পশ্চিম বাংলায় নির্বাচন : নিজের মেয়ে মমতাতেই ভরসা
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২১, ৮:৩৫ অপরাহ্ণদীপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে :: কার্যত ভাঙা পা নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলকে একক ক্ষমতায় পশ্চিমবাংলায় নাস্তানাবুদ করে দিলেন বাংলার মেয়ে তথা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরাও এ রাজ্যে প্রচারে এসেছিল। এসে তারা প্রথম থেকেই জয় শ্রীরাম ধ্বনির মাধ্যমে বাংলার মানুষের কাছে উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়টি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি সহ অন্যান্য বিষয়গুলি নিয়ে বাংলার মানুষকে বোঝাতে থাকেন। এমনকি ৮ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা মাধ্যমে ভোট করায়। যদিও তাতে দেখা যায় অশান্তির কারণে উত্তরবঙ্গের শীতলকুচি তে ৫ জন নিহত হন।
নির্বাচনের প্রথম চার দফা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঘোষণা করতে থাকেন তারা ২০০বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসছে।
তারমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের একসময়ের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুকুল রায়,শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব ব্যানার্জি সহ অনেকে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় মনে করা হচ্ছিল যে রাজ্যে ভালো ফল করতে পারে বিজেপি।
তার মধ্যেই প্রশান্ত কিশোরের পেশাদারী সংস্থাকে দিয়ে ভোটের গুটি সাজানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কার্যত চ্যালেঞ্জ নিয়ে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর এর বিপক্ষে দাঁড়ান মমতা।
সব মিলিয়ে এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২৯২ টি আসনে ভোট হয়। দু’টি কেন্দ্রের দুই প্রার্থী কোভিডে মারা যাওয়ায় নির্বাচন স্থগিত থাকে ওই দুই কেন্দ্রে।
এদিন সকালে ভোট বাক্স খোলার পর থেকেই দেখা যায় কার্যত সারা বাংলা জুড়ে সবুজ ঝড়। ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নে আস্থা রেখেছে মানুষ। সর্বশেষ পাওয়া খবর ২১৪ টি আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছে ৭৬ টি আসন। সিপিএম ও কংগ্রেস একটি আসান পায়নি।
কলকাতা শহরে ১১ টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে তৃণমূল। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৫০ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছে বিজেপির নায়িকা প্রার্থী শ্রাবন্তীকে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ কে হারিয়ে দিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে। আরেক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বিজেপির গায়ক প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় কে পরাস্ত করেছে সুবিশাল ব্যবধানে।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া দলনেতাদের বেশিভাগই পরাস্ত হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৫পরগনা, মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি মালদা, মুর্শিদাবাদ সব জায়গায় বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গে কেবলমাত্র কিছুটা ভালো ফল করেছে বিজেপি। যদিও নন্দীগ্রামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শুভেন্দু অধিকারীর কাছে মাত্র হাজারখানেক ভোটে পরাস্ত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সব মিলিয়ে সারা বাংলা জুড়ে যেভাবে সাধারণ মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে তাতে মূল্যবৃদ্ধি সহ বিজেপি নেতাদের দাম্ভিকতার বিষয়গুলি উঠে আসছে। আরে দিনের জয়ের পরে একটা বিষয় স্পষ্ট সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির বিরোধী মুখ হিসাবে নিঃসন্দেহে উঠে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে বিপুল জয়ের পরেই করোনা টিকা (Corona Vaccine) নিয়ে নাম না করে কেন্দ্রেকে তোপ দাগলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি আন্দোলনের হুমকি দিলেন তিনি । জানিয়ে দিলেন বিনামূল্যে রাজ্যকে টিকা না দিলে আন্দোলনে বসবেন।
ভোট প্রচারের মাঝেই খবর আসে কেন্দ্র, রাজ্য এবং বেসরকারি হাসপাতালকে আলাদা আলাদা দামে করোনার টিকা বিক্রি করা হবে। টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক এমনই জানিয়েছিল। যা নিয়ে তোপ দাগেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন দেশের সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দিতে হবে।
মমতা ভোট প্রচারে প্রতিশ্রুতি দেন রাজ্যের সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেবেন। রবিবার বিপুল জয়ের পর জানিয়ে দিলেন, তিনি তাঁর সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন। তবে কেন্দ্রের কাছে বিনামূল্যে টিকার দাবিও করেন তিনি। যদি তা না দেওয়া হয় আন্দোলন শুরু করবেন বলেও জানিয়ে দেন।
তবে তৃণমূলের এই বিপুল জয়ের পরেও করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনও বিজয় মিছিল না করার অনুরোধ করেন তৃণমূল কর্মীদের। করোনা পরিস্থিতি কাটলে ব্রিগেডে বড় করে বিজয় সভা করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।