সিলেট জেলা প্রশাসনের ইফতার মাহফিলে মেয়র উপেক্ষিত, নাগরিক সমাজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০১৯, ১১:১৭ অপরাহ্ণনিউজ সর্বশেষ২৪রিপোর্ট: পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সিলেটের বিশিষ্টজনদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের ইফতার মাহফিলের আয়োজন ছিল শুক্রবার। সিলেট সার্কিট হাউসে এই ইফতার মাহফিলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ সিলেটের সব সরকারি অফিস-আদালত ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের নেতারা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না শুধু সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিষয়টি ইফতার মাহফিলে আসা বিশিষ্টজনদের নজরে আসলে অনেকে মুঠোফোনে মেয়রের সাথে যোগাযোগ করেন। জেলা প্রশাসনের ইফতার মাহফিলে কেন অনুপস্থিত জানতে চান তারা। এসময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। সিলেটে সিভিল প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন বড় পরিসরে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে নগর পিতা আরিফুল হক চৌধুরীকে আমন্ত্রণ না জানানোয় দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
তবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হচ্ছেন সিলেট নগরবাসীর অভিভাবক। তিনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। তাকে জেলা প্রশাসনের ইফতার মাহফিলে দাওয়াত না দিয়ে নগরবাসীকে অপমান করা হয়েছে। এরকম কাজ কোনভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, দলমত নির্বিশেষে সিলেটের সকল নাগরিকের অভিভাবক হলেন মেয়র। তাকে দাওয়াত না দেয়া অপমানের।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুধু আমাদের মেয়র নয়, তিনি আমাদের অভিভাবকও। তাকে দাওয়াত না করা অপমানের’। তিনি বলেন, “প্রশাসনের বুঝা উচিত, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়র বহু উপরে অবস্থান করেন। সরকার যদি মেয়রদেরকে প্রতিমন্ত্রীর যে মর্যাদা দিয়েছিল তা যদি বহাল রাখতো, তাহলে তিনি প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদার সম্মান পেতেন। এছাড়া তিনি দলীয় বিবেচনায় কোন বিতর্কিত কাজ করছেন বলে আমাদের মনে হয় না। সেজন্য ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখার আহবান জানান তিনি”।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ লালা বলেন, “জেলা প্রশাসনের ইফতার মাহফিলে মেয়রকে দাওয়াত দেয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, মেয়র হলেন নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের পাঁচ লাখ মানুষের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি। তাকে দাওয়াত না দেয়া মানে নগরীর পাঁচ লাখ মানুষকে অপমান করা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এধরণের মানশিকতা পরিহারের আহবান জানান”।
সিলেট স্টেশন ক্লাবের সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, “নগরীর একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি হলেন মেয়র। মেয়রের এই পদ একসময় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপূর্ণ ছিল। সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হলেও তাকে দাওয়াত দেয়া উচিত ছিল। তাকে দাওয়াত করলে অনুষ্ঠানের মর্যাদা কোন ক্রমেই কমতো না বরং বাড়তো”।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সন্দীপ কুমার সিংহ বলেন, ইফতার মাহফিলে কাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে বিষয়টি তার জানা নেই।
একই জবাব, জেলা প্রশাসনের (আর ডিসি) উম্মে সালিক রুমাইয়ারও তিনি বলেন, দাওয়াতের বিষয়টি আমার দায়িত্বে ছিল না। আপনারা এনডিসি বা এডিএম শাখায় যোগাযোগ করে দেখেন।
পরে সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নাসির উল্লাহ খান ও সিলেট জেলা প্রশাসকের এনডিসি মুহাম্মদ এরশাদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলেও এটা তাদের দায়িত্ব নয় বলে জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের ঐ ইফতার মাহফিলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন, বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানসহ সিলেটের সব সরকারি অফিস-আদালত ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।