করোনায় খাদ্যসংকট মোকাবেলায় পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি

পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২০, ২:৫৬ অপরাহ্ণজাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়বে। উৎপাদন ঘাটতি, বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের আগ্রাসী আক্রমণের কারণে বিশ্ব মারাত্মক খাদ্য সমস্যার সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশ ও এই সমস্যা থেকে রেহাই পাবে না।
করোনায় খাদ্য সংকটের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। করোনার সংকটে সার্ভিস খাতসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের সবাই কর্মহীন হয়ে পড়ছে। রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, ভাসমান শ্রমিক ও উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীসহ কয়েক কোটি কর্মহীন মানুষ এখনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে। এই বিপুল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও নগদ সহায়তা এবং কাজে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। এদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে সমাজ-রাষ্ট্র ভয়ংকর ঝুঁকিতে পড়বে।এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সবার আগে প্রয়োজন মাঠের ধান নিরাপদে ঘরে তোলা। ধান কাটা শ্রমিকের সংকট রয়েছে। তাছাড়া ধান কাটা শ্রমিকের যে-মজুরি, তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে যথেষ্ট শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার অবশ্য এর সমাধানের জন্য যথাযথ সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে। বাস্তবে তা সর্বত্র কার্যকরভাবে পালিত হচ্ছে না। এর উপর জোরালো মনিটর রাখতে হবে। কারণ হঠাৎ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি বা বন্যার কারণে মাঠের ধান বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। এদিকে আবার ধেয়ে আসা পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং স্বল্পসময়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আ: রাজ্জাক বলেছেন খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার কৃষকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। সুনামগঞ্জ সাংহাই হাওরের ধান কাটা পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন আমাদের ধান উদ্বৃত্ত আছে। তার উপর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে কোনো অনিয়ম হলে সহ্য করা হবে না। ইতোমধ্যে কৃষকের সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা কৃষি প্রণোদনা ঘোষনা করেছে। আমরা মনে করি এই ব্যবস্থাগুলো যেন প্রকৃত কৃষকরা ভোগ করতে পারে।
করোনা খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ঢাকা ও দিলি একযোগে কাজ করার ঘোষণা এসেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টেলিফোনে আলাপচারিতায় এই ঘোষণা দেয়া হয়।
করোনা ভাইরাস মহামারির প্রকোপে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এর ফলে অনেক দেশে ভোক্তারা খাদ্যপণ্যের সরবরাহ সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
মহামারির মধ্যে জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহের তাগিদে খাদ্যপণ্য রফতানি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে বিভিন্ন দেশ। একই পথে হাঁটছে এশিয়ার শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশগুলোও। এর ফলে এ অঞ্চল থেকে খাদ্যপণ্যের রফতানি হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন খাদ্যসংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে অনেক দেশ চরম খাদ্য সংকটে পড়বে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
করোনা মহামারির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে স¤প্রতি ভিয়েতনাম চালের নতুন রফতানি বিক্রয় চুক্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। শীর্ষ চাল রফতানিকারী দেশগুলোর তালিকায় ভিয়েতনামের অবস্থান তৃতীয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মধ্য মে পর্যন্ত চালের রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভিয়েতনাম ছাড়াও চালের রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ কম্বোডিয়া। একই আভাস দিয়েছে মিয়ানমার।
এশিয়া অঞ্চলের চালের বাজার বিশ্লেষক ডেভিড ডাউই বলেন, এশিয়ার দেশগুলো খুব একটা সতর্ক না হয়েই চালের রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তারা কেবল নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে। এতে অন্যান্য দেশের সংকট আরো ঘণীভূত হবে।
অন্যদিকে অনেক দেশ আবার মনোনিবেশ করেছে বাড়তি আমদানির দিকে। ফিলিপাইন এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় দেশটি চালের আমদানি বাড়াচ্ছে। করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে বাজারে খাদ্যপণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এ বছর চীন রেকর্ড পরিমাণ চাল কিনতে পারে বলে মনে করছেন খাদ্যসংশ্লিষ্টরা। বিশ্বজুড়ে চালের রফতানি চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এক গবেষণায় প্রকাশ করোনা পরিস্থিতি আর এক মাস দীর্ঘায়িত হলে নতুন করে আরও দেড় কোটি মানুষ বেকার হবে। পূর্বের প্রচ্ছন্ন বেকার তো রয়েছেই। পারিবারিক পর্যায়ে প্রায় ৫ কোটি লোকের উপর এর প্রভাব পড়বে। তারপর চলতি বোরো ফসল যদি সঠিকভাবে তোলা না যায়, তবে এই সংকট আরো ঘনীভূত হবে। তাই সর্বাগ্রে বোরো ফসল কেটে ঘরে তুলতে হবে এবং ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট মোকাবেলায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।