এরশাদের পদে কতটা ফিট জিএম কাদের?
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০১৯, ২:০৯ অপরাহ্ণনিউজ সর্বশেষ২৪রিপোর্ট: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেনাপ্রধান থেকে সামরিক শাসক। পরে রাষ্ট্রপতি। বর্তমানে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। এরশাদের ছোট ভাই। একাদশ সংসদের নির্বাচিত এমপি। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথ সরকারে পৃথকভাবে দুটি মন্ত্রণালয়ও সামলেছেন। সম্প্রতি বড় ভাই তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছেন।
আপন দুই ভাই হলেও তারা সম্পূর্ণ বিপরীত। একজন যতটা ক্ষীপ্র, আরেকজন ততটাই ধীরস্থির। একজনের নামের সঙ্গে আষ্টেপিষ্টে আছে দুর্নীতি, নারীসহ নানা কলঙ্ক। অন্যজন ঠিক ব্যক্তিজীবনে ততটাই স্বচ্ছ, নির্মোহ। রাজনৈতিক জীবনে সৎ।
একজনকে বলা হয় স্বৈরাচার, দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে সেটির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বহুবার, তকমা পেয়েছেন আনপ্রেডিক্টেবলের। অন্যজন আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বাসী। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় সবার আস্থাভাজন। দলে বাকিদের থেকে ব্যতিক্রম।
নানা নাটকীয়তা শেষে নতুন দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে এরশাদ ভাই জিএম কাদেরকেই তার উত্তরসূরি নির্বাচন করতে চলেছেন। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় পার্টিতে এরশাদের স্থানে জিএম কাদের ঠিক কতটা মানানসই?
অবশ্য দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই জিএম কাদের বলেছেন, তিনি জমিদারি বা কর্তৃত্ব করতে আসেননি। সেবা করতে এসেছেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে দল চালাবেন। ত্যাগীদের মূল্যায়ন হবে। কেউ হুট করে এসে লাভবান হতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘৯০-এর পর দুঃসময়ে আমি এ দলে এসেছি। ভাই জেলে ছিলেন। কিছু পাওয়ার লোভে নয়, দুঃসময় মোকাবেলা করতে এসেছিলাম। সেই নীতিতেই অটল থেকেছি।’
দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টি ৯ বছর দেশ শাসন করেছে। এরশাদের পর এ রকম একটি দলকে নেতৃত্ব দিতে জিএম কাদেরই উপযুক্ত। কারণ, এই দলে তিনি অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। জিএম কাদের মেধাবী। আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত মহাজোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে থাকলেও তাকে দুর্নীতি স্পর্শ করেনি। তিনি নেতৃত্বে আসলে জাতীয় পার্টি নিজের রাজনীতিতে স্থিত হবে বলেও তারা মনে করছেন।
জিএম কাদের দলের হাল ধরায় নেতাকর্মীদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। যদিও তারা এখনই চেয়ারম্যানের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না।
এরশাদের একক কর্তৃত্বে জাতীয় পার্টি চলে। যে কারণে জাতীয় পার্টি দিন দিন সক্রিয়তা হারাচ্ছে। জিএম কাদের সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব পালন করতে পারলে দলের চেহারা বদলে যাবে। মাঠের কর্মীরা মূল্যায়ন পাবেন বলেও মনে করছেন নেতারা।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সত্যি বলতে এখনই কোনো মন্তব্য করব না। আমি আপাতত পার্টির কর্মকাণ্ড থেকে দূরে আছি। দেখি চেয়ারম্যান তার সর্বশেষ সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে পারেন কিনা। তবে এটুকু বলতে পারি, জিএম কাদের ভাল করবেন।’
এ বিষয়ে রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘জাতীয় পার্টির জন্মই এক নায়কতন্ত্রের মধ্যে। আওয়ামী লীগের আদর্শবিরোধী এবং বিএনপির আদর্শের সঙ্গে দারুণ মিল দলটির। কিন্তু, দুর্ভাগ্য হলো, জাপা বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের কাছেই আশ্রয় পেয়েছে। ফলে সাংগঠনিক আদর্শের জাগয়াটা তাদের কখনো তৈরি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য এরশাদ একা দায়ী নন। উনার আশেপাশের লোকেরাও অনেকাংশে দায়ী। কারণ, তারা সঠিক পরামর্শ পর্যন্ত এরশাদকে দেননি। ফলে তিনি রাষ্ট্রপরিচালনার মতো দলেও সর্বেসেবা, একনায়ক ছিলেন।’
ড. শেলী আরও বলেন, ‘একটা বড় দল হিসেবে জাতীয় পার্টি থাকুক, এটা আমরা চাই। স্বৈরাচার শুধু জাতীয় পার্টিতে নয়, অন্য বড় দু’দলেও আছে। জিএম কাদেরকে ভাল রাজনীতিক হিসেবেই চিনি-জানি। তিনি কতটা ভাল করবেন, তা সময়ই বলে দেবে।’
২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি রংপুরে জাতীয় পার্টির কর্মী সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করেন। পরে স্ত্রী রওশনের পক্ষ থেকে আপত্তি এলে, তাকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করেন।
এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে বেছে নেন এরশাদ। একইসঙ্গে অসুস্থ হয়ে জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন।
কিন্তু, গত ২২ মার্চ হঠাৎ করেই পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে জিএম কাদেরকে সরিয়ে দেন এরশাদ। তারপর আবার তিনি মত পাল্টে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করলেন। এখন দেখার এরশাদ শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন কিনা।