির পরাজয় হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু স্বপ্নের সমাজতন্ত্র অর্জিত হয়নি। দেশে সমাজতন্ত্রীদের মত ও পথের ভিন্নতা ছিল। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সমাজতান্ত্রিক চেতনার যে বিকাশ ঘটেছিল তা পরবর্তীকালে সময়ের সাথে পালা দিয়ে ম্রিয়মাণ হয়েছে। সমাজতন্ত্রের অনুসারীরা অনেকেই হতাশ হয়েছেন। সমাজ তন্ত্রের পথ ত্যাগ করেছেন। সুবিধাপ্রাপ্তির রাজনীতির স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। তিনিও গা ভাসিয়েছেন। শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের মূল নেতৃত্বে আছেন। ক্ষমতার সাধও পেয়েছেন। লড়াই করে রাজনৈতিক যুদ্ধে টিকে আছেন। এবার সম্পূর্ণ নতুন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।যুদ্ধ বললে কম বলা হবে। বিশ্বযুদ্ধে নেমেছেন। পৃথিবী বনাম অদৃশ্য অপশক্তি মহাপরাক্রমশালী করোনা ভাইরাস। তিনি পৃথিবীর পক্ষে। তিনি শুধু যোদ্ধাই নন তিনি শত্রু চিহ্নিতকারী ও নির্মূলকারী মহাসমর নায়ক। তিনি শত্রু শনাক্তকরণের কিট তৈরি করেছেন। হয়তো এই কারণেই শত্রুর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে আছেন। অনেক যুদ্ধে বিজয়ী এই নায়ক তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর অদম্য সাহস দিয়ে করোনা ভাইরাসকে পরাভূত করবেন বলে আশা করি। সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আবারও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরবেন। জয় হোক এই মহান দেশপ্রেমিক করোনা যোদ্ধার। জয় হোক আমাদের সকলের প্রিয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডাক্তার জাফর উলাহ চৌধুরীর।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মাতুয়াইল হাজি আব্দুল লতিফ ভ‚ইয়া কলেজ, ঢাকা।