অক্সিজেন ঘাটতির মুখে পুরো বিশ্ব
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২০, ২:৪৮ অপরাহ্ণআন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছুঁই ছুঁই। এই মহামারী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে শক্তিশালী দেশগুলোও। এরই মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতির কথা জানিয়ে বিশ্বকে সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই এখন অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর সংকটে ভুগছে।
কারণ সরবরাহের চেয়ে এর চাহিদা অনেক বেশি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ভারতে ঝড়ের বেগে বাড়ছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিল ও ভারতে রেকর্ডসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণহানি পৌনে দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়ার একটি অঙ্গরাজ্যে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয়ায় সেখানে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আরো জানান, নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০ লাখ নতুন রোগী যোগ হচ্ছে তালিকায়। ইতোমধ্যে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন চার লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ। এই দুর্যোগের মুখে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে অক্সিজেনের ৮৮ হাজার বড় সিলিন্ডার কিংবা ছয় লাখ ২০ হাজার ক্লাব মিটারের সিলিন্ডারের চাহিদা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ১৪ হাজার কনসেন্ট্রেটর কিনেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে তা ১২০টি দেশে পাঠানো হবে। এছাড়া ১০ কোটি ডলারের আরও এক লাখ ৭০ হাজার কনসেন্ট্রেটর আগামী ছয় মাসে সরবরাহ করা হবে বলে জানান তেদ্রোস। এদিকে সৌদি আরবে এবার বিদেশিদের জন্য হজ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তেদ্রোস বলেন, এ পদক্ষেপের ফলে করোনার সংক্রমণ কমবে।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮২ জন। মারা গেছেন চার লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৮ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৫৮ হাজার ২৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৫২ লাখ আট হাজার ২১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩৮৩, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৭১ জনের।
বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৮০৮ জনের। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৩৮৬ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪১ জন, মারা গেছেন এক লাখ ২৪ হাজার ৩০৮ জন।
বিশ্ব তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় ৪১ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে এদিন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ১০৩ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৬০৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৯৫ জনের। তৃতীয় স্থানে রাশিয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ১৩ হাজার ৯৯৪ জন, মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৬০৫ জনের।
চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতে প্রতিদিনই সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৬ হাজার ৮৭০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ৭২ হাজার ৯৮৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৯০৭ জনের। তবে দেশটিতে সুস্থতার হার বেশ ভালো। এ পর্যন্ত দুই লাখ ৭১ হাজার রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
পঞ্চম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত তিন লাখ ছয় হাজার ৮৬২ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৩ হাজার ৮১ জনের। এরপর স্পেনে মোট আক্রান্ত দুই লাখ ৯৪ হাজার ১৬৬ জন, মারা গেছেন ২৮ হাজার ৩২৭ জন।
অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু পৌনে দুই লাখ ছাড়াবে : মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও বর্তমানে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস।
করোনার বিস্তার রোধে ইতোমধ্যেই দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি অঙ্গরাজ্য অন্য এলাকা থেকে আগতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করেছে। তার পরও আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণহানি দাঁড়াতে পারে এক লাখ ৮০ হাজারে।
বুধবার এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা। ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণহানি আরও ৩৩ হাজার কম হতে পারে, যদি দেশটির ৯৫ শতাংশ মানুষ বাইরে মাস্ক ব্যবহার করেন।
একই সময়ের মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিন লাখ ৮৮ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যুই বাজিল ও মেক্সিকোতে হতে পারে।
আইএইচএমই’র পরিচালক ক্রিস্টোফার মুরে এক বিবৃতিতে বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্র আগস্টের শেষভাগে ব্যাপক সংক্রমণের দিকে যাচ্ছে, যা সেপ্টেম্বরে আরও তীব্র হবে। এ পূর্বাভাসের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও কানেক্টিকাটের গভর্নররা ঘোষণা দেন, এখন থেকে দেশটির নয়টি অঙ্গরাজ্য থেকে কেউ গেলে তাদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। অঙ্গরাজ্যগুলো হল- আলাবামা, আরাকানসাস, অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস, ওয়াশিংটন ও উটাহ।
গবেষকরা বলছেন, আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা ও পেরু এই দেশগুলোর প্রত্যেকটিতে ১০ হাজারের বেশি মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও বেলিজসহ ১৫টি দেশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজারের নিচে থাকতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত : অস্ট্রেলিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর ও ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী মেলবোর্নে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই অঙ্গরাজ্যেই ৩৩ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেনল্ডস বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে সেনা মোতায়েন করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যটকরা দেশে ঢুকে ঠিকমতো হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাড়ে আটশ’ সদস্য।
আরও ২০০ সদস্য লজিস্টিক্যাল ও মেডিকেল কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি। দেশটিতে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১০৪ জনের।