ঠাঁই মিলল রেল স্টেশনে ফেলে দেওয়া সেই বৃদ্ধার
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ৫:৫৮ অপরাহ্ণসিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশে স্বজনদের ফেলে যাওয়া সেই বৃদ্ধাকে চিকিৎসা শেষে বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের কল্যানপুরে ‘চাইল্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধারকারী যুবক মামুন বিশ্বাস অভিভাবক হয়ে নিজেই তাকে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।
মামুন বিশ্বাসসহ কয়েকজন যুবক উদ্যোমী হয়ে বৃদ্ধাকে বাজার রেল স্টেশনের পাশ থেকে উদ্ধার করে ১০ দিন আগে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তারা মানবিক সাহায্য তুলে বৃদ্ধাকে চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেন। এমনকি, দৈনিক মজুরিতে একজন খন্ডকালীন আয়া হাসপাতালে নিযুক্ত করে বৃদ্ধার দেখভালের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রায় ১ মাস আগে ষাটোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধাকে সিরাজগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশে ফেলে রেখে যান স্বজনরা। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ওই বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তির আগে এতটাই দুর্বল ছিলেন যে ঠিকমত কথা বলা তো দূরের কথা, ইশারাতেও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারতেন না। মঙ্গলবার দুপুরে বিদায় বেলায় উদ্ধারকারী যুবকদের জড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে তাকে। বৃদ্ধার আবেগময় অনুভূতি দেখে ওই যুবকরাও কেঁদেছেন।
মামুন বিশ্বাস বলেন, যতদূর জেনেছি বৃদ্ধার নাম ‘শ্যামলী’। অতীতে যাত্রাশিল্পী ছিলেন তিনি। ৪০ বছর যাত্রায় অভিনয়ও করেছেন তিনি। আদিবাসী থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ায় স্বজনরা তার কাছে থেকে দূরে সরে গেছেন। বগুড়ার দুপচাচিয়ার বাসিন্দা তিনি। একমাত্র ছেলে কালু যাত্রাদলের বাদক। হাসি ও খুশি নামে দু’টি মেয়েও রয়েছে তার। সিরাজগঞ্জ সদরের বিয়ারঘাট এলাকার আদিবাসী পল্লীতে তার বেশ ক’জন আত্বীয়ও আছেন। ধর্মান্তরিত হওয়ায় যোগাযোগও নেই তাদের কারোর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ওই বৃদ্ধার দুইবার বিয়ে হযেছিল। প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই দীর্ঘদিন থেকেই। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। ২ বছর আগে সেই স্বামী মারা গেছেন। এরপর প্রথম পক্ষের সন্তানদের কাছে অযত্মে অবহেলায় ছিলেন। অবশেষে তাকে আপদ ভেবে রেল স্টেশনের পাশে ফেলে যান নিজের ছেলে-মেয়েরা। যথাসাধ্য চিকিৎসা শেষে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে পেরেছি, এটুকুই শান্তি আমাদের।