সুরমা পারের আতংক গোলাপগঞ্জের আহাদ
পূবের হাওয়া ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২১, ১:২১ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ::::
গোলাপগঞ্জের সুরমা নদীর দুই পারের আতংকের নাম আবদুল আহাদ ওরফে নুর মিয়া। সুরমা নদীর পার অবৈধভাবে দখল করে ক্রাশার মেশিন চালানো, পাথর স্টক, বালু স্টক তার নিয়ন্ত্রণে। সুরমা নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ফসলি জমির মাটি কাটা, পরিবেশের ক্ষতি করে পাহাড়-টিলার মাটি কাটা তার ইশারায় চলে। এসব অবৈধ কাজের জন্য তার রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে মাটিকাটা ও পারের দখল নিয়ে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা তার অবৈধ আয়। এমনকি সুরমা নদী থেকে জেলেরা মাছ ধরতে হলেও লাগে আহাদের বিশেষ পাসকার্ড। গত কয়েক বছরে সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পার ভেঙে শত শত পরিবার হয়েছে ভূমিহীন। অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে এলাকায় হয়েছে একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নদী তীরবর্তী লোকজন আহাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন।
২০১৭ সালোর ১১ অক্টোবর গোলাপগঞ্জে সুরমা নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সদর ইউনিয়নে আহাদের অবৈধ বালু খেকো ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। ওইদিন উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনতার উদ্যোগে চৌঘরী সংলগ্ন সীমানা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখেন। সকাল ১১ টা থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধ প্রায় ২ ঘন্টা অব্যাহত থাকে। তৎকালীন জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও আমির মকবুল আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে জামাতের ডাকা হরতালে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডে কোন প্রভাব না পড়লেও অবরোধের কারণে অচল হয়ে পড়ে পূর্ব সিলেটের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। এতে রাস্তায় শত শত বাহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাজার হাজার যাত্রীদের।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা ও গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মধ্যভাগ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী থেকে বেপোরোয়া ভাবে বালু উত্তোলন করছে আহাদের মদদপুষ্ট একটি চক্র। তখন পেশী শক্তির জোরে সুবিধাভোগীরা প্রতিদিন প্রায় ৮/১০টি ড্রেজারদিয়ে কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু তুলে নেয় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের ভিটে বাড়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার।
সুরমা নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিগত দিনে একাধিক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আজ পথে পথে ঘুরছে। অতীতে যারাই বালু উত্তোলন বন্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তাদের মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হয়েছে। একই স্থানে ২০১৯ সালে আহাদের নেতৃত্বে বালু, পাথর স্টক করে ক্রাশার মেশিন দ্বারা পাথর ভাঙ্গা করা হচ্ছিল। গোলাপগঞ্জের চৌঘরী নামক এ স্থানে বাজার, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্টান ১টি মাদ্রাসা ও ১টি কবরস্থান রয়েছে। ক্রাশার মেশিনের শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিঘœ ঘটলেও আহাদ বাহিনীর গায়ের জোরে কেউ বাঁধা দিতে পারেনি। পরবর্তীতে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক ইশরাত জাহানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ক্রাশার মেশিনসহ পাথর জব্দ করা হয়। যা নিলামে ৮০ লক্ষ টাকা বিক্রি করা হয়। অভিযানের দিন আহাদের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর হামলা হলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।
গোলাপগঞ্জে স্বরস্বতী গ্রামের মকবুল আলী জানান, আহাদ হচ্ছে সুরমা নদীর তীরের মূর্তিমান আতংক। নদীর পার দখল, মাটি কাটা, মাছধরা কিংবা নদী থেকে বালু উত্তোলন সবই আহাদের নেতৃত্বে চলে। কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেনি। মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ করলে তার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী রাতের আধারে চালায় নির্যাতন। নদীতীরের অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে আহাদের ভয়ে।
চৌঘরী গ্রামের জিলু মিয়া বলেন, আহাদের নেতৃত্বে এখানে ক্রাশার মেশিন ধারা পাথর ভাঙ্গার ফলে নদীর পার ধ্বসে পড়েছে। এতে চৌঘরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ ও হাটবাজার ভাঙ্গনের হুমকির সম্মুখিন। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পূর্বগ্রামের অনেক পরিবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
বাঘা এলাকার লাল মিয়া জানান, এলাকার ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলন, পাহাড় টিলা কর্তন চলে আহাদের বিশেষ কারিশমায়। তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে পরিবেশের ক্ষতি করে প্রতি বছর চলে মাটি কাটার উৎসব।