স্বীকৃতি পেলেও এখনো মৌলিক অধিকার বঞ্চিত
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:৪৩ অপরাহ্ণ::::সুবর্ণা হামিদ ::: হিজড়াদের একসময় কোন স্বীকৃতি ছিলো না, সমাজের একটি বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবেই বেড়ে ওঠতে হয়েছে তাদের। তবে এখন সরকারি স্বীকৃতি আছে, কিন্তু অধিকার নেই। কাগজে-কলমের স্বীকৃতি নিয়েই দিন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। তাইতো আক্ষেপের সুরে কল্পনা নামের এক হিজড়া বলছিলেন তার মনোকষ্টের কথা। বাড়ি সুনামগঞ্জে হলেও দীর্ঘ দিন থেকে সিলেটে আছেন হিজড়া কমিউনিটির সাথে। বিত্তশালী পরিবার ছেড়ে এসে এখন দু:খ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা হিজড়া হলেও তো মানুষ। অন্য সবার মতো আমাদের ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে৷ সবাই যেভাবে চলাফেরা ও কাজকর্ম করে আমরাও তা করতে চাই। কিন্তু ইচ্চা থাকলেও সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধকতার কারণে তা আমরা পারছি না। আমাদের দু:খগুলো কেউ শুনতে চায় না।
পৃথিবীতে আপন বলে কেউ নেই উল্লেখ করে কল্পনা’র সহপাঠি ডলি হিজড়া বলেন, যে মা-বাবা আমাদেরকে জন্ম দিল সেই তারাই এক সময় পর হয়ে যায়৷ সমাজ ব্যবস্থার কারণে আপন সন্তানকেও তারা ভুল বুঝে পরিবার থেকে বের করে দেয়। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, কেউ আমাদের ভালো চোখে দেখে না৷ ফলে দিনের পর দিন অবহেলা আর বঞ্চনাই আমাদের নিত্য সঙ্গী। কিন্ত আমরাও চাই, মানুষের মতো সম্মান ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে ৷ কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, হিজড়াদের এতদিন সম্পত্তির কোনো অধিকার ছিল না৷ এখন তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সম্পত্তির ভাগ চান তারা৷ তাঁর মতে, শুধু কাগজে স্বীকৃতি দিলেই হবে না, রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার৷ আর সে কাজ চাইলে রাষ্ট্রই করতে পারে৷
হিজড়ারা বলেন, আমরা সমাজে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই, মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার চাই৷ কিন্তু মানুষ হিসেবে অধিকার প্রাপ্তিতে প্রতি পদে-পদে বাধা। নিজের ঘরে ঠাই মিলে না, মিলে না বাসা বাড়া। তাহলে আমরা যাবো কই। মাথাগোজার একটু জায়গা পেতে আমাদের তো রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেই চাকরির সুযোগ নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, করুণা নয়; দক্ষতার ভিত্তিতে সুযোগ দিলে আমরাও সবার সাথে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারব৷ মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার চান সিলেটের হিজড়ারা৷ ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে সরকার স্বীকৃতি দিলেও সমাজ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি এটাই আক্ষেপ তাদের। সেই আক্ষেপের অবসান যান বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী।
হিজড়াদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো তাদের সরকারি স্বীকৃতি। অব্যাহত দাবিতে প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গেজেটে বলা হয়, ‘সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ (Hijra) হিসাবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি প্রদান করে। তবে স্বীকৃতি আদায়ের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও বাস্তবে এর সুফল পাচ্ছে না হিজড়া জনগোষ্ঠী। স্বীকৃতি প্রদান করা হলেও এখনো তাদের কোনও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। সরকারের স্বীকৃতির পর সরকারের সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব বিধির পরিবর্তন না আনায় হিজড়া জনগোষ্ঠী আলাদা লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তারা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন নেসা শাপলা বলেন, বাংলাদেশে হিজড়ারা সরকারি স্বীকৃতি পেলেও সামাজিক ট্যাবু বা স্টিগমার কারণে সামাজিক মনোভাব এখনো হিজড়াদের অনুক’লে নয় বলেই তাদের সামাজিক মর্যাদাসহ তেমন কোন সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারণ আমার মতে, রাষ্ট্রের রক্ষণশীল ও নেতিবাচক মনোভাবসহ, এই সম্মানিত মানুষদের সম্বন্ধে শিক্ষা, সচেতনতা ও মানসিকতার বদল না ঘটালে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
যে কোন হিজড়া প্রথম যে বৈষম্যের শিকার সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো employment, housing, health care, ইত্যাদি এবং তারা এই সমাজে এরা ভয়াবহভাবে victim. তারা প্রতিনিয়ত verbal harassment, physical abuse এর শিকার তো হনই পাশাপাশি এদের থাকে high levels of poor mental health. এদের মধ্যে দেখা যায় ডিপ্রেশন, এঙজাইটি, এংগার এবং নানা ধরণের ট্রমা পাশাপাশি নানা ধরণের বঞ্চনার কারণে এরা জড়িয়ে পড়ে নানা ধরণের অপরাধে। এইসব অপরাধ কমানো সম্ভব তাদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে।